‘ফ্রি’ হেলমেট পেতে গিয়ে বেহাত লাইসেন্স!

হেলমেট ছাড়া মোটরবাইক চালালে পুলিশের জরিমানার মুখে পড়তে হয়। কিন্তু, সোমবার দিনভর কলকাতায় এমন অনেক ‘অবাধ্য’ বাইকচালক জরিমানা দিয়ে লাভবানই হয়েছেন। কারণ, ১০০ টাকা খসলেও মাথায় উঠেছে দামি হেলমেট!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৯ ০১:১৬
Share:

আহ্লাদিত: হেলমেট উপহার পেয়ে এক মোটরবাইক আরোহী। সোমবার, উল্টোডাঙায়। ছবি: সুমন বল্লভ

এ যেন নরুণের বদলে নাক!

Advertisement

হেলমেট ছাড়া মোটরবাইক চালালে পুলিশের জরিমানার মুখে পড়তে হয়। কিন্তু, সোমবার দিনভর কলকাতায় এমন অনেক ‘অবাধ্য’ বাইকচালক জরিমানা দিয়ে লাভবানই হয়েছেন। কারণ, ১০০ টাকা খসলেও মাথায় উঠেছে দামি হেলমেট!

পথ-নিরাপত্তা সপ্তাহ উপলক্ষে এ দিন এমনই প্রচারে নেমেছিল কলকাতা পুলিশ এবং একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। পুলিশের খবর, উল্টোডাঙা ও ডায়মন্ড হারবার ট্র্যাফিক গার্ডে ৪০টি করে হেলমেট দিয়েছিল সংস্থাটি। সেগুলিই বিলি করা হয়েছে। প্রতিটি হেলমেটের দাম ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা।

Advertisement

অনেকে অবশ্য বলছেন, এমন প্রচার নিঃসন্দেহে ভাল। কিন্তু বহু চালক তো এর অন্যায্য সুযোগও নিতে পারেন। পুলিশ গ্রেফতার করে হেলমেট দিচ্ছে জানতে পারলে নিজের হেলমেট বাড়িতে রেখে বেরোলেই তো ‘উপহার’ নিশ্চিত। ১০০ টাকা জরিমানার পাশাপাশি উর্দিধারীদের অল্প বকুনিও গায়ে মাখবেন না অনেকে।

যদিও বাইকে চেপে ‘বেপরোয়া’ হতে চেয়ে এ দিন ফাঁপরেও পড়েছেন দুই যুবক। ফুলবাগান মোড়ে তখন হেলমেট বিলি চলছে। দুই যুবক বিনা হেলমেটে বারবার বাইক নিয়ে চক্কর দিচ্ছিলেন। শেষমেশ এসে দাঁড়ালেন পুলিশের নাকের ডগায়। কিন্তু বিধি বাম! হেলমেট তো মিললই না, উল্টে লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত হল তাঁদের। পাশে দাঁড়ানো এক সার্জেন্টকে বলতে শোনা গেল, ‘‘আমাদের টুপি পরিয়ে হেলমেট নেওয়া অত সহজ নয়।’’ বেহালাতেও একই অভিজ্ঞতা হয়েছে কয়েক জন বাইক আরোহীর।

পুলিশকর্তারা বলছেন, কিছু লোক যে বিনি পয়সার হেলমেট নিতে হাজির হবেন, তা বুঝেছিলেন তাঁরা। তাই একটি মোড়ে বেশি ক্ষণ দাঁড়াননি। ফলে যাঁরা পরে খবর পেয়ে খালি মাথায় বাইক নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন, তাঁদের পকেট থেকে শুধু জরিমানার টাকাই খসেছে। আর যাঁরা হেলমেট সঙ্গে রেখেও মাথায় তোলেননি, তাঁরা পড়েছেন বেশি মুশকিলে। যেমন, ফুলবাগানের রাজেশ গর্গ স্কুটি নিয়ে বেরিয়েছিলেন। হেলমেট থাকলেও পরেননি। ধরা পড়ে কাঁচুমাচু মুখ করে বলেছেন, ‘‘হেলমেট পরা উচিত। তা হলে অনেক মৃত্যু ঠেকানো যাবে।’’ যদিও এই বোধোদয় স্থায়ী হবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান পুলিশের অনেকেই। ট্র্যাফিক সার্জেন্টদেরও অভিজ্ঞতা, ধরা পড়লে অনেকেই ভাল-ভাল কথা বলেন। কিন্তু নিয়ম ভেঙে একই মোড়ে একই ব্যক্তি একাধিক বার ধরা পড়েছেন, এমন উদাহরণও আছে।

এ দিন নিয়ম ভেঙে রাস্তা পেরোনো পথচারীদের ফুল দিয়ে ‘গাঁধীগিরিও’ করেছেন আইনরক্ষকেরা। সঙ্গে চমক ছিল মোটরবাইক ‘সিমুলেটর’। ধর্মতলা মোড়ে এক মহিলা স্কুটিচালককে পাকড়াও করেছিল পুলিশ। জিজ্ঞাসা করে জানা গেল, এ দিনই প্রথম স্কুটি চালিয়ে আমতা থেকে কলকাতায় এসেছেন তিনি। তাঁকে মোটরবাইক সিমুলেটরে (চালক কতটা সাবলীল ভাবে রাস্তায় বাইক চালাতে সক্ষম, তা চার দেওয়ালের মধ্যেও পরীক্ষা করা যায়) বসিয়ে পরীক্ষা নিতে ‘লেটার’ পেয়ে পাশ করলেন তিনি। তবে যাঁরা পাশ করতে পারেননি বা টেনেটুনে পাশ করেছেন, তাঁদের বকুনি জুটেছে। পরে অবশ্য ভুলগুলি শুধরেও দিয়েছেন পুলিশ আধিকারিকেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন