বাড়ি ফিরে আর চিপ্‌স খাওয়া হল না রাজদীপের

হাতে ধরা ছিল চিপসের প্যাকেট। কিন্তু বাড়ির কিছুটা আগেই রাস্তার উপরে ছিটকে পড়ল সেই প্যাকেট। পায়ে থাকা ছোট্ট কমলা-সবুজ রঙের জুতোটাও পড়ে রইল রাস্তার ধারে। আচমকাই ব্রেক কষায় অটো থেকে ছিটকে ম্যাস্টিক অ্যাসফল্টের রাস্তায় আছাড় খেয়ে পড়ে মৃত্যু হল শিশুটির।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৮ ০২:৫৩
Share:

মর্মান্তিক: দুর্ঘটনার পরে রাস্তায় পড়ে রাজদীপ সর্দারের জুতো।

চিপ্‌স খাওয়ার বায়না করেছিল তিন বছরের ছেলে। প্রথমে রাজি না হলেও পরে তা কিনে দিয়ে মা বলেছিলেন, ‘‘বাড়ি গিয়ে ভাত খাওয়াব। এটা বিকেলে খাবি।’’ কথা শুনে মায়ের সঙ্গেই অটোয় চেপে বসেছিল ওই শিশু। হাতে ধরা ছিল চিপসের প্যাকেট। কিন্তু বাড়ির কিছুটা আগেই রাস্তার উপরে ছিটকে পড়ল সেই প্যাকেট। পায়ে থাকা ছোট্ট কমলা-সবুজ রঙের জুতোটাও পড়ে রইল রাস্তার ধারে। আচমকাই ব্রেক কষায় অটো থেকে ছিটকে ম্যাস্টিক অ্যাসফল্টের রাস্তায় আছাড় খেয়ে পড়ে মৃত্যু হল শিশুটির। মঙ্গলবার দুপুরে এই ঘটনা ঘটেছে বরাহনগরের অক্ষয়কুমার মুখার্জি রোডের বিবেক মোড়ে। পুলিশ জানায়, শিশুটির নাম রাজদীপ সর্দার ওরফে গোলু।

Advertisement

এই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে অটোচালক ভোলা দত্তকে। শিশুটির মায়ের অভিযোগ, অটোর বেপরোয়া গতি এবং আচমকা প্রচণ্ড জোরে ব্রেক কষার জন্যই এমন ঘটনা ঘটেছে। এমনকি ছেলে পড়ে যাওয়ার পরে তাকে তুলে হাসপাতালে নিয়ে না গিয়ে উল্টে চম্পট দেন অটোচালক। শিশুটির পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে বেপরোয়া গাড়ি চালানো ও গাফিলতির কারণে মৃত্যুর মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, বরাহনগরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের নোয়াপাড়ার ডাক্তার বাগান এলাকার বাসিন্দা পেশায় রাজমিস্ত্রি রাজা সর্দার ও রিঙ্কি সর্দারের একমাত্র ছেলে রাজদীপ। শাশুড়ি সবিতাদেবী শ্যামবাজার এলাকায় আয়ার কাজে যাওয়ায় ফাঁকা বাড়িতে ছোট ছেলেকে একা রেখে যাওয়ার সাহস পাননি রিঙ্কি। তাই এ দিন সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ তিনি রাজদীপকে নিয়েই বরাহনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালের সামনে বঙ্গলক্ষ্মী বাজারে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পথেই ঘটে দুর্ঘটনা।

Advertisement

দেখুন ভিডিয়ো

এ দিন দুপুরে বরাহনগর থানার বাইরে বসে কান্নায় ভেঙে পড়েন রিঙ্কি। জানান, ১২টা নাগাদ তিনি ছেলেকে নিয়ে টবিন রোড-নোয়াপাড়া রুটের অটোয় উঠেছিলেন। পিছনের সিটে বাঁ দিকে মায়ের সঙ্গে বসেছিল রাজদীপ। প্রথমে মায়ের কোলে বসে থাকলেও ছটফটে স্বভাবের ছেলেটি একটু পরে সিট থেকে নেমে চালকের আসনের পিছনের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে পড়ে। অক্ষয়কুমার মুখার্জি রোডের ৬ নম্বর বাঁকটি নেওয়ার পরেই আচমকা ব্রেক কষে অটোটি। আর তাতেই ছিটকে যায় রাজদীপ। অভিযোগ, ব্রেক কষার তীব্রতা এতটাই ছিল যে অটো থেকে রাস্তায় গিয়ে পড়ে শিশুটি।

রিঙ্কি জানান, অটোটি খানিকটা এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ালে তিনি নেমে ছুটে এসে দেখেন, রাস্তায় পড়ে কাঁদছে রাজদীপ। শিশুর চিৎকারে জড়ো হয়ে যান পথচারীরা। ঘটনাস্থলের উল্টো দিকে থাকা ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল অফিস থেকেও কাউন্সিলর অঞ্জন পাল-সহ অন্যরা বেরিয়ে আসেন। অঞ্জনবাবু বলেন, ‘‘স্থানীয় এক যুবক শিশুটিকে কোলে তুলে নেন। তখনও শিশুটি কাঁদছিল। সকলে মিলে হাসপাতালে নিয়ে গেল। কিন্তু বুঝিনি কয়েক মিনিটের মধ্যে এই খারাপ খবরটা শুনতে হবে।’’

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তার মা রিঙ্কি এবং ডান দিকে রাজদীপ সর্দার।

রাজদীপকে বরাহনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে চিকিৎসকেরা দ্রুত ব্যবস্থা নিলেও মিনিট দশেকের মধ্যে মৃত্যু হয় শিশুটির। হাসপাতালের সুপার জয়ব্রতী মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শিশুটির শরীরের কোথাও কোনও আঘাতের চিহ্ন ছিল না। মনে হচ্ছে মাথার পিছনে লেগে ভিতরে রক্তক্ষরণ হয়ে কিংবা ঘাড়ের কাছে শিরদাঁড়ায় চোট লেগেই মৃত্যু হয়েছে।’’

আরও পড়ুন: ব্লু হোয়েলের পর নতুন মারণ-গেম মোমো, ছড়াচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপে, আত্মঘাতী কিশোরী

এ দিন সকালে বরাহনগরের আমবাগান এলাকায় কাজে গিয়েছিলেন রাজা। তিনি বলেন, ‘‘এক বন্ধু ফোন করে বলল হাসপাতালে আসতে। এসে দেখলাম গোলুকে সবুজ কাপড়ে মুড়ে পুলিশের গাড়িতে তুলছে। ছেলেটা অসাড় হয়ে রয়েছে।’’ ঘটনার পরে স্থানীয় কয়েক জন যুবক অটো চালককে তাঁদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার দাবি তুলে থানার সামনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অঞ্জনবাবু এবং আরও এক কাউন্সিলর দিলীপনারায়ণ বসু গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন