Man Shot Dead

হামলা হয়েছিল আগেও, বাড়ির সামনেই গুলিতে নিহত দমকলকর্মী

পুলিশি তদন্তে জানা গিয়েছে, এর পিছনে ব্যক্তিগত শত্রুতার যোগ থাকতে পারে। তদন্তের স্বার্থে এর বেশি খোলসা করছে না পুলিশ। স্নেহাশিসের উপরে বছরখানেক আগেও গোরাবাজার এলাকায় একটি হামলা হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২৩ ০৫:৪৯
Share:

স্নেহাশিস রায়। —নিজস্ব চিত্র।

স্কুল ফেরত ১১ বছরের বালিকা বাবার মোটরবাইক থেকে নেমে দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে তেতলায় নিজেদের ফ্ল্যাটের দিকে যাচ্ছিল। হঠাৎ একটা শব্দ এবং বাইরে চিৎকার শুনে সে সিঁড়ির জানলা দিয়ে দেখে, বাবা স্নেহাশিস রায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আছেন। রক্তে ভেসে যাচ্ছে আশপাশ। বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টে নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে লেক টাউন থানা এলাকায়, দমদমের অজয়নগরে। পেশায় দমকলকর্মী, ৩৭ বছরের স্নেহাশিসকে তাঁদের বাড়ির একেবারে সামনে বাইক রাখার সময়ে খুব কাছ থেকে দুষ্কৃতীরা গুলি করে। পুলিশ জানায়, সম্ভবত ঘটনাস্থলেই ওই দমকলকর্মী মারা যান। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। স্নেহাশিসের বুকে দু’টি গুলি বিঁধেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এই ঘটনায় এক জনকে থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আততায়ীরা পরিবারের পরিচিত বলেই অনুমান পুলিশের।

Advertisement

স্নেহাশিসের স্ত্রীকে তাঁদের একমাত্র মেয়েই প্রথম খবরটা দেয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। ‘‘বাবার কী হয়েছে মা, বাবা মাটিতে পড়ে আছে’’— মেয়ের মুখে এটুকু শুনেই স্নেহাশিসের স্ত্রী অ্যাপেলি হন্তদন্ত হয়ে নেমে আসেন বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, যশোর রোডে বাঙুরের পেট্রল পাম্পের পিছনে অজয়নগর তল্লাটে স্নেহাশিসদের ফ্ল্যাটবাড়ির সামনে চাপ চাপ রক্ত।

পুলিশি তদন্তে জানা গিয়েছে, এর পিছনে ব্যক্তিগত শত্রুতার যোগ থাকতে পারে। তদন্তের স্বার্থে এর বেশি খোলসা করছে না পুলিশ। তবে পুলিশি সূত্রে জানা গিয়েছে, স্নেহাশিসের উপরে বছরখানেক আগেও গোরাবাজার এলাকায় একটি হামলা হয়। সে বার তাঁর মোটরবাইকে অন্য এক জন বাইকচালক ধাক্কা মারে বলে অভিযোগ। তখন গোরাবাজার দমকল কেন্দ্রে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী হিসাবে স্নেহাশিস কর্মরত ছিলেন। পুলিশি সূত্রের খবর, পরের দিন ক্ষমা চাওয়ার নাম করে সেই ব্যক্তি স্নেহাশিসকে ডেকে খুনের চেষ্টা করে। গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় তিনি বেঁচে যান। দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু এ দিন রাতে স্নেহাশিসের বাড়িতে যান। তিনি বলেন, ‘‘স্নেহাশিসের উপরে হামলার পরে ওঁর সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। ওঁর কথা শুনেই আমি ওঁকে গোরাবাজার থেকে বদলি করে নিউ টাউনে পাঠাই। তার পরেও যে এত বড় দুঃসাহসী হামলা ঘটবে, তা আঁচ করা যায়নি।’’ বাস্তবিক, এত বড় হামলার পরেও পুলিশ কতটা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করেছিল, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। আগে এক বার ‘আক্রান্ত’ দমকলকর্মীর নিরাপত্তার জন্য কী করা হয়েছিল, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

Advertisement

স্নেহাশিস তাঁর স্ত্রী, একমাত্র মেয়ে এবং মা মঞ্জু রায়ের সঙ্গে থাকতেন। সাধারণত, রোজই তিনি মেয়েকে স্কুল ছুটির পরে মোটরবাইকে নিয়ে বাড়ি ফিরতেন। এমনটাই জানতে পেরেছে পুলিশ। পুলিশের অনুমান, অনেক দিন ধরে স্নেহাশিসের গতিবিধি লক্ষ করার পরেই দুষ্কৃতীরা পরিকল্পনা মাফিক হামলার ছক কষে। এ দিনের হামলার সময়ে দু’জন ছিল বলে পুলিশ জানায়। তারা সম্ভবত অন্য একটি মোটরবাইকে স্নেহাশিসকে অনুসরণ করছিল। মেয়ে মোটরবাইক থেকে নেমে যাওয়ার পরেই সুযোগ বুঝে তারা ওই দমকলকর্মীকে গুলি করে বলে অভিযোগ। এ দিন সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, স্নেহাশিসের মা বাড়িতেই রয়েছেন। স্ত্রী তখন হাসপাতালে। স্নেহাশিসের মেয়েকে প্রতিবেশীরা আগলে রেখেছেন বলে জানা যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন