মমতার পতাকা আসছে মোদীর রাজ্য থেকে

বিষ্ণু জরিওয়ালা নামে গুজরাতের এক ব্যবসায়ী বলছেন, ‘‘কলকাতার মতো এ দেশের প্রায় সব শহরেই আমাদের এজেন্টরা রয়েছেন। তাঁদের মাধ্যমেই বরাত পাই।’’

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৯ ০০:০০
Share:

প্রস্তুতি: গুজরাতের একটি কারখানায় তৈরি হচ্ছে তৃণমূলের পতাকা। নিজস্ব চিত্র

মোদীর রাজ্যে আঁকা হচ্ছে দিদির ঘাসফুল! সঙ্গে তাঁর ছবিও!

Advertisement

লোকসভা ভোটের দামামা বাজতেই শহর থেকে গ্রাম, ছেয়ে গিয়েছে তৃণমূলের পতাকায়। কিন্তু কোথায় তৈরি হয় সেই কাপড়ের পতাকা? প্রশ্নটা নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বড়বাজারের পতাকা মার্কেটে। সেখানকার ব্যবসায়ীরাই জানাচ্ছেন, এ রাজ্যের শাসক দলের পতাকা তৈরি হয় গুজরাতের আমদাবাদ ও সুরাতে। যা কি না খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নিজের রাজ্য।

বিষ্ণু জরিওয়ালা নামে গুজরাতের এক ব্যবসায়ী বলছেন, ‘‘কলকাতার মতো এ দেশের প্রায় সব শহরেই আমাদের এজেন্টরা রয়েছেন। তাঁদের মাধ্যমেই বরাত পাই।’’ তিনি জানান, কখনও দলের তরফেই লোগো বা ছবি কারিগরদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বাকি সময়ে ভরসা ইন্টারনেট। তবে এক-এক রাজ্যের ক্ষেত্রে পতাকার চাহিদাও এক-এক রকম বলে দাবি বিষ্ণুর। যেমন, মহারাষ্ট্রে শিবসেনার পতাকার চাহিদা সব থেকে বেশি। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে চাহিদা বেশি তৃণমূলের পতাকার। রয়েছে ঘাসফুল আঁকা শাড়ির চাহিদাও। বিষ্ণু বলেন, ‘‘মাস দেড়েক আগেই জোড়া ঘাসফুল

Advertisement

আঁকা এক হাজার শাড়ি কলকাতায় সরবরাহ করেছি।’’

মোদীর রাজ্যে অবশ্য তৃণমূলের কোনও ইউনিট নেই। তা-ও সেখানকার গ্রামের কারিগরেরা তেরঙা পতাকার মাঝেই আঁকছেন জোড়া ঘাসফুল। কখনও আবার পতাকায় ফুটিয়ে তুলছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি। এই ব্যাপারটা লোকসভা ভোটের প্রাক্কালে বেশ চমকপ্রদ বলেই মনে করছেন শাসক দলের একাংশ। তবে শুধু গুজরাত নয়। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, পতাকা তৈরির কারিগরেরা রয়েছেন মথুরা, দিল্লি ও মুম্বইয়েও। সেখানেও তৃণমূলের তেমন কোনও নেতা বা সংগঠনও নেই। তবে এ সব শুনে শাসক দলের নেতাদের একাংশের মন্তব্য: ‘‘সর্বত্রই এখন তৃণমূল।’’

প্লাস্টিকের প্রচার-সামগ্রীর উপরে নির্বাচন কমিশনের বিধিনিষেধ থাকায় এ বার কাপড়ের পতাকার চাহিদা বেড়েছে। আর তাই ভিন্ রাজ্যের কারিগরেরাও দিন-রাত এক করে পতাকা তৈরিতে ব্যস্ত। তবে শুধু তৃণমূলের পতাকাই নয়, বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস-সহ সব দলেরই পতাকা তৈরি হচ্ছে ওই সমস্ত রাজ্যে। সেখানকার পতাকা ব্যবসায়ীদের কথায়, ‘‘কে কোন দল জানি না। যেমন অর্ডার আসে, তেমন কাজ করি।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

কলকাতার বড়বাজার এলাকার ওল্ড চিনা বাজারেই রয়েছে পতাকার পাইকারি বাজার। ভিন্ রাজ্য থেকে বস্তা ভর্তি পতাকা এনে সারা বাংলায় তা সরবরাহ করেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। ওল্ড চিনা বাজারে প্রায় ১০ জন পাইকারি পতাকা বিক্রেতা রয়েছেন। তাঁদেরই এক জন ভোলানাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘একসঙ্গে বেশি পরিমাণ পতাকা কিনলে কত দাম পড়বে, তা নিয়ে সব দলই খোঁজখবর নিচ্ছে।’’ আর এক ব্যবসায়ী কনককান্তি নন্দী

বলেন, ‘‘পতাকার পাশাপাশি শাড়ি, গেঞ্জিরও চাহিদা রয়েছে। অনেকে বিশেষ মাপের পতাকা তৈরিরও বরাত নিয়ে আসছেন।’’

ভোটের আগে কোন দলের কত ধ্বজার বরাত আসছে? সে ব্যাপারে অবশ্য মুখ খুলতে নারাজ ব্যবসায়ীরা। তবে ঠারেঠোরে তাঁরা বুঝিয়ে দিচ্ছেন, তৃণমূলের পতাকার চাহিদাই বেশি। তার পরেই রয়েছে বিজেপি। ব্যবসায়ীরা আরও জানাচ্ছেন, পঞ্চায়েত ভোটে পতাকার চাহিদা থাকে সব থেকে বেশি। বিধানসভা ও লোকসভা ভোটে ততটা থাকে না। এই সব ভোটে অনেক দলেরই দিল্লির সদর কার্যালয় থেকে পতাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয় রাজ্যের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে।

কারিগরেরা জানাচ্ছেন, রোটো বা স্যাটিন কাপড়ে তৈরি হয় পতাকাগুলি। কলকাতার পাইকারি বাজারে ২০ বাই ৩০ ইঞ্চি মাপের এক-একটি পতাকার দাম পাঁচ থেকে আট টাকা। আবার ১৪ ইঞ্চি বাই ২৪ ইঞ্চি মাপের

পতাকার দাম চার-পাঁচ টাকার মধ্যে। মূলত এই দু’টি মাপের পতাকাই বাজারে পাওয়া যায়। আর আগাম অর্ডার দিলে তৈরি হয়ে আসে বড় পতাকা। পাঁচ ফুটের একটি পতাকার দাম পড়ে প্রায় ৮০ টাকা।

তবে বাংলাতেও বিভিন্ন গ্রামে এখন তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন দলের পতাকা। রোহিত গুপ্ত নামে এক ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘ভিন্ রাজ্যের পাশাপাশি আমাদের এখানেও কিছু জায়গায় পতাকা তৈরি হচ্ছে।’’ সেটা সংখ্যায় কম হলেও পতাকা তৈরির সেই সব গ্রামের নাম বলতে নারাজ শহরের ব্যবসায়ীরা। শুধু

বলছেন, ‘‘২০১১ সালে রাজ্যে পরিবর্তনের পরে তৃণমূলের পতাকার চাহিদা বেড়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন