ছবি: সংগৃহীত।
দাগিদের পাকড়াও করা নিয়ে কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে বৈঠকে ডেকেছিল নির্বাচন কমিশন। লালবাজার সূত্রের দাবি, সেই বৈঠকে পুলিশকে কলকাতার দাগি দুষ্কৃতীদের নামের তালিকা ধরিয়েছেন বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক বিবেক দুবে। এখনও কেন বহু দুষ্কৃতী অধরা, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষ পর্যবেক্ষক অজয় নায়েক ও বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক বিবেক দুবে। ভোটের আগে যে ভাবেই হোক, দুষ্কৃতীদের হাজতে ঢোকানোর কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে খবর। শুক্রবার আলিপুরের সার্ভে বিল্ডিংয়ে ওই বৈঠক হয়।
লালবাজার সূত্রের খবর, পুলিশের তরফে এ দিন ২৮০ জন দাগির একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে কমিশনকে। সেই তালিকার বাইরেও কয়েক জন দুষ্কৃতীর কথা তোলেন পর্যবেক্ষকেরা। এ দিন তাঁদের তরফেও একটি তালিকা পুলিশকে দেওয়া হয়েছে। পুলিশের খবর, বেলেঘাটা, পার্ক সার্কাস, দক্ষিণ ও পূর্ব শহরতলির এক ইমারতি দ্রব্যের ব্যবসায়ী এবং মধ্য কলকাতার দুই দুষ্কৃতীর নাম নতুন তালিকায় রয়েছে।
লালবাজারের খবর, নির্বাচন কমিশনের ওই নির্দেশ পেয়েই বিকেল থেকে তৎপর হয়েছে কলকাতা পুলিশ। প্রতিটি থানাকে সক্রিয় হতে বলার পাশাপাশি গোয়েন্দা বিভাগের গুন্ডাদমন শাখাকেও মাঠে নামানো হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, ভোটের দু’দিন আগে নেমে আদৌ কোনও লাভ হবে কি? লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘ভোটের ঠিক আগেই তো দুষ্কৃতীরা এলাকায় ঢোকে। সব থানা এবং গুন্ডাদমন শাখা তৎপর হলে শহরকে ঠান্ডা করা মোটেও অসম্ভব নয়।’’ এ দিন বিভিন্ন ডিভিশনেও আলাদা আলাদা বৈঠক করেছেন আধিকারিকেরা। তাতেও পুলিশের কর্তারা বাহিনীকে শহরে বহিরাগতদের ঢোকা আটকাতে এবং দাগি দুষ্কৃতীদের খুঁজে বার করতে বলেছেন।
নির্বাচন কমিশনের নির্দেশের পরেও কতটা কাজ হবে, তা নিয়ে অবশ্য ধন্দে রয়েছেন পুলিশেরই অনেকে। তাঁরা বলছেন, আগের নির্বাচনগুলিতে গোলমাল পাকানো দাগিদের ফের গ্রেফতার করা হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে পুলিশের একাংশের তরফে। প্রশাসনের উপরমহলের চাপেই সেই ‘ছাড়’ দেওয়া হবে কি না, সে প্রসঙ্গ অবশ্য এড়িয়ে গিয়েছেন গোয়েন্দা বিভাগের অফিসারেরা।
পুলিশের অনেকেই বলছেন, শহরে ভোট কী ভাবে করাতে হয়, ২০১৬ সালে তা দেখিয়ে দিয়েছিলেন তৎকালীন পুলিশ কমিশনার সৌমেন মিত্র ও তাঁর সহকর্মীরা। কিন্তু এ বার কলকাতা পুলিশের মধ্যে কিছুটা ‘গা-ছাড়া’ মনোভাব দেখা যাচ্ছে বলে মনে করছেন পুলিশকর্তাদেরই একাংশ। তাঁদের মতে, ২০১৬ সালের ভোটের পরে কলকাতা পুলিশের নিচুতলার বহু কর্মীকে যে ভাবে জেলা পুলিশে বদলি করা হয়েছিল, সেই আতঙ্কেই ভুগছেন অনেকে।
পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার থেকেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের নিয়ে কুইক রেসপন্স টিম, কলকাতা পুলিশের সেক্টর মোবাইল এবং পুলিশের নিজস্ব আরটি ভ্যান বিভিন্ন এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে। এই প্রথম ভোটের দু’দিন আগে থেকে ওই বাহিনীকে নামানো হল। গঙ্গাবক্ষেও টহলদারি বাড়িয়েছে রিভার ট্র্যাফিক পুলিশ। বিভিন্ন হোটেলে এবং ধর্মশালায় তল্লাশি চলছে। আজ, শনিবার থেকেই কলকাতা পুলিশ এলাকার ৪৭৫৫টি বুথে পৌঁছে যাবেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা। বুথ এবং ভোটকেন্দ্রের দায়িত্ব রয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর হাতে। বুথের ২০০ মিটার পরের এলাকার দায়িত্ব থাকছে কলকাতা পুলিশের হাতে।
লালবাজারের কর্তারা জানিয়েছেন, শহর জুড়ে অতিরিক্ত প্রায় ১৮০টি পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে বিভিন্ন গুরত্বপূর্ণ জায়গায়। এ ছাড়াও নাকা তল্লাশির জন্য ফ্লাইং স্কোয়াড টিম এবং স্ট্যাটিক সার্ভিল্যান্স টিম ঘুরে বেড়াচ্ছে শহর জুড়ে। যে কোনও ধরনের পরিস্থিতি সামাল দিতে শহরের ১৫টি জায়গায় রাখা হয়েছে বিশেষ কিউআরটি বাহিনী। অলিগলিতে নজরদারির জন্য প্রতিটি থানার তরফে অতিরিক্ত দু’টি করে মোটরবাইক টিম নামানো হয়েছে।