পরমা উড়ালপুল পরিদর্শনে গিয়ে সোমবারই তাতে দু’দিকে যানচলাচল শুরু করতে বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তা সত্ত্বেও পরিস্থিতি বিবেচনা করে মঙ্গলবার উড়ালপুলকে কাজের দিনে একমুখী রাখার সিদ্ধান্তই বহাল রাখলেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ। লালবাজারে এক সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়ে শুধু বললেন, ‘‘ওই উড়ালপুল থেকে মানুষের যাতে সুবিধা হয়, সেটাই মুখ্যমন্ত্রী চান।’’
তবে নতুন উড়ালপুল চালু করলে যান চলাচলে তার কী প্রভাব পড়তে পারে, সেই প্রভাব কী ভাবে সামাল দিতে হবে— তা নিয়ে পুলিশের নির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকার কথা। পরমা উড়ালপুল চালু হলে পার্ক সার্কাসের মোড়ে তা কোন কোন ধরনের সমস্যা তৈরি করতে পারে, পুলিশ তা আগে থেকে আন্দাজ করেছিল কি না এবং করে থাকলে তা নিয়ে আগে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেছিল কি না, সে বিষয়ে এ দিন অবশ্য কোনও সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
শুক্রবার ভূটান থেকে শহরে ফিরে ওই উড়ালপুলের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তিনি উদ্বোধন করে চলে যাওয়ার পরেই উড়ালপুলে সার দিয়ে গাড়ি যানজটে আটকে পড়ে। যার জেরে দক্ষিণ, মধ্য ও পূর্ব কলকাতার একাংশেও যানচলাচল ব্যাহত হয়েছিল। সেই পরিস্থিতি সামাল দিতেই শনিবার রাতে কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক কর্তারা জানিয়েছিলেন, কাজের দিনে যানজট এড়াতে উড়ালপুলে একমুখী গাড়ি চলাচল করবে। লালবাজার সূত্রের খবর, সোমবার ওই উড়ালপুল পরির্দশনে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী পুলিশকর্তাদের কাছে জানতে চান কী কারণে ওই যানজট হচ্ছে। পুলিশকর্তারা তাঁকে বলেন, পার্ক সার্কাসের কাছে উড়ালপুলটির একটি লেন রয়েছে। দু’লেনে গাড়ি এসে এক লেনে নামতে থাকায় সেখানে গাড়ি জমে যাচ্ছে। কংগ্রেস এগজিবিশন রোডে এজেসি বসু উড়ালপুল-মুখী র্যাম্প তৈরি না হলে এই সমস্যা কাটবে না। তার পরেও অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী উড়ালপুলে ই এম বাইপাস থেকে পার্ক সার্কাস এবং পার্ক সার্কাস থেকে বাইপাস— দু’দিকেই যানজট চালু রাখতে বলেছিলেন পুলিশকর্তাদের।
এ দিন লালবাজারে সুরজিৎবাবু আরও বলেন, ‘‘গত কয়েক দিনের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী পরীক্ষামূলক ভাবে আপাতত লক্ষ্মীপুজো পর্যন্ত কয়েকটি নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।’’ লালবাজারের ট্রাফিকের এক কর্তা জানান, প্রথমে মুখ্যমন্ত্রী দু’লেনে গাড়ি চালানোর কথা বললেও পরে পুলিশকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেন। লালবাজার সূত্রের খবর, এর পরেই পুলিশকর্তারা ঠিক করেন যানজট এড়াতে আপাতত বুধবার থেকে লক্ষ্মীপুজো পর্যন্ত সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সায়েন্স সিটি থেকে পার্ক সার্কাসের দিকে গাড়ি চলাচল করবে। আবার দুপুর ১টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত পার্ক সার্কাস থেকে সায়েন্স সিটির দিকে গাড়ি আসবে। রাত ১০টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত উড়ালপুলের দু’দিকেই গাড়ি চলাচল করবে। তবে শনি ও রবিবার ২৪ ঘণ্টাই উড়ালপুলের দু’দিকে যান চলাচল চালু থাকবে।
তবে কংগ্রেস এগজিবিশন রোডে এ জে সি বসু রোড উড়ালপুল-মুখী র্যাম্প তৈরি না হলে পরমা উড়ালপুলের যানজট থেকে সাধারণ মানুষ মুক্তি পাবেন না, তা এ দিন ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছেন পুলিশ কমিশনার। তিনি জানান, এই মুহূর্তে উড়ালপুল আংশিক চালু করা হয়েছে। দু’টি দিক চালু করতে এখনও বছরখানেক সময় লাগবে। সুরজিৎবাবুর কথায়, ‘‘কংগ্রেস এগজিবিশন রোড হয়ে এজেসি বসু রোড উড়ালপুল-মুখী র্যাম্পের কাজ শেষ হতে এক বছর লাগবে।’’ সুতরাং অসমাপ্ত সেতুর কাজ পুরোপুরি শেষ না হওয়া পর্যন্ত যানজটের ভোগান্তি থেকে রেহাই নেই।