বহু কোটির ফাঁকি ট্রেড লাইসেন্সে

পুর আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, একেবারেই তা নয়। তা হলে? পুরসভার এক কর্তার কথায়, ‘‘দোকান চালাচ্ছেন, কিন্তু লাইসেন্স-ফি দিচ্ছেন না, এমন ব্যবসায়ীর সংখ্যাই এখন বেশি।

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৭ ০২:০৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

এ শহরে ট্রেড লাইসেন্স নেওয়া ব্যবসায়ীর সংখ্যা প্রায় সাত লক্ষ। এর মধ্যে সাড়ে তিন লক্ষ ব্যবসায়ী টাকা জমা দিয়ে তার নবীকরণ করেছেন। কিন্তু বাকি সাড়ে তিন লক্ষ ব্যবসায়ী গত কয়েক বছর ধরে তা করছেন না। এর জন্য বছরে অন্তত ৪৫ কোটি টাকা কম আয় করছে পুর প্রশাসন। এমনই তথ্য মিলেছে পুরসভার নথি থেকে।

Advertisement

তা হলে কি ধরে নিতে হবে ওই সব ব্যবসায়ী তাঁদের দোকানপাট বন্ধ করে দিয়েছেন?

পুর আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, একেবারেই তা নয়। তা হলে? পুরসভার এক কর্তার কথায়, ‘‘দোকান চালাচ্ছেন, কিন্তু লাইসেন্স-ফি দিচ্ছেন না, এমন ব্যবসায়ীর সংখ্যাই এখন বেশি। আসলে পুরসভার এক শ্রেণির কর্মীদের যোগসাজশেই বছরের পর বছর এ সব চলছে। কোনও ক্ষেত্রে মদত জোগাচ্ছেন একাধিক রাজনৈতিক নেতাও। তাঁদের সহায়তায় পুর আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ব্যবসা চালানো হচ্ছে।’’ যদিও মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, এমন কোনও খবর তাঁর জানা নেই। তিনি বলেন, ‘‘খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।’’

Advertisement

পুরসভা সূত্রের খবর, কলকাতা শহরে যে কোনও ধরনের ব্যবসা চালাতে গেলে পুরসভার কাছ থেকে লাইসেন্স নেওয়াটা বাধ্যতামূলক। হোটেল, রেস্তোরাঁ, শপিং মল, বেসরকারি স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে মুদিখানা, স্টেশনারি, জামাকাপড়, লোহালক্কড়, বালি-সিমেন্ট বা মিষ্টির দোকান— সবেতেই লাইসেন্স নিতে হয়। এর সঙ্গে খাবারের দোকানের জন্য আলাদা করে ফুড লাইসেন্সও নিতে হয়। সম্প্রতি পুরসভার এক নথি থেকে জানা গিয়েছে, ২০১৬-’১৭ সালে লাইসেন্স-ফি বাবদ পুরসভার আয় হয়েছে প্রায় সাড়ে ৫১ কোটি টাকা। এবং তা ওই সাড়ে তিন লক্ষ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে। যাঁরা নিয়মিত লাইসেন্স-ফি দিয়ে বছর বছর নবীকরণ করে চলেছেন।

আর বাকি সাড়ে তিন লক্ষের জন্য কী করছে পুরসভা?

এখানেই নীরব পুরসভার পদস্থ কর্তারা। তবে পুরসভা সূত্রে যে তথ্য মিলেছে, তা অবাক করার মতোই। বলা হয়েছে, কাজের অগ্রগতি (টার্গেট) দেখানোর জন্য ওই সাড়ে তিন লক্ষকে হিসেবের মধ্যেই আনা হয় না। ‘ব্লক’ করে রাখা হয়েছে। যাতে দেখানো যায়, সাত লক্ষ নয়, মোট সাড়ে তিন লক্ষ ব্যবসায়ী রয়েছে এবং সকলেই ফি দিচ্ছেন। অর্থাৎ, সাফল্যের হার একশো শতাংশ। পুরসভার এক অফিসারের কথায়, ‘‘লাইসেন্স নবীকরণ না করানো ব্যবসায়ীদের সংখ্যাটা ২০০১-’০২ সাল থেকে বাড়তে বাড়তে ২০১৫-’১৬ নাগাদ সাড়ে তিন লক্ষে পৌঁছেছে। তখনই পুর প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেয়, ওই হিসেব সামনে আনার দরকার নেই। তাঁদের ‘ব্লক’ করে দেওয়া হয়।’’ ওই অফিসার জানান, সাড়ে তিন লক্ষ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বছরে ৫১ কোটি টাকা ফি বাবদ আয় হয়েছে পুরসভার। ফি বকেয়া থাকা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালালে আরও ৪৫ কোটি টাকা আয় হতে পারত পুরসভার।

তা হলে পুর প্রশাসন উদ্যোগী হচ্ছে না কেন?

ফি আদায়ের কাজে যুক্ত একাধিক কর্মীর অভিযোগ, জেমস লং সরণির একটি বেসরকারি কলেজ অনেক দিন ধরেই লাইসেন্স-ফি দিচ্ছে না। তাগাদা করতে গিয়ে চরম অসুবিধায় পড়তে হয়েছিল। অভিযোগ, কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফে একাধিক ব্যক্তি হুমকি দিয়ে জানান, কলেজে ঢুকলে ছবি তুলে ‘উপরতলায়’ পাঠিয়ে দেওয়া হবে। ‘উপরতলা’ যে কে, তা আঁচ করে আর ওই পথ মাড়াননি সেই কর্মীরা।

আইনত কি কিছু করার নেই?

পুরসভার আইন দফতরের এক আধিকারিক জানান, আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যেতেই পারে। সে ব্যাপারে প্রস্তাবও একাধিক ক্ষেত্রে তাঁরা দিয়েছেন। কিন্তু লাইসেন্স-ফি বকেয়া রাখা সাড়ে তিন লক্ষ ব্যবসায়ীর জন্য পুরবোর্ডের কর্তাদের ভূমিকাই প্রধান। তাঁরা কেবল প্রস্তাব দিতে পারেন। প্রয়োগ করার দায় কর্তাদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন