corona virus

ঘরবন্দি দেশ মজেছে অনলাইন চ্যালেঞ্জে

করোনা-আতঙ্ক জাঁকিয়ে বসার আগে এ দেশের বহু তারকা একে অপরকে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়ার চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ভিডিয়ো পোস্ট করেছেন ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামে।

Advertisement

স্বাতী মল্লিক

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২০ ০২:২৮
Share:

ইনস্টাগ্রামে পিয়ানো বাজানোর ভিডিয়ো দিয়েছেন হৃতিক রোশন।

পিয়ানোর সামনে বসে হৃতিক রোশন। লাজুক মুখে জানাচ্ছেন, ছয় আঙুলে কিঞ্চিৎ অসুবিধাই হচ্ছে তাঁর। ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা কয়েক মিনিটের ভিডিয়োয় এর পরে সেই পিয়ানোতেই সুর তুলছেন তিনি। লকডাউনের মধ্যে ‘২১ ডেজ লার্নিং চ্যালেঞ্জ’ গ্রহণ করে আপাতত ঘরের মধ্যে পিয়ানো শেখাতেই মনোনিবেশ করছেন বলিউডি এই তারকা।

Advertisement

গত সপ্তাহে দেশজোড়া লকডাউন শুরুর পর থেকেই ঘরবন্দি আট থেকে আশি। বিশ্বের অধিকাংশ দেশেরও প্রায় একই অবস্থা। এই অবস্থায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ সংক্রান্ত খবর থেকে নিজেকে খানিক দূরে রাখতে এবং ২১ দিনের বন্দিজীবনকে কিছুটা সহনীয় করে তুলতে অনেকেই বেছে নিচ্ছেন সোশ্যাল মিডিয়াকে। কখনও অন্যকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে, কখনও নিজের সুপ্ত প্রতিভাকে সকলের সামনে তুলে ধরে করোনাময় পৃথিবীকে ভুলে থাকার চেষ্টা করছেন তাঁরা।

‘দেন অ্যান্ড নাউ’ থেকে ‘ড্র সামথিং’, ‘টয়লেট পেপার চ্যালেঞ্জ’ থেকে ‘পুশ-আপ চ্যালেঞ্জ’— করোনা পরিস্থিতিতে গত কয়েক দিনে সোশ্যাল মিডিয়া ছেয়েছে এমনই বেশ কিছু হ্যাশট্যাগে। হলিউড তারকা জেনিফার লোপেজ এবং অ্যালেক্স রডরিগে একে অপরকে কতটা ভাল করে চেনেন, তা জানতে এবং জানাতে একে অন্যকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘কাপল চ্যালেঞ্জ’ করেছেন। বর্তমানে তা রীতিমতো ট্রেন্ডিং। করোনা-আতঙ্ক জাঁকিয়ে বসার আগে এ দেশের বহু তারকা একে অপরকে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়ার চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ভিডিয়ো পোস্ট করেছেন ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামে। তাতে যেমন বেড়েছে জনসংযোগ, তেমনই ফলোয়ারদের সচেতন করার কাজও হয়েছে অনায়াসে।

Advertisement

দেশের লকডাউন পরিস্থিতিতে ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম ছেয়েছে ভিন্ন স্বাদের নানা চ্যালেঞ্জে। কেউ ছেলেবেলার ছবি বা শাড়ি পরা ছবি পোস্ট করার জন্য ট্যাগ করেছেন পরিচিতকে, কেউ আবার ক্যামেরায় তোলা প্রকৃতির ছবি বা হাতে আঁকা ছবি দিতে উৎসাহিত করছেন অন্যকে। কেন? কলকাতার রানিকুঠির ছেলে, অধুনা সুদূর ওমানবাসী সনক রায়চৌধুরী বলছেন, ‘‘অসুস্থ বাবা-মাকে এই অবস্থায় বাড়িতে একা রেখে এসেছি। তার চিন্তা তো আছেই। করোনা-আতঙ্ক শুরুর দিকে খেয়াল করলাম যে, আমি অনেক বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে যাচ্ছি, ফেসবুকে রাগারাগি করে ফেলছি। তখনই মনে হল, আমি কিন্তু এমন নই। তাই লকডাউনের সময়ে প্রতিদিন নিজের তোলা ছবি পোস্ট করে নিজেকে এবং অন্যদের চাঙ্গা রাখতে চেয়েছি।’’ ২১ দিনের বন্দিদশা ভুলতে শুধু ক্যামেরায় তোলা ছবি শেয়ার করাই নয়, ইনস্টাগ্রামে লাইভ সেশন করে রীতিমতো ফটোগ্রাফি-আড্ডার ব্যবস্থাও করে ফেলেছেন সনক ও তাঁর বন্ধুরা।

এত কাল আধুনিক প্রজন্মের ক্রমশ অসামাজিক হয়ে যাওয়ার পিছনে কাঠগড়ায় তোলা হত যে ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়াকে, ঘরবন্দি দশায় সে-ই আজ রীতিমতো ত্রাতার ভূমিকায়। তবে কি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার এই করোনা-যুগে অনলাইন চ্যালেঞ্জই জুড়ে রাখছে আমাদের? নাকি এ নিছক নিজেকে আরও জাহির করার চেষ্টা? চেষ্টা, অন্যের মনোযোগ আকর্ষণ করার? মনোরোগ চিকিৎসক জয়রঞ্জন রাম বলছেন, ‘‘এত দিন ধরে বন্দিজীবনের একঘেয়েমি কাটাতেই অনলাইনে এত কিছুর আয়োজন। ছবি দেওয়ার চ্যালেঞ্জ হোক বা একসঙ্গে লাইভ মিউজিক করা— সবই এই পরিস্থিতিতে একে অপরের সঙ্গে জুড়ে থাকার চেষ্টা।’’

তবে উল্টো মতও রয়েছে। লকডাউনের সময়ে যে দেশে না-খেয়ে পথ হাঁটছেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা, যে দেশে দিন-আনি-দিন-খাই মানুষগুলি অথৈ জলে, সেখানে চ্যালেঞ্জের নামে এলাহি রান্নার আয়োজন ফেসবুকে দেওয়া কতটা যুক্তিসঙ্গত এবং মানবিক, সেই প্রশ্ন উঠছে।

বাঙালি মেয়ের কাছে শাড়ি পরাটা আবার কবে থেকে কঠিন কাজ হল— সেই টিপ্পনীও কাটছেন অনেকে। বিপদের দিনে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বেঁধে-বেঁধে থাকার এই চেষ্টাকে তাই বিশেষ আমল দিতে নারাজ সমাজতত্ত্বের শিক্ষক অভিজিৎ মিত্র। তাঁর মতে, ‘‘সামাজিক জীব হলেও মেলামেশা করার অভ্যাস তো আমাদের বহু দিন ধরেই কমে এসেছে। তাই প্রতিযোগিতার আবরণে আসলে দেখো কেমন ভাল আছি, সেটাই দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে। এ ভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় বড়াই করা এবং নিজেকে জাহির করে দেখানোটা অর্থহীন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন