হাতে মাদুলি। মাদুলি নিয়ে ঢোকা যাবে না ইসিজি-র ঘরে। তাই ওয়ার্ড থেকে ইসিজি-র ঘরের সামনে ট্রলি ঠেলে নিয়ে আসা ওয়ার্ড বয় দাঁড়িয়ে গেলেন দরজার সামনে। দরজা ঠেলে কিছুতেই তিনি ভিতরে ঢুকবেন না।
এনআরএসে ভর্তি বহরমপুরের বিমল দেবনাথের হৃৎপিণ্ডে অস্ত্রোপচার হবে। তার আগে জরুরি ছিল ওই ইসিজি-ইকো। ওয়ার্ড বয় ট্রলি ফেলে চলে যাওয়ায় বিমলবাবুর বোন এবং স্ত্রীকেই ঠেলতে হল ট্রলি।
ওই হাসপাতালেরই সার্জারি বিভাগে ভর্তি তপন রায়ের ডায়ালিসিস হবে, কিন্তু বেঁকে বসেছেন চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরা। এখানে আবার অন্য সমস্যা। তাঁরা জানিয়ে দিয়েছেন, তপনবাবুর সঙ্গে পরিবারের কোনও পুরুষ সদস্য না থাকায় ডায়ালিসিস করাতে নিয়ে যেতে পারবেন না। এমন আজব নিয়ম শোনেননি তপনবাবুর স্ত্রী। বহু অনুরোধের পরে এক ওয়ার্ড বয় ট্রলি ঠেললেন বটে, কিন্তু ডায়ালিসিস ইউনিটের কাছে এমন ভাবে রোগীকে শোয়ালেন যে হাতের চ্যানেল গেল খুলে।
এমন কথা কেন বলেছেন ওয়ার্ড বয়-রা? হাসপাতালের এক কর্তা জানাচ্ছেন, পুরুষ রোগীকে ভর্তি করলে পরিবারের পুরুষ সদস্যকে থাকতেই হবে। না হলে ওয়ার্ড থেকে সরাতে হলে ঝক্কি সামলাবে কে? কিন্তু রোগীর আত্মীয়দের প্রশ্ন, এক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে রোগী নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব ওয়ার্ড বয়দের। এর জন্য তাঁরা সরকার থেকে বেতন পান। তা হলে কোনও রোগীর পরিবারে পুরুষ সদস্য আছে না মহিলা, সে সব নিয়ে ওয়ার্ড বয় প্রশ্ন তুলবেন কেন? কেনই বা রোগীর পরিজনকে এই কাজ করতে হবে?
বারবার হেনস্থার মুখে পড়ে রোগীদের আত্মীয়েরা নালিশ জানান হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষকে। সুপার হাসি দাশগুপ্ত আশ্বাস দিয়েছেন, যে বিভাগের ওয়ার্ড বয়দের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ, সেই বিভাগে তিনি বিষয়টি জানিয়েছেন। ঘটনার তদন্ত হবে। যদিও ওয়ার্ড বয়দের তরফে বলা হয়, রোগীর সংখ্যার থেকে চতুর্থ শ্রেণির সংখ্যা কম হওয়ায় এক জন ওয়ার্ড বয়কে তিন-চার জনের কাজ করতে হয়। ওয়ার্ড বয়ের সংখ্যা না বাড়ালে রোগীদের সমস্যা হবেই।
স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, সরকারি হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের ব্যবহার নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই নানা অভিযোগ আসছে। ঠিক মতো ডিউটি না করা, রোগীর পরিবারের থেকে টাকা চাওয়া-সহ একাধিক অভিযোগ ওঠে তাঁদের বিরুদ্ধে। শুধু এনআরএস নয়, রাজ্যের অন্য সরকারি হাসপাতালের ছবিটাও একই।