নোটা-বিতর্কে উত্তপ্ত আবাসনের ঠান্ডা ঘর

‘নোটা কি ক্রমশ আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে?’

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৯ ০১:০৯
Share:

আলোচনা: কেন্দ্রে ‘নোটা’, জমে উঠেছে বিতর্ক। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

‘সার্জিকাল স্ট্রাইক’-এর পাল্টা ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’।

Advertisement

‘চাকরি নেই’-এর পাল্টা ‘পাঁচ বছরে চাকরি হয়েছে ছ’কোটি’!

‘সামাজিক ন্যায়’-এর পাল্টা ‘মিশন শক্তি’।

Advertisement

ভোট মরসুমে অস্ত্রের কমতি নেই। একদল একটি অস্ত্র দেখালে পাল্টা দিতে বিশেষ সময় নিচ্ছেন না অন্যেরা। ভোট মরসুমে জোর চর্চায় আরও একটি অস্ত্রও। যার পোশাকি নাম— ‘নোটা’ (নান অব দি অ্যাবাভ)। ‘নোটা কি ক্রমশ আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে?’ শনিবার সন্ধ্যায় আনন্দবাজার পত্রিকা আয়োজিত ‘শহর কি বলছে’ শীর্ষক আলোচনায় এই প্রশ্নই রাখা হয়েছিল ই এম বাইপাস লাগোয়া ‘অভ্যুদয় হাউজিং কমপ্লেক্স’-এর বাসিন্দাদের সামনে। নানা মতের মধ্যে সবচেয়ে উজ্জ্বল দেখাল একটিই প্রশ্ন। আলোচনার একেবারে শুরুতেই এক ব্যক্তি বললেন, ‘‘বন্দুক আছে। কিন্তু তাতে গুলি আছে তো? ভয় দেখানোর অস্ত্র হিসেবে ভাল। কিন্তু এতে তো প্রাণ বাঁচে না!’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

২০১৩ সালে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে ‘নোটা’ বৈধতা পাওয়া থেকেই প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছে জনমানসে। প্রশ্নটা আরও উস্কে দিয়ে ‘অভ্যুদয়’-এর বাসিন্দা অনীক চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘‘নোটায় ভোট দিয়ে লাভ কী? নোটা তো জেতে না। নোটা বেশি ভোট পেলেও, নোটার পরে যে প্রার্থী বেশি ভোট পাবেন, তিনিই জয়ী ঘোষিত হবেন।’’ যদিও নির্বাচন কমিশন বলে, ভোটদানের অধিকার পালনে নাগরিকদের বড় অংশই এতে উৎসাহিত হবেন। এতে ভুয়ো ভোটও আটকে দেওয়া যায়। সেই উৎসাহের প্রতিফলন দেখা গিয়েছিল ২০১৩ সালে দিল্লি, ছত্তীসগঢ়, মিজোরাম, রাজস্থান এবং মধ্যপ্রদেশ— পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটে। এই ভোটেই প্রথম বার নোটা ব্যবহারের সুযোগ পান ভোটারেরা। এমনকি, ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে সবচেয়ে বেশি ‘নোটা’-এ ভোট পড়ে খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজ্যেই। ওই বছরের ভোটে ২১টি নথিভুক্ত রাজনৈতিক দলের থেকেও বেশি ভোট পেয়েছিল ‘নোটা’। যদিও নিয়ম অনুযায়ী, ‘নোটা’-এ সর্বোচ্চ ভোট পড়লেও দ্বিতীয় স্থানে থাকা প্রার্থীকেই জয়ী ঘোষণা করা হয়।

তবু আশাবাদী ‘অভ্যুদয়’-এর আর এক বাসিন্দা সমাজত্ত্বের শিক্ষক বাসবী শূর। তিনি বলেন, ‘‘আমার মতে নোটার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। আসলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে এ এক ক্রস-ক্লিভেজ। অর্থাৎ, সব রাজনৈতিক দল এক দিকে আর সাধারণ মানুষ, যাঁরা প্রত্যক্ষ রাজনীতি করেন না, তাঁরা আর এক দিকে। এই আলাদা পথটাই মানুষ নোটার মাধ্যমে বেছে নিতে পারেন। কারণ, রাজনৈতিক দলগুলি সাধারণ মানুষের মূল সমস্যাগুলি জানার চেষ্টাই করে না।’’ সোমনাথ ভট্টাচার্য নামে আর এক বাসিন্দা পাল্টা বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, নোটাকে জোর করে প্রাসঙ্গিক করার চেষ্টা হচ্ছে। নোটার পরিবর্তে আলাদা দল তৈরি করে তো লড়াই করা যায়।’’ পেশায় চিকিৎসক দেবাশিস চক্রবর্তীর আবার মত, ‘‘রাজনীতির প্রতি অনাস্থা থেকেই নোটার কথা আসছে।’’

‘নোটা’ বেছে নেওয়ার পিছনের কী উদ্দেশ্য, আলোচনায় তা-ও উঠে আসে। সোমেন মুখোপাধ্যায় নামে আর এক বাসিন্দার প্রশ্ন, ‘‘প্রার্থীকে পছন্দ নয় বলে নোটায় ভোট দেওয়া হচ্ছে, না এই সিস্টেম থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখার জন্য নোটায় ভোট পড়ছে?’’ তাপস বণিক নামে আর এক ব্যক্তির প্রশ্ন, ‘‘প্রার্থী নাকি দল? নোটায় ভোটের কারণ কী?’’ আলোচনাচক্র থেকেই পাল্টা কথা ওঠে, কেউ ভোটে জিতলেও কি জানা যায় সেই প্রার্থীকে পছন্দ না তাঁর দলকে?

গ্রামের না শহরের মানুষ ‘নোটা’ নিয়ে বেশি সচেতন? এ প্রসঙ্গে অনেকেই তুলে আনেন তামিলনাড়ুর নীলগিরি কেন্দ্রের কথা। গত লোকসভা নির্বাচনে সেখানে নোটায় ভোট পড়েছিল ৪৬, ৫৫৯। কংগ্রেসের ভাগ্যে জোটা ভোটের চেয়েও যা বেশি। সে বার ‘নোটা’-এ ভোট দেওয়ার ব্যাপারে নীলগিরির পাহাড়ি গ্রামীণ এলাকাও পিছিয়ে ছিল না। সোমনাথবাবুর দাবি, ‘‘আমার আপনার চেয়ে গ্রামের মানুষ অনেক বেশি বোঝেন।’’

‘অভ্যুদয়’-এর শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ‘কমিউনিটি হল’-এ মার্চ শেষের গরম সে ভাবে মালুম হওয়ার কথা ছিল না। তবে ঠান্ডা ঘরে ভালই উত্তাপ বাড়াল ‘নোটা’। তারই সঙ্গে প্রস্তাব এল, ‘‘আগে বন্দুকে গুলি ভরা হোক। তার পরে না হয় নোটা পার্টিতে সামিল হব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন