গরমের সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিদ্যুৎ-বিভ্রাট

গত কয়েক দিন ধরেই কলকাতায় বিক্ষিপ্ত ভাবে বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের ঘটনা ঘটছে। গত মঙ্গল ও বুধবার দিনের বিভিন্ন সময়ে হরিদেবপুর, শখেরবাজার, মুকুন্দপুর, ঠাকুরপুকুর ও তারাতলা অঞ্চলে বিদ্যুৎ চলে গিয়েছে বলে গ্রাহকেরা জানিয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৯ ০২:০৭
Share:

ভোগান্তি: নেই বিদ্যুৎ, তার মধ্যেই চলছে পড়াশোনা। বারাসতে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

তাপমাত্রার পারদ যত ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে, কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের ঘটনা ততই বাড়ছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দিনের বিভিন্ন সময়ে বিদ্যুৎ না থাকায় চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে মানুষকে। যদিও সিইএসসি এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার দাবি, গরমে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়লেও জোগানে কোনও ঘাটতি নেই। তবে গরম যত বাড়ছে, রাতের দিকে হুকিং করে বিদ্যুৎ চুরির পরিমাণও বাড়ছে। বাড়ছে বেআইনি এসি-র চাপও। ফলে বহু জায়গায় ‘লো ভোল্টেজ’-সহ ওভারলোডের কারণে লাইনে বিভ্রাট দেখা দিচ্ছে।

Advertisement

গত কয়েক দিন ধরেই কলকাতায় বিক্ষিপ্ত ভাবে বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের ঘটনা ঘটছে। গত মঙ্গল ও বুধবার দিনের বিভিন্ন সময়ে হরিদেবপুর, শখেরবাজার, মুকুন্দপুর, ঠাকুরপুকুর ও তারাতলা অঞ্চলে বিদ্যুৎ চলে গিয়েছে বলে গ্রাহকেরা জানিয়েছেন। মুকুন্দপুরেই ঘণ্টা দু’য়েক বিদ্যুৎ না থাকার অভিযোগ উঠেছে। শখেরবাজার অঞ্চলের বহু গ্রাহকের বক্তব্য, অল্প সময়ের জন্য হলেও ঘন ঘন বিদ্যুৎ-বিভ্রাট হচ্ছে। ভোল্টেজ কমে যাওয়ার কারণে বাটানগরের কিছু এলাকায় এসি চালাতে পারছেন না অনেক গ্রাহক।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

Advertisement

প্রায় একই অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার অধীন এলাকা থেকেও। গত কয়েক দিন ধরে বারাসত অঞ্চলের বেহাল বিদ্যুৎ পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বহু মানুষ। মঙ্গলবার রাতে বারাসতের নবপল্লি এলাকায় সারা রাত বিদ্যুৎ ছিল না বলে গ্রাহকদের একাংশের দাবি। বারবার বিদ্যুৎ গিয়েছে মধ্যমগ্রাম অঞ্চলেও। সূত্রের খবর, বিভিন্ন জেলা সদরে দিনে-রাতে বিদ্যুৎ থাকলেও গ্রামাঞ্চলে বহু সময় ধরে আলো থাকছে না। অনেক সময়ে অভিযোগ জানালেও লাইন মেরামতি করতে বিদ্যুৎকর্মীরা আসছেন না বলে গ্রাহকদের অভিযোগ। কিছু এলাকায় রক্ষণাবেক্ষণের খামতি রয়ে গিয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। সেই কারণেও অনেক সময়ে চাহিদা বেড়ে গিয়ে লাইনে অতিরিক্ত ‘লোড’ পড়লে বা জোরে হাওয়া দিলে বিদ্যুৎ পরিষেবা বিঘ্নিত হচ্ছে।

সিইএসসি অবশ্য আগেই জানিয়ে দিয়েছে, বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের খবর পেলেই তাদের কর্মীরা দ্রুত পদক্ষেপ করছেন। চাহিদা মেটানোর জন্য পর্যাপ্ত বিদ্যুৎও তাদের হাতে রয়েছে। রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার কর্তাদেরও বক্তব্য, প্রতিটি জেলাতেই তাদের মোবাইল ভ্যান তৈরি রাখা হচ্ছে। দিনে-রাতে যখনই অভিযোগ আসছে, কর্মীদের সেখানে পাঠানো হচ্ছে। তবে জটিল কোনও সমস্যা হলে মেরামতি করতে সময় লাগছে বলে সংস্থার দাবি। রাজ্য সরকারের দাবি, গরমে গ্রাহকদের চাহিদা মেটানোর জন্য নিজেদের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি থেকে সর্বোচ্চ পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। পাশাপাশি, বিদ্যুৎ কেনা হচ্ছে এনটিপিসি, এনএইচপিসি-সহ জাতীয় গ্রিড থেকেও।

সূত্রের খবর, গত দু’দিনে সিইএসসি এলাকায় বিকেলের দিকে গড়ে ২২৭৫ মেগাওয়াট করে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কিছু জায়গায় পরিষেবা বিঘ্নিত হলেও বিদ্যুতের কোনও অভাব ছিল না। বুধবার সিইএসসি এলাকা বাদ দিয়ে রাজ্যে দুপুরের দিকে বিদ্যুতের চাহিদা উঠেছিল ৬৫০০ মেগাওয়াট। তার মধ্যে রাজ্যের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি ৩৪৫৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে। বাকি বিদ্যুৎ বাজার থেকে কেনা হয়েছে। রাজ্যের এক বিদ্যুৎকর্তা জানিয়েছেন, গরমে চাহিদা মেটানোর জন্য পর্যাপ্ত বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। চাহিদা আরও বাড়লেও কোনও ঘাটতি হবে না। বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতেও পর্যাপ্ত কয়লা রয়েছে বলেও ওই কর্তা দাবি করেছেন।

বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘‘গরমে বিদ্যুৎ বিভ্রাট রুখতে সব দিকে কড়া নজর রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন