Sulekha

Kolkata: কলকাতার ‘সুলেখা’র নাম রাখেন গাঁধীজি, ভালবাসা দেন সত্যজিৎ, প্রাণের অক্সিজেন দিল করোনা

‘স্বদেশি কালি’ বার্তা নিয়ে ১৯৩৪ সালে যাত্রা শুরু। সুন্দর লেখা যায় তাই সুলেখা, বলেছিলেন গাঁধীজি। সংস্থার প্রতিষ্ঠার পিছনেও রয়েছে কাহিনি।

Advertisement

পিনাকপাণি ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২১ ১০:২৭
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

এই প্রজন্ম তাকে বড় একটা চেনে না। কিন্তু দীর্ঘ সময় বঙ্গ জীবনের প্রতিদিনের সঙ্গী ছিল সুলেখা। তাকে ছাড়া চলত না এই ভারতের অনেক লেখকেরও। তবে বাঙালির গর্ব করার কারণ অনেক। ঝর্না কলমের কালি সুলেখার কথা বাঙালি পড়েছে সত্যজিত রায়ের কলমেও। কিন্তু সময়ের স্রোতে বারবার থমকে গিয়েছে। আবার ঘুরেও দাঁড়িয়েছে। এ বার করোনা কাল সেই ঘুরে দাঁড়ানোটাকে আরও একটু পোক্ত করল। সময়ের চাহিদা বুঝে স্যানিটাইজার, হ্যান্ড ওয়াশ, মাস্ক তৈরি করে অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছে সুলেখা। সংস্থা সূত্রে খবর, এখন সুলেখায় কাজ করেন ৫০ জনের মতো কর্মী। লকডাউনের সময় বেতন নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। কিন্তু শেষবেলায় এই সব উৎপাদন ও বিক্রি সেই দুঃসময় রুখে দিয়েছে।

Advertisement

সুলেখার বর্তমান ডিরেক্টর কৌশিক মৈত্র বলেন, ‘‘ঐতিহ্যের নাম সুলেখা। সময়ের বদল সংস্থাকে অনেক ওঠাপড়ার মধ্যে নিয়ে গিয়েছে। শুধু কালি প্রস্তুত করে টিকে থাকা সত্যিই কঠিন হয়ে পড়ছিল। অন্যান্য উৎপাদন শুরু করতে হয়। করোনাকালে স্যানিটাইজার, মাস্ক, হ্যান্ডওয়াশের উৎপাদন ও বিক্রি বেড়েছে বলে সংস্থা নিঃসন্দেহে অনেকটা অক্সিজেন পেয়েছে।’’

সুন্দর লেখা যায় তাই ‘সু’ লেখা। এই ভেবেই নাম রেখেছিলেন গাঁধীজি।

‘স্বদেশি কালি’ বার্তা নিয়েই ১৯৩৪ সালে যাত্রা শুরু হয়। সুন্দর লেখা যায় তাই ‘সু’ লেখা। এই ভেবেই নাম রেখেছিলেন গাঁধীজি। সংস্থার প্রতিষ্ঠার পিছনেও রয়েছে কাহিনি। স্বাধীনতা সংগ্রামী ননীগোপাল মৈত্র প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দি থাকার সময় পদার্থবিদ্যায় স্নাতকোত্তর পাশ করেন। কারামুক্তির পরে তৎকালীন প্রেসিডেন্সি কলেজে লেখাপড়া করেন। বিদেশি কালির একচেটিয়া বাজার ভাঙতে ভাই শঙ্করাচার্য মৈত্রের সঙ্গে স্বদেশি কালি তৈরির উদ্যোগ নেন। ধীরে ধীরে একচেটিয়া ব্যবসা শুরু হয়ে যায় সুলেখার। আম বাঙালির কাছে তো বটেই, দেশ জুড়েও চাহিদা তৈরি হয় সুলেখা কালির। বাংলার বাইরেও উৎপাদন শুরু হয়। জনপ্রিয়তা এতটাই বাড়ে যে, সত্যজিৎ তাঁর ফেলুদার কাহিনিতে একাধিকবার সুলেখা কালির কথা লিখেছেন। ‘জনঅরণ্য’ ছবিতে দেখাও গিয়েছে সুলেখা কালির দোয়াত।

Advertisement

সত্যজিৎ রায়ের লেখার সুলেখা।

তবে বলপেনের আবির্ভাব ও জনপ্রিয়তা ক্রমেই কোণঠাসা করতে শুরু করে সুলেখাকে। বিক্রি কমতে কমতে এমন জায়গায় যায় যে, ১৯৮৮ থেকে ২০০৬ কারখানা বন্ধ ছিল। উৎপাদন ফের শুরু হয় ২০০৬-এর শেষে। এর পরে একটু একটু করে সংস্থার চরিত্রে বদল আনার উদ্যোগ নেন কর্তৃপক্ষ। বল পেন, পেন্সিল, ইরেজার, সাবান, ফিনাইল, ন্যাপথালিনের পাশাপাশি শুরু হয় সৌর লণ্ঠন তৈরি ও বিপনন।

আবার ধাক্কা আসে করোনা ও তার সঙ্গে আসা লকডাউনের জেরে। সেই সময়ে সংস্থা ও কর্মীদের বাঁচাতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরির অনুমোদন নিয়ে শুরু হয় উৎপাদন। সঙ্গে মাস্ক, পিপিই কিট, হ্যান্ড ওয়াশ তৈরি। নিজেদের দোকান ছাড়াও পাইকারি হিসেবে বিভিন্ন সংস্থাকে বিক্রি করা শুরু করে সুলেখা। তবে কালিতে নির্ভর করেই হাসতে চায় সুলেখা। কৌশিক বলেন, ‘‘স্যানিটাইজার, মাস্ক, হ্যান্ড ওয়াশের উপরে অল্প সময়ের জন্য নির্ভর করলেও ইতিমধ্যেই আমাদের মূল উৎপাদন ঝর্না কলমের কালি। নানা প্যাকেজিংয়ের মাধ্যমে গোটা দেশে নতুন করে কালির চাহিদা তৈরির চেষ্টা চলছে। আগামী দিনে আমরা চাইছি সুলেখা কালি নিয়েই ফের কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারীতে পৌঁছে যাব। তার পরিকল্পনা ও প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গিয়েছে।’’ তবে অসময়ে পাশে দাঁড়ানো হাত পরিষ্কারের স্যানিটাইজারের হাত ছাড়তে চায় না অনেকের হাতে কলম ধরানো সুলেখা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন