Garden Reach Building Collapse

‘আটকে আছি’! রাত ২টোয় ধ্বংসস্তূপে আটকে থাকা শেরু চাচার শেষ ফোন! এখনও তাঁর খোঁজ চলছে

এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গার্ডেনরিচের যে জায়গায় ওই নির্মীয়মাণ আবাসন ভেঙে পড়েছে, শেরুর বাড়ি তার থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে। প্রায় প্রতি দিন রাতেই ওই নির্মীয়মাণ ভবনের কাছে যেতেন তিনি।

Advertisement

সারমিন বেগম

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২৪ ১৭:৩৭
Share:

গার্ডেনরিচের বিপর্যয়স্থল। ছবি: রয়টার্স।

রাত দুটো। গার্ডেনরিচের ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়ে থাকা আবস্থাতেই ফোনে কথা বলেছিলেন স্থানীয় এক বাসিন্দা। তিনি যে বেঁচে রয়েছেন, সে কথাও জানিয়েছিলেন। তবে এখন আর তাঁর কোনও খোঁজ নেই। ওই স্থানীয় বাসিন্দার নাম শেরু নিজ়াম। এলাকায় তিনি পরিচিত ‘শেরু চাচা’ নামে। রাত দুটোর সময় পাঁচ তলা নির্মীয়মাণ বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নীচ থেকেই শেরু ফোনে বলেছিলেন, ‘‘আমি বেঁচে আছি। আমার সঙ্গে আরও কয়েক জন আটকে। তাড়াতাড়ি বার করো।’’ কিন্তু তার পর প্রায় ১৩ ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে। আর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি শেরুর। ফোনও আর লাগছে না। তবে খোঁজ চলছে। শেরুর সঙ্গে যে কয়েক জন ধ্বংসস্তূপের নীচে আটকে ছিলেন, তার মধ্যে দু’জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে। শেরু বেঁচে আছেন তো? এখন এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে তাঁর পরিবার-পরিজনের মনে।

Advertisement

এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গার্ডেনরিচের যে জায়গায় ওই নির্মীয়মাণ আবাসন ভেঙে পড়েছে, শেরুর বাড়ি তার থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে। শেরু ওই ভবনটির প্রোমোটিংয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলেও তাঁদের দাবি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্রায় প্রতি দিন রাতেই ওই নির্মীয়মাণ ভবনের কাছে যেতেন তিনি। আড্ডা মারতেন। পরে আবার বাড়ি ফিরে আসতেন। রবিবার রাতেও ওই নির্মীয়মাণ ভবনের কাছে গিয়েছিলেন শেরু। তখনই বিপর্যয় ঘটে। হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পরে পাঁচ তলা নির্মীয়মাণ ভবন। চাপা পড়েন অনেকে। শেরুও চাপা পড়েন। খোঁজ-খোঁজ রব উঠলে শেরুর মোবাইলে ফোন করেন স্থানীয়দের কেউ কেউ। ফোন ধরে জবাবও দেন তিনি। জানান, তিনি ঠিক আছেন। বেঁচে আছেন। তবে তাড়াতাড়ি উদ্ধার করতে হবে।

স্থানীয় যুবক মেহতাব আলম বলেন, ‘‘বাড়িটি ঢালাই হয়েছিল খালি। তাই অনেকেই গল্প-আড্ডা করতে যেত। শেরু চাচাও আড্ডা মারতে প্রায়ই ওখানে যেতেন। ১-২ ঘণ্টা কাটিয়ে চলে আসতেন। রবিবারও গিয়েছিলেন। রবিবার রাতে জোরে আওয়াজ শুনে দৌড়ে আসি। দেখি ওই আবাসন ভেঙে গিয়েছে। শেরুকে ফোন করেছিলাম। তিনি ফোন ধরে বললেন, ‘আমি বেঁচে রয়েছি। আমাকে এখান থেকে তাড়াতাড়ি বাইরে বার করার ব্যবস্থা করো।’ কিন্তু এখন আর যোগাযোগ করতে পারছি না। ফোন লাগছে না। ওঁর সঙ্গে আরও কয়েক জন ছিলেন। তাঁদের মধ্যে দু’জনের দেহ সকালে উদ্ধার হয়েছে। কিন্তু শেরুর খোঁজ নেই।’’

Advertisement

শেরুকে নিয়ে তাঁর পরিবার এবং স্থানীয়রা উদ্বেগে রয়েছেন বলেও জানিয়েছেন মেহতাব।

উল্লেখ্য, রবিবার রাত ১২টা নাগাদ গার্ডেনরিচের ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের নির্মীয়মাণ বহুতল ভেঙে পড়ে পাশের ঝুপড়ির উপর। বেশ কয়েকটি টালির চালের বাড়ি গুঁড়িয়ে যায়। অনেকে চাপা পড়েন। সেই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত আট জনের মৃত্যু হয়েছে। আহতও হয়েছেন অনেকে। রাতেই সেখানে পৌঁছন কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। ঘটনাচক্রে, তিনি ওই এলাকার বিধায়কও। দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুও ঘটনাস্থলে যান। তাঁরা সারা রাত এলাকায় ছিলেন। বহুতলটি বেআইনি ভাবে নির্মাণ করা হচ্ছিল বলেও মেনে নিয়েছেন ফিরহাদ।

সোমবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কিছু দিন আগে নিজের বাড়িতে পড়ে গিয়ে কপালে চোট পেয়েছেন তিনি। কপালে ব্যান্ডেজ নিয়েই সকাল সকাল গার্ডেনরিচে যান মমতা। এলাকা ঘুরে দেখেন এবং হাসপাতালে গিয়ে আহতদের সঙ্গে কথা বলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন