ভোটের ঢঙে দেওয়ালে পুজোর প্রচার

নির্বাচনী প্রচারের কায়দাতেই দেওয়াল রাঙিয়েছেন তাঁরা। ঝুলিয়েছেন ব্যানার। তাতে রয়েছে প্রার্থীর নাম, প্রতীক, এমনকি দলের নামও।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৯ ০২:০৭
Share:

অভিনব: ভোটের সময়েই দেওয়াল লিখন। —নিজস্ব চিত্র।

শারদোৎসবের এখনও ঢের দেরি। কিন্তু ভোট উৎসব তো এসে গিয়েছে। তাই ভোটের বাদ্যির সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেওয়াল ‘দখল’ করতে নেমে পড়েছে শহরের এক পুজো কমিটি।

Advertisement

ভোটের মতো দুর্গাপুজোও এখন অনেকাংশেই প্রচার-নির্ভর। সেই কারণে এ বারের নির্বাচনকে হাতিয়ার করেই শারদীয়া যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন উত্তর কলকাতার টালা অঞ্চলের এক পুজো কমিটির সদস্যেরা।

নির্বাচনী প্রচারের কায়দাতেই দেওয়াল রাঙিয়েছেন তাঁরা। ঝুলিয়েছেন ব্যানার। তাতে রয়েছে প্রার্থীর নাম, প্রতীক, এমনকি দলের নামও। রয়েছে কেন ভোট দিতে হবে, তার ব্যাখ্যা। এক ঝলকে যা দেখে সাধারণ মানুষের মনে হবে, এ-ও বোধহয় কোনও এক নির্দল প্রার্থীর প্রচার। তবে ধৈর্য ধরে গোটা দেওয়ালে চোখ বোলানোর পরেই বোঝা যাচ্ছে, সেটি আসলে পুজোর প্রচার!

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

ভোটের বাজারে এমনই অভিনব কায়দায় নিজেদের প্রচার চালাচ্ছে উত্তর কলকাতার ‘টালা পার্ক প্রত্যয়’। ওই পুজো কমিটির সভাপতি কলকাতা পুরসভার এক নম্বর বরোর চেয়ারম্যান তরুণ সাহা। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা মজা করতে চেয়েছি ঠিকই। তবে ভোটের সময়ে এমন দেওয়াল লিখন দেখে অনেকেই জানতে চাইছেন, ব্যাপারটা কী? মানুষের তো গুলিয়ে যাচ্ছে। তাই ছেলেদের বলেছি, এখন ব্যানার খুলে রাখতে। দেওয়ালে না লিখতে।’’ পুজো কমিটির সদস্যেরা জানাচ্ছেন, শহরের অনেক জায়গাতেই তাঁদের লেখার উপরে সাদা রং চাপিয়ে সেখানে রাজনৈতিক প্রচার লিখে দেওয়া হয়েছে।

এ সবে অবশ্য মোটেও দুঃখ পাচ্ছেন না পুজো কমিটির লোকজন। বরং ‘দাদা’র কথা মতো আপাতত দেওয়াল লেখা বন্ধ রেখে, পাড়ার বাতিস্তম্ভ থেকে ব্যানার খুলে নিয়ে তাঁদের দাবি, দুর্গাপুজোর ইভিএমে প্রথম বোতাম তাঁরাই টিপলেন।

৯৩ বছরের পুরনো পুজো টালা পার্ক প্রত্যয়ের। শেষ কয়েক বছর ধরে থিম পুজোয় মেতে ওঠা উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, প্রতি বছরই তাঁরা প্রচারে চমক দেন। দৈনন্দিনের ঘটনা বা অনুষ্ঠানকে মাথায় রেখেই তৈরি হয় প্রচারের বিষয়বস্তু। ‘‘এ বার আমরা দেশ জুড়ে ভোট উৎসবের বিষয়টিকে হাতছাড়া করিনি। দোলের দিনই শুরু করেছি অন্য রকমের প্রচার,’’ বললেন কমিটির বিপণন আহ্বায়ক শমীক সাহা। কেমন সেই প্রচার? শমীক জানাচ্ছেন, শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণের বিভিন্ন দেওয়ালে ফুটে উঠেছে সবুজ, গোলাপি, হলুদ, কালো রঙের সমন্বয়ের ওই লেখা। আর বাতিস্তম্ভ থেকে রেলিংয়ে ঝোলানো হয়েছে ‘ত্রিনয়ন’ চিহ্ন আঁকা এবং ‘আপনার প্রতীক’ লেখা ব্যানার।

পুজো কমিটির কার্যালয় থেকে কয়েক পা এগিয়ে গিয়েই দেখা মিলল সেই মজার দেওয়াল লিখনের।

সরু গলির একপাশের দেওয়ালে জ্বলজ্বল করছে কলকাতা উত্তর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম। ঠিক তার উল্টো দিকেই রয়েছে ‘সারা

দেশে দুর্গাপুজোর সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে আসন্ন দুর্গোৎসবে কলকাতা কেন্দ্রে টালা পার্ক প্রত্যয় মনোনীত প্রার্থী সুশান্ত পালকে বিপুল ভোটে ত্রিনয়ন চিহ্ন বোতাম টিপে বিপুল ভোটে জয়ী করুন’। নীচে লেখা রয়েছে ‘পশ্চিমবঙ্গ দুর্গাপুজো পার্টি’!

ওই পুজোর প্রচার আহ্বায়ক অভিজিৎ বসাকের কথায়, ‘‘দুর্গাপুজো আমাদের নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস। তাই তাকে সারা বছর জাগিয়ে রাখতেই ভোট উৎসবেও জুড়ে দিয়েছি। আসলে ব্র্যান্ডিংটাই তো মুখ্য।’’ আর তাই আগে থেকে রীতিমতো সাদা পুট্টি দিয়ে দেওয়াল চুনকাম করে তার পরে থিম শিল্পী সুশান্তবাবুকে দিয়েই প্রথম লেখার কাজ শুরু করা হয়েছে। শহরের বাকি দেওয়ালে লেখার দায়িত্ব অবশ্য দেওয়া হয়েছে একটি সংস্থাকে। তবে এমন লেখা দেখে স্থানীয়েরা অনেকেই ভেবেছিলেন, বোধহয় কলকাতা উত্তর কেন্দ্রে ত্রিনয়ন চিহ্নে নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছেন সুশান্ত নামের কোনও ব্যক্তি। বাসিন্দা শান্তিগোপাল সাহার কথায়, ‘‘প্রথমে তো বুঝতেই পারিনি। পরে ভাল করে পড়তে গিয়ে দেখলাম, আরে কলকাতা বলে তো কোনও কেন্দ্র নেই। আর পশ্চিমবঙ্গ দুর্গাপুজো পার্টি বলেও তো কিছু নেই। আসলে এটা পুজোর গিমিক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন