‘গাড়ি নিয়ে উঠতেই দুলে উঠল সেতুটা’

গাড়ির জানালার কাচ তোলা ছিল। তবুও সে শব্দে কানে তালা লাগার জোগাড় হল।

Advertisement

সন্দীপ বাফনা

শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:৫৯
Share:

ভেঙে পড়েছে সেতু। —নিজস্ব চিত্র।

রোজকার রুটিন। দুপুরে পণ্ডিতিয়া রোডের অফিস থেকে বাড়ি আসি লাঞ্চ করতে। মাঝেরহাট সেতু থেকে আমার বাড়ি বড়জোর মিনিট দুয়েক। লাঞ্চ সেরে বিকেলে আবার অফিস যাই। মঙ্গলবার বিকেলেও অফিস যাওয়ার জন্য নিউ আলিপুরের দিকের অ্যাপ্রোচ রোড থেকে সবে মাঝেরহাট সেতুতে উঠেছি। নিজেই গাড়ি চালাচ্ছিলাম। আচমকা বিকট শব্দ। গাড়ির জানালার কাচ তোলা ছিল। তবুও সে শব্দে কানে তালা লাগার জোগাড় হল।

Advertisement

প্রথমে মনে হল, ভূমিকম্প হচ্ছে বুঝি। কারণ, পুরো সেতুটা বিপজ্জনক ভাবে কাঁপছিল। নাকি দুলছিল, কে জানে। তত ক্ষণে চার দিকে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু হয়েছে। তখনও বুঝিনি, রোজ যে সেতু দিয়ে দু’বেলা চার বার যাতায়াত করি, ভেঙে পড়েছে সেই সেতুরই একটা অংশ। আমার গাড়ি থেকে একটু দূরেই ঘটেছে বিপর্যয়।

গাড়িটাকে একটু পিছিয়ে নিয়ে দাঁড় করালাম। নেমেই দেখলাম, চার দিক থেকে সকলেই সেতুর দিকে ছুটে আসছে। পাশ থেকে কেউ এক জন বলল, ‘‘পুল গির গয়া।’’ যা বোঝার বুঝে গিয়েছি তত ক্ষণে। ছুট লাগালাম সামনে, সেতুর উপরের অংশের দিকে। কিছুটা যেতেই দেখলাম, সামনের অংশটা ধসে গিয়েছে। সেতুর ভাঙা অংশটার সঙ্গে অনেক নীচে পড়ে রয়েছে কয়েকটা গাড়ি। একটা মিনিবাসও চোখে পড়ল। চার দিকে তখন ছোটাছুটি। হঠাৎ দেখলাম, সেতুর ভাঙা অংশের নীচ থেকে একটা হাত নড়ছে। দ্রুত নামতে লাগলাম নীচে। সেতুতে তখন প্রচুর মানুষ।

Advertisement

অনেকটা ঘুরে নেমে এসে দেখি, সেতুর দু’দিক থেকেই ট্রাফিক পুলিশ ছুটে এসেছে। স্থানীয় মানুষজনও উদ্ধারকাজ শুরু করেছেন। সেই হাতটাকে আর দেখতে পেলাম না। ধরে নিলাম, হয়তো ইতিমধ্যেই কেউ উদ্ধার করেছেন তাঁকে। আমি নিজে হ্যাম রেডিয়ো ক্লাবের সদস্য। সঙ্গে সঙ্গে এনডিআরএফ এবং আমার ক্লাবে ফোন করে খবরটা দিই। কিছু ক্ষণের মধ্যেই প্রচুর পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়।

আরও পড়ুন: হঠাৎ প্রবল ঝাঁকুনি, খাদে পড়ল গাড়িটা

আরও পড়ুন: খোঁজ মিলছে না মেট্রোর ৩ ঠিকা শ্রমিকের

সেতুর ভাঙা অংশের উপরে উল্টে পড়ে ছিল একটা স্কুটার। পাশে পড়ে ছিলেন এক জন। তাঁর পাশে আরও এক জন বসে। কথা বলার চেষ্টা করলাম। মিনিট খানেক আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন তিনি। কোনও কথা নেই। আচমকা হাউহাউ করে কাঁদতে শুরু করলেন। একটু ধাতস্থ হতে দিয়ে একটা জলের বোতল দিলাম তাঁর হাতে।

সেতুর ভাঙা অংশে অন্তত পাঁচ জনের নিঃসাড় দেহ পড়ে থাকতে দেখলাম। ধরাধরি করে বার করা হল তাঁদের। জনা দশেক জখম পড়ে কাতরাচ্ছিলেন। অ্যাম্বুল্যান্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল তাঁদেরও।

সেতু ভেঙে পড়ার খবর তখন ছড়িয়ে পড়েছে। আমার বাড়ি থেকেই তো সেতুটা দেখা যায়। এ সবের মধ্যেই বাড়ি থেকে ফোন এল। ও-প্রান্ত থেকে একটাই প্রশ্ন, আমি ঠিক আছি তো?

সত্যিই তো, একটা কথা এত ক্ষণ ভাবিই নি! আর কিছু ক্ষণ পরে ঘটনাটা ঘটলে তো...।

(সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অনুলিখন: সুপ্রকাশ মণ্ডল)

(শহরের প্রতি মুহূর্তের সেরা বাংলা খবর জানতে পড়ুন আমাদের কলকাতা বিভাগ।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন