প্রতীকী ছবি।
মেট্রোয় এক মহিলা সহযাত্রীর ছবি তোলার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে গণপিটুনি দিল উত্তেজিত জনতা। স্টেশনেই তাঁকে ঘিরে ধরে চলল যথেচ্ছ কিল, চড়, লাথি মারা। পুলিশ পৌঁছনোর আগেই। আরও অভিযোগ, অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্রের বাক্সে মধ্যবয়স্ক ওই ব্যক্তির মাথাও ঠুকে দেয়
উন্মত্ত জনতা।
শনিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে কবি নজরুল মেট্রো স্টেশনে। খবর পেয়ে পুলিশ এসে অভিযুক্ত বিশ্বজিৎ সামন্তকে উদ্ধার করে। মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু পুলিশ আসার আগেই কেন বিশ্বজিৎকে গণপিটুনি দেওয়া হল, সেই প্রশ্ন উঠেছে। যদিও ওই মহিলা দাবি করেছেন, ‘‘আমি অভিযুক্তকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ঘটনা দেখে সহযাত্রীরা উত্তেজিত হয়ে তাঁকে মারধর শুরু করেন। আমি বারণ করলেও কেউ শোনেননি।’’
আরপিএফ এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, শনিবার রাতে ১০টা ১০ মিনিটে শেষ মেট্রোর আগের ট্রেন পৌঁছয় কবি নজরুল স্টেশনে। ট্রেন থামতেই দেখা যায়, চিৎকার করতে করতে এক ব্যক্তিকে টেনে-হিঁচড়ে নামাচ্ছেন এক মহিলা। সঙ্গে আরও কয়েক জন যাত্রী। ওই অবস্থাতেই বছর পঁয়তাল্লিশের ওই ব্যক্তিকে মারতে মারতে স্টেশন মাস্টারের ঘরের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। কেন এ ভাবে এক জনকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, প্ল্যাটফর্মে কর্তব্যরত আরপিএফ কর্মী জানতে চাইলে তাঁকে বলা হয় ওই ব্যক্তি মোবাইলে এক মহিলা সহযাত্রীর ছবি তুলেছিলেন।
অভিযোগ, স্টেশন মাস্টার ও আরপিএফ পাটুলি থানায় খবর দেওয়ার পরেও বিশ্বজিৎকে মারধর করা থামেনি। বরং পুলিশ আসার আগে বাড়তে থাকে কিল-চড়-থাপ্পড়ের মাত্রা। সঙ্গে কটু মন্তব্য। প্রায় আধ ঘণ্টা এমন চলার পরে পাটুলি থানার পুলিশ পৌঁছে ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে।
পরে ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে গড়িয়ার বাসিন্দা, পেশায় একটি নাট্যদলের কর্মী ওই মহিলা জানান, তিনি বেলগাছিয়া থেকে মেট্রোয় উঠেছিলেন। ট্রেন যখন মাস্টারদা সূর্য সেন স্টেশনে ঢুকছে, সে সময়ে হঠাৎ অভিযুক্ত বিশ্বজিতের হাতে থাকা মোবাইলের ফ্ল্যাশ জ্বলে উঠলে তিনি দেখেন, ক্যামেরা তাঁর দিকে তাক করা। প্রথমে ব্যাপারটাকে আমল না দিলেও কিছু পরেই আবার ফ্ল্যাশ জ্বলে ওঠায় মহিলা বুঝতে পারেন, বিশ্বজিৎ তাঁরই ছবি তুলছেন। তিনি সঙ্গে সঙ্গে উঠে ওই ব্যক্তির মোবাইল কেড়ে নেন এবং কবি নজরুল স্টেশনে তাঁকে নিয়ে নেমে পড়েন।
স্টেশনে নামার পরেই ওই মহিলার চিৎকারে মারমুখী হয়ে ওঠেন অন্য যাত্রীরা। শুরু হয় বিশ্বজিতকে ধরে গণপিটুনি। তখন সেখানে ছিলেন স্টেশন মাস্টার ও মাত্র এক জন আরপিএফ কর্মী। তাঁরা উত্তেজিত জনতাকে থামাতে গিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েন। খবর যায় টালিগঞ্জে থাকা আরপিএফ কর্তাদের কাছে। কিন্তু তত ক্ষণে শেষ মেট্রোও চলে যাওয়ায় আরপিএফ কর্তারা গাড়ি করে রওনা হন। তাঁরা আসার আগেই মেরে বিশ্বজিতের মুখ ফাটিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
শেষমেশ রাত ১১টা নাগাদ পাটুলি থানার পুলিশ এবং আরপিএফের কর্তারা পৌঁছে বিশ্বজিতকে আটক করেন। পরে তাঁকে বাঁশদ্রোণী থানার হাতে তুলে দেওয়া হয়। কারণ, ওই মহিলা প্রথম যে স্টেশনে ছবি তোলার কথা পুলিশকে জানিয়েছেন, সেটি বাঁশদ্রোণী থানার আওতায়। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, বিশ্বজিতের মোবাইলটি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।