উদ্ধারে পথ দেখাতে ত্রাতা হল চিনা আলো

ঘটনাস্থলে থাকা এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘ওই সময়ে চায়না লাইট খুব কাজে লেগেছে। এটা অস্বীকার করা যাবে না। তখন ধ্বংসস্তূপের নীচে কে কোথায় আটকে, সেটা খতিয়ে দেখাটাই প্রাথমিক কাজ ছিল। আটকে থাকা কারও যদি প্রাণের স্পন্দন থাকে। হাসপাতালে তাড়াতাড়ি পৌঁছে দিতে পারলে হয়তো বেঁচেও যাবেন।’’

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:৪৯
Share:

মাঝেরহাট সেতুর উদ্ধারকাজ।ফাইল চিত্র।

মাঝেরহাট সেতুর উদ্ধারকাজে সহায় হল চিনও!

Advertisement

ওই বিপর্যয়ের কিছু ক্ষণ পরেই শুরু হয়েছিল বৃষ্টি। তার পরেই ধীরে ধীরে মেঘলা আকাশের হাত ধরে নেমে আসে অন্ধকার। পুলিশ ও পুরসভার তরফে তখনও চার দিকে সার্চলাইট বসানো সম্ভব হয়নি। কিন্তু আলো ছাড়া উদ্ধারকাজ চালানো কোনও ভাবেই সম্ভব ছিল না। পুলিশের তরফে গুটিকয়েক টর্চ নিয়ে আসা হয়েছিল। তত ক্ষণে কয়েক ব্যাটালিয়ন সেনাও নেমে পড়েছে উদ্ধারকাজে। কিন্তু তাদের কাছেও নিজস্ব আলোর ব্যবস্থা ছিল না। আনোয়ার হোসেন নামে খিদিরপুর এলাকার এক ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘আমরাও ওখানে গিয়ে উদ্ধারকাজে হাত লাগাই। কিন্তু অন্ধকার হয়ে যাওয়ায় সেই কাজ প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা হয়েছিল। আচমকা মাথায় এল, আমাদের খিদিরপুর এলাকায় একাধিক মার্কেটে তো চায়না লাইট রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে সেখানকার ব্যবসায়ীদের ফোন করলাম।

ঘটনাস্থল থেকে মোটরবাইকে আট–দশটি ছেলেকে পাঠিয়ে দিলাম।’’ আনোয়ার বলেন, ‘‘ওই সময়ে খিদিরপুরের বিজয় মার্কেট, ফাইভ স্টার মার্কেট-সহ বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ীদের ফোন করে সাহায্য চাইলাম। ওঁরাও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। ব্যবসায়ীরা সকলে মিলে সাড়ে চারশো থেকে পাঁচশো নানা ধরনের টর্চ ও সার্চলাইট পাঠিয়ে দিয়েছেন।’’

Advertisement

আরও খবর: এক বছর অবহেলায় আটকে মাঝেরহাটের ৩ কোটির সংস্কার

ঘটনাস্থলে থাকা এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘ওই সময়ে চায়না লাইট খুব কাজে লেগেছে। এটা অস্বীকার করা যাবে না। তখন ধ্বংসস্তূপের নীচে কে কোথায় আটকে, সেটা খতিয়ে দেখাটাই প্রাথমিক কাজ ছিল। আটকে থাকা কারও যদি প্রাণের স্পন্দন থাকে। হাসপাতালে তাড়াতাড়ি পৌঁছে দিতে পারলে হয়তো বেঁচেও যাবেন।’’

এলাকা সূত্রের খবর, সেতু ভাঙার পরে খিদিরপুর, একবালপুর ও মোমিনপুর এলাকার ছেলেরাও দলে দলে এসে উদ্ধারকাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন। জাকির হুসেন নামে একবালপুরের এক বাসিন্দা বললেন, ‘‘আনোয়ার ভাই ফোন করার পরে আমরা খিদিরপুরের মার্কেটে গিয়ে বাক্সে ভরে টর্চ ও সার্চলাইট নিয়ে এসেছি। ভাঙা সেতুর উপরে পুলিশকর্মীদের সেগুলি দিয়েছি। নীচে থাকা সেনাকর্মীদেরও ওই টর্চ ও সার্চলাইট ছুড়ে দেওয়া হয়। স্থানীয় অনেকেই ওই আলো নিয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। সেতুর ভাঙা অংশের নীচে যেখানে মেট্রোর শ্রমিকদের ঝুপড়ি ছিল, সেখানেই বেশি করে খোঁজা হচ্ছিল।’’

খিদিরপুরের বিজয় মার্কেটের এক ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘শুধু আনোয়ার ভাই নয়, ওই সময়ে অনেক নেতা-মন্ত্রীও আমাদের ফোন করে ওই লাইট চেয়ে পাঠিয়েছিলেন। এত বড় একটা বিপদ। হয়তো কিছু টর্চ বা সার্চলাইট নষ্ট হবে। কিন্তু বেশির ভাগই তো আবার ফেরত আসবে। দুঃসময়ে আমরাও যে উদ্ধারকাজে সাহায্য করতে পারলাম, এটাও একটা বিশেষ অনুভূতি। প্রথমে ওখান থেকে ছেলেরা এসে লাইট নিয়ে যাচ্ছিল। পরে আমরা নিজেরাই মোটরবাইক নিয়ে গিয়ে লাইট পৌঁছে দিয়েছি।’’ আনোয়ার জানান, ছুড়তে গিয়ে ১০-১৫টা লাইট পড়ে ভেঙে গিয়েছে। তবে সকালেই ব্যবসায়ীদের আবার লাইট ফেরত দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফাইভ স্টার মার্কেটের এক ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘ফেরত আসা লাইটগুলি কাপড় দিয়ে মুছে দোকানে সাজানো শুরু করে দিয়েছি। সবই বিক্রি হয়ে যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন