বিধির তোয়াক্কা না করেই চলছে বহু হোটেল

নিউ মার্কেট এলাকার এক হোটেল থেকে জোড়া মৃতদেহ লোপাটের ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে শহরের ছোট ছোট হোটেল ও গেস্ট হাউসগুলির নিরাপত্তা নিয়ে।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৮ ০০:৫৯
Share:

অর্চনা পালংদারের দেহ।

নিউ মার্কেট এলাকার এক হোটেল থেকে জোড়া মৃতদেহ লোপাটের ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে শহরের ছোট ছোট হোটেল ও গেস্ট হাউসগুলির নিরাপত্তা নিয়ে। উল্টোডাঙার বাসিন্দা অর্চনা পালংদার ও তাঁর সঙ্গী বলরাম কেশরী দীর্ঘদিন ধরেই এসএন ব্যানার্জি রোডের ওই হোটেলে যাওয়া-আসা করতেন বলে তদন্তে জেনেছে পুলিশ। অথচ, হোটেলের রেজিস্টারে তাঁদের উপস্থিতির কোনও প্রমাণ নেই। এমনকি, তাঁদের পরিচয়পত্রের কোনও প্রতিলিপিও মেলেনি হোটেলের কাছে। এই ঘটনার সূত্র ধরেই পুলিশ এখন চিন্তায় পড়েছে ধর্মতলা ও সংলগ্ন এলাকার বিভিন্ন হোটেলের কাজকর্ম নিয়ে। পুলিশের অভিযোগ, ছোটখাটো অনেক হোটেলই আবাসিকদের পরিচয়পত্র দেখতে চায় না। রেজিস্টারে নামও লেখানো হয় না। যদি বা লেখানো হয়, তা ভুয়ো কি না, তা যাচাই করার কোনও উপায় পরবর্তীকালে থাকে না।

Advertisement

উল্টোডাঙার গৃহবধূ অর্চনা ও তাঁর সঙ্গী বলরামের দেহ এস এন ব্যানার্জি রোডের যে হোটেল থেকে লোপাট হয়েছিল, ঠিক তার উল্টো দিকের বাড়ির দোতলায় রয়েছে একটি গেস্ট হাউস। রবিবার দুপুরে সেই গেস্ট হাউসে যাওয়া হল ভাড়া নেওয়ার অছিলায়। কোনও পরিচয়পত্র ছাড়াই। গেস্ট হাউসের এক কর্মী আর এক কর্মীকে ঘর দেখাতে নির্দেশ দিলেন। তার পরে বললেন, ‘‘এখন থাকতে পারেন। কিন্তু হোটেল ছা়ড়ার আগে পরিচয়পত্রের প্রতিলিপি জমা দিতে হবে।’’

কলকাতা পুরসভা লাগোয়া ফুটনানি চেম্বার ও তার আশপাশে প্রায় ২০টি হোটেল এবং গেস্ট হাউস রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, এই সমস্ত হোটেল বা গেস্ট হাউসে থাকতে হলে সচিত্র সরকারি পরিচয়পত্রের প্রতিলিপি জমা দিতে হয়। দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ বা চেন্নাইয়ের মতো দেশের অন্যান্য বড় শহরেও যে কোনও হোটেলে থাকতে গেলে এটাই নিয়ম। এ ছাড়াও বেশ কয়েকটি বিষয়ের উপরে সেখানে গুরুত্ব দেওয়া হয়। যেমন, স্থানীয় কোনও বাসিন্দা এলে থাকতে দেওয়া হয় না। তা ছাড়া, প্রত্যেক আবাসিকের ছবি তুলে রাখাটাও অনেক জায়গায় বাধ্যতামূলক। অভিযোগ, ধর্মতলা চত্বরের ছোট হোটেল বা গেস্ট হাউসগুলিতে এই সমস্ত কোনও নিয়মই মানা হয় না।

Advertisement

সেই কারণেই স্থানীয় বাসিন্দা হওয়া সত্ত্বেও অর্চনা পালংদার তাঁর সঙ্গীকে নিয়ে দিনের পর দিন ওই হোটেলে থাকতে পেরেছেন। তা-ও কোনও পরিচয়পত্র ছাড়াই। লালবাজারের এক কর্তার কথায়, ‘‘টাকা রোজগারের লোভে হোটেল যদি কাউকে অবৈধ ভাবে থাকতে দেয়, তা হলে তো ধরে নিতে হবে, সেখানে নানাবিধি বেআইনি কাজকর্মই ঘটতে পারে। ধর্মতলা চত্বরের একটি হোটেলের ঘটনাই আমাদের সেখানকার বাকি হোটেলগুলিকে নিয়ে ভাবিয়ে তুলেছে।’’ যে হোটেল থেকে অর্চনা ও বলরামের দেহ লোপাট হয়েছে, তার ঢিল ছোড়া দূরত্বেই নিউ মার্কেট থানা। প্রশ্ন উঠেছে, হোটেল থেকে জোড়া দেহ গায়েব হয়ে গেল, অথচ পুলিশ কিছুই টের পেল না? নিউ মার্কেট থানার ওসি পবিত্র মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘হোটেলের মধ্যে কে কী করছে, তা আমাদের পক্ষে নজরে রাখা অসম্ভব।’’ তবে থানার পাশের হোটেল ও গেস্ট হাউসগুলিতে পুলিশের তরফে নিয়মিত তল্লাশি চালানো হয় বলেই দাবি করেছেন পবিত্রবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন