general-election-2019-vote-colour

ভোট-প্রচারে হাতিয়ার ভিন্ন স্বাদের শিল্পকর্ম

Advertisement

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৯ ০১:০৯
Share:

অন্য রকম: গাড়ির কাচে স্যান্ড-আর্টের মাধ্যমে এ ভাবেই চলছে ভোটের প্রচার। —নিজস্ব চিত্র।

বালি শিল্প, পথনাটক, মূকাভিনয়, বহুরূপী, আবৃত্তি— রাজ্যে ভোটের প্রচারে এ বার এমন ভিন্ন স্বাদের শিল্পকর্মের শরণ নিচ্ছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলি। কোথাও পারিশ্রমিকের বিনিময়ে রাজনৈতিক দলের হয়ে প্রচার করছেন শিল্পীরা। আবার কোথাও এই শিল্পীদের তৈরি বিভিন্ন কারুকাজ সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিয়ে প্রচারের কাজ সারছে রাজনৈতিক দলগুলি।

Advertisement

আগে তথ্যচিত্র, যাত্রা, বাউলগানে ভোটের প্রচার চলত অনেক জায়গায়। জনসভার আগে গণসঙ্গীত ছিল বামেদের প্রচারের অঙ্গ। কিন্তু এখন বদলেছে প্রচারের ধরন। দেওয়াল লিখন, ফ্লেক্স, পোস্টার, রাজনৈতিক পতাকায় এলাকা মুড়ে দিয়ে, অটোয় মাইক লাগিয়ে তীব্র স্বরে প্রচারের প্রবণতা কমেছে। বদলে এ বার বেশি করে ব্যবহার হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া। আর থাকছেন ভিন্ন স্বাদের শিল্পীরা।

যেমন, ঘাটালের তৃণমূল প্রার্থী দেবের সঙ্গে বন্ধুত্বের সূত্রেই তাঁর জন্য বালি দিয়ে এঁকে প্রচার করছেন কৌশিক বসু। কাচের উপরে বালি দিয়ে তিনি এঁকেছেন সংসদ ভবন, গ্রামবাংলার ছবি। আবার কখনও বালি দিয়ে লিখছেন ‘ঘাটাল থেকে বাংলার গর্ব’। বরাহনগরের বাসিন্দা, ‘স্যান্ড কৌশিক’ নামে পরিচিত এই বালি-শিল্পী বলছেন, ‘‘মতপার্থক্য হলেই সে খারাপ হবে তা যেমন নয়, তেমনই রাজনীতিতে আসা সকলেই খারাপ নয়। এই ভাবনা থেকেই কাজটা করেছি।’’

Advertisement

বাগুইআটির কৃষ্ণ বৈরাগীর অবশ্য প্রার্থী বা দল নিয়ে বাছবিচার নেই। যে দলই ডাকছে, তাঁদেরই দলের নেতা-নেত্রীর রূপ ধরে প্রচারে যাচ্ছেন এই বহুরূপী। বামেদের প্রচারে কখনও জ্যোতি বসু, কখনও সাদা গোল টুপি মাথায় সুভাষ চক্রবর্তীর আদলে সাজছেন তিনি। কখনও আবার তৃণমূলের বরাত পেয়ে সহশিল্পীকে সাজিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো করে। সোমবার সন্ধ্যায় রাজারহাটে তৃণমূলের এক সভার জন্য ভাই রতনের সারা গা সাজিয়ে দিয়েছিলেন দলীয় পতাকা এবং ঘাস-ফুলে। পারিশ্রমিক ২ হাজার টাকা। কৃষ্ণবাবুর কথায়, ‘‘বহুরূপীদের এখন টাকা কোথায়? টাকার জন্যেই ভোট প্রচারে নেমেছি।’’ তবে প্রচার নিয়ে ভাগ্য যে সব সময়ে সহায় হয়েছে, এমনও নয়। ভেবেছিলেন, এ বারের প্রচারে নরেন্দ্র মোদী সাজার জন্য বিজেপি-র তরফ থেকে ডাক মিলতে পারে। সেই মতো দাম দিয়ে মোদীর পোশাক, হাতকাটা কোট কিনেও ফেলেছিলেন কৃষ্ণবাবু। কিন্তু ডাকেনি বিজেপি। উল্টে অন্য রাজনৈতিক দলের প্রচারে মোদী সেজে ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’ বলে গালমন্দ সইতে হয়েছে! ‘‘এ বারে ভোটে আমি যেন নীরব মোদী’’—ঠাট্টা করে বলছেন কৃষ্ণবাবু।

কেন এই সব শিল্পকর্মকে হাতিয়ার করছে দলগুলি? শাসকদলের এক প্রার্থী বলছেন, ‘‘আসলে এই সব শিল্পকর্ম দিয়ে অনেক মানুষের কাছে সহজেই পৌঁছে যাওয়া যাচ্ছে। প্রচারের ধরনও পাল্টাচ্ছে।’’ নির্বাচন কমিশনের তথ্যও বলছে, এ বারের ভোটে দেওয়াল লিখন, পোস্টার দেওয়া, শব্দদূষণ নিয়ে বিধি ভঙ্গের অভিযোগ কমেছে অনেকটাই। এক বাম প্রার্থীর কথায়, ‘‘এই গরমে দেওয়াল লিখন, পোস্টার মারার জন্যে কর্মীদের সেই উৎসাহ কমেছে।’’ অবস্থা এমনই যে, প্রতীক চিহ্ন আঁকতে টাকা দিয়ে ধরে আনতে হচ্ছে শিল্পীকে। এ ব্যাপারে সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছেন বারাসত লোকসভায় ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রার্থীর মতো কেউ-কেউ। ছবি আঁকা না শিখে দেওয়ালে দেওয়ালে ঘাসফুল, হাত কিংবা কাস্তে-হাতুড়ি-তারা এঁকে ফেলা গেলেও ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রতীক সিংহ আঁকতে হিমশিম অবস্থা কর্মীদের। আনাড়ি হাতের আঁকায় সিংহ অনেক সময়েই সারমেয় কিংবা মার্জারের মতো দেখতে হয়ে যাচ্ছে। তাই ঝুঁকি না নিয়ে প্রচার করতে ভিন্ন স্বাদের শিল্পীদের শরণাপন্ন হচ্ছেন নেতারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন