প্রচার-মিছিলেই সন্তানের পরিচর্যা মায়ের। কলকাতা হাইকোর্ট চত্বরে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
মায়ের হয়ে ‘প্রক্সি’ দিচ্ছেন পুত্র!
রবিবারের সন্ধ্যায় কলকাতার মেয়রের ওয়ার্ডে প্রচারে ব্যস্ত ‘মাতৃদেবী’। পুত্র নির্বাণ তখন গোবরার দিকে ৬০ নম্বর ওয়ার্ডে মায়ের হয়ে ইফতার পার্টির নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে গেলেন।
কলকাতা দক্ষিণের প্রার্থী মালা রায় ও তাঁর পুত্র নির্বাণ এ ভাবেই দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নিয়েছেন।
উত্তর কলকাতাতেও এ দিন মায়ের হয়ে স্লোগান দিচ্ছিলেন কন্যা। বৈশাখ শেষের খর রোদ মাথায় নিয়েও বিটি রোডের চিড়িয়া মোড় থেকে রোড শো বেরিয়েছিল কলকাতা উত্তরের সিপিএম প্রার্থী কনীনিকা বসু ঘোষের সমর্থনে। কনীনিকার মেয়ে সম্পৃক্তা এপ্রিলে বিএসসি অনার্সের পরীক্ষা মিটিয়েই দলের হয়ে প্রচার করছেন। পার্টির কাজের সূত্রে সম্পৃক্তার দায়িত্ব পড়েছে কলকাতা দক্ষিণে। তারই ফাঁকে মায়ের হয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচারেও চালাচ্ছেন মেয়ে। এ দিন সিপিএমের লম্বা রোড শোয়েও তাঁকে দেখা গেল। মা দিবস নিয়ে এমনিতেই উত্তাল নেট-রাজ্য। লোকসভা ভোটের শেষ পর্বে শহরে ভোটের প্রাক্কালে প্রচারের শেষ রবিবারেও তার ছোঁয়াচ থেকে গেল।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
কলকাতা উত্তরের তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচারে আবার স্বামী-স্ত্রীর যুগলবন্দি। বৌবাজারের তৃণমূল বিধায়ক স্ত্রী নয়না বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন সারা ক্ষণ রোড শোয়ে স্বামীর পাশে পাশে। বৌবাজারে ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডে সুদীপ-নয়নার রোড শো। ‘‘গরমে সুস্থ থাকতে হবে! সুদীপ অবশ্য যা দিচ্ছি, হাল্কা ঝোল, রুটিটুটির সঙ্গে খেয়ে নিচ্ছে,’’ বললেন প্রার্থীজায়া নয়না!
কলকাতার দু’টি আসন, লাগোয়া যাদবপুর, দমদম, বারাসত— সর্বত্রই শেষ রবিবার নিজেদের শক্তি বুঝিয়ে দিয়েছে শাসক দল। সকালে দক্ষিণ দমদমে সৌগত রায়ের রোড শোয়ে টিভি সিরিয়ালের ‘ঝিলিক’ তথা শ্রীতমাকে দেখে উত্তেজনা। রোড শোয়ের পরে বরাহনগরের অ-বাংলাভাষী অধ্যূষিত একটি আবাসনে অন্তরঙ্গ আলাপচারিতা সারতে সারতে বিকেল পর্যন্ত প্রবীণ প্রার্থীর খাওয়াই হল না। যাদবপুরের প্রার্থী মিমি সকালে রোড শো সেরে বাড়িতে কোনওমতে খেয়েই বারুইপুরে মুখ্যমন্ত্রীর সভায় গেলেন। কলকাতা দক্ষিণের প্রার্থী মালা রায় সকালে বেহালার কেয়াতলা বস্তি, পেয়ারাবাগান বস্তি, গোখানা বস্তি কিংবা সপ্তপর্ণী আবাসন চষে ফেলেছেন। সুদীপও বিকেলে মুসলিম ইনস্টিটিউটে ইফতার সেরে ফুলবাগান-বেলেঘাটায় বড় মিছিল করেছেন।
উত্তর কলকাতার রোড শোয়ে সুজন চক্রবর্তী, মানব মুখোপাধ্যায়, রূপা বাগচী, রবীন দেব থেকে বিমান বসু— বাম-শিবিরের চেনা সব মুখও কলকাতার রাজপথে ভেসে উঠেছে। যাদবপুরে তখন প্রার্থী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের সমর্থনে ‘সাংস্কৃতিক পদযাত্রা’-এ লালে লাল রাজপথ! সব্যসাচী চক্রবর্তী, বাদশা মৈত্রদেরও সেখানে দেখা গেল। বিকাশবাবু এ দিন ‘সন্ত্রাস’-এর অভিযোগ পেয়ে ভাঙড়ের হাটগাছিয়া, বামনঘাটায় সমর্থকদের চাঙ্গা করতে গিয়েছিলেন। বিকেলে কলকাতা দক্ষিণের সিপিএম প্রার্থী নন্দিনী মুখোপাধ্যায়ের রোড শোও বহরে কম নয়। বেহালার অজন্তা সিনেমা হল থেকে ঠাকুরপুকুরের থ্রি-এ বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত লম্বা মিছিল। এর পরেও কালীঘাট রোড, অহীন্দ্র মঞ্চ, কসবা মিলনতীর্থ, পঞ্চান্ন গ্রামে পরপর জনসভা!
কলকাতার ভোটে গেরুয়াও অবশ্য যথেষ্ট সমীহযোগ্য এ বার। দমদম পার্ক থেকে শমীক ভট্টাচার্যের প্রচারে উপস্থিত অভিনেত্রী-সাংসদ রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। শহরে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভি। তাই বিজেপি-র অন্যতম কেন্দ্রীয় সম্পাদক তথা কলকাতা উত্তরের প্রার্থী রাহুল সিংহের কিছুটা বাড়তি ঝক্কি। গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক, নির্বাচন কমিশনে দরবার ইত্যাদি সামলে রাহুল নিজের শক্ত ঘাঁটিতেই জোর দিয়েছেন। ঠনঠনিয়া কালীবাড়ির কাছে জায়সবাল সমাজ বা গণেশ টকিজে কলকাতার অ-বাংলাভাষী সমাজের মধ্যে পরপর সভা করেন তিনি। বড়বাজারে কংগ্রেসের আইনজীবী প্রার্থী সৈয়দ শাহিদ ইমামেরও এ দিন সভা চলছে। পাটুলিতে শাসক দলের সভায় বহু দিন বাদে প্রাক্তন সাংসদ কবীর সুমনেরও দেখা মিলল। ভোটরঙ্গে ভরপুর শহর!