general-election-2019-west-bengal

নেতাদের পাইলট দিতে ঘুম উড়েছে পুলিশের

নির্দেশ পেয়ে মাথায় হাত ওই পুলিশ আধিকারিকের। রুটিন ডিউটি শেষ করে ততক্ষণে অধিকাংশ কর্মী বাড়ির পথ ধরেছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৯ ০১:২০
Share:

প্রতীকী ছবি।

সন্ধ্যার ব্যস্ততা পার করে একটু হাল্কা মেজাজে ছিলেন কলকাতা পুলিশের ওয়্যারলেস বিভাগের এক সার্জেন্ট। এমন সময়ে বডিগার্ড লাইন্সে তাঁর দফতরে খবর এল, জেলা থেকে শাসক দলের এক দাপুটে নেতা আসছেন। এ হেন নেতাকে পথ দেখিয়ে পৌঁছে দিতে হবে দক্ষিণ কলকাতায় এক মন্ত্রীর বাড়িতে।

Advertisement

নির্দেশ পেয়ে মাথায় হাত ওই পুলিশ আধিকারিকের। রুটিন ডিউটি শেষ করে ততক্ষণে অধিকাংশ কর্মী বাড়ির পথ ধরেছেন। অথচ ওই নেতাকে পথ দেখাতে হবেই! পুলিশ সূত্রের খবর, তিন জন নেতাকে পথ দেখিয়ে সদ্য অফিসে ফেরা একটি গাড়িকে ফের পাঠানো হয় ওই নেতার কাছে। মন্ত্রীর বাড়িতে জরুরি বৈঠক শেষে ওই নেতাকে হোটেলে পৌঁছে তবে মিলল ছুটি!

নির্বাচনের দিন ঘোষণা হতেই তৎপরতা বেড়েছিল লালবাজারের। পুলিশের খবর, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বা ভোট-প্রস্তুতির পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ‘দামি’ নেতাদের পথ দেখাতে গিয়েও এখন হিমশিম খাচ্ছে তারা। এক পুলিশকর্তা বলছেন, ‘‘এই শহরের মন্ত্রী-নেতারা নিরাপত্তা বিধি মেনে পাইলট কার পান। তার উপরে ভোটের মরসুমে তৃণমূলের জেলা নেতারা ঘন ঘন শহরে আসছেন। রয়েছেন অন্য দলের নেতারাও। ফলে চাপ আরও বেড়েছে।’’ পুলিশ আধিকারিকদের অনেকেই বলছেন, গাড়ির চালক বা কনস্টেবলদের রীতিমতো অনুনয়-বিনয় করে ডিউটি করাতে হচ্ছে।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

পুলিশের একাংশের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাইলট কার নেন না। কিন্তু তাঁর মন্ত্রিসভার প্রায় সব সদস্যকে পথ দেখাতে পুলিশের গাড়ি প্রয়োজন হয়। এক মন্ত্রীর তো দু’টো পাইলট বরাদ্দ থাকে। কারণ, বিপর্যয় ঘটলেই তাঁকে ছুটতে হতে পারে। এক বিদায়ী সাংসদের জন্য থাকে দু’টি পাইলট। আর এক ‘হেভিওয়েট’ মন্ত্রী নাকি পাইলট কার নিলে ছাড়তেই চান না। তাঁর ‘আব্দার’ মেনে কলকাতা পুলিশের পাইলটকে জেলা পুলিশের এলাকাতেও যেতে হয়।

পুলিশের একাংশের আরও বক্তব্য, এর সঙ্গে যোগ হয়েছেন বিজেপি এবং অন্য দলের নেতারা। নিরাপত্তার বিধি মেনে তাঁদেরও পথ দেখাচ্ছে কলকাতা পুলিশ। সে দিক থেকেও চাপ বাড়ছে। ‘‘এই গরমে দিনভর গাড়িতে চেপে পথ দেখানো কি চাট্টিখানি ব্যাপার? সোজা পথও দিনের শেষে ধাঁধার মতো লাগে’’— মন্তব্য এক আধিকারিকের।

পুলিশ সূত্রের খবর, পাইলট কার দেওয়ার দায়িত্ব ওয়্যারলেস বিভাগের। বছরের অন্য সময়ে ওয়্যারলেস বিভাগের এত বেশি চাপ থাকে না। পুজোয় পাইলট দেওয়ার চাপ খানিকটা বেশি থাকে। কিন্তু এই ভোটের সময়ে যেন নাওয়া-খাওয়া ভুলেছে তারা। নির্বাচনের দিন ঘোষণার আগে প্রতিদিন গড়ে ১৫-২০টি পাইলট কার দরকার পড়ত। এখন লাগছে দিনে ৩৫-৪০টি। প্রতি গাড়িতে চালক ছাড়াও এক জন অফিসার এবং এক জন কনস্টেবল থাকেন। এক অফিসারের বক্তব্য, ‘‘শেষ দফায় কলকাতা পুলিশ এলাকায় তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রের নির্বাচন। ফলে আগামী ক’দিনে মিটিং, মিছিল, রোড-শো মিলিয়ে চাপ আরও বাড়বে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন