বিজ্ঞাপনের দেখা নাই, বাজেটে কোপ বহু বড় পুজোর

বিজ্ঞাপনের আশা ছেড়ে উল্টোডাঙা মেন রোডে আবার এখনই হোর্ডিংয়ের জন্য লাগানো বাঁশ খুলে ফেলার ভাবনাচিন্তা করছেন কবিরাজ বাগান পুজো কমিটির লোকজন।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৯ ০১:০৬
Share:

কর্পোরেট স্পনসরের অভাবে শহরের সব পুজো ঘিরেই এ বার বাজেট ঘাটতির হাহাকার।—ফাইল চিত্র।

আজ, শুক্রবার দেবীর বোধন। অথচ জমজমাট রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ে এখনও দু’টি গেটের বিজ্ঞাপনী বুকিংই পায়নি দেশপ্রিয় পার্কের পুজো কমিটি। অন্য বার যেখানে ১৬টি গেট হয়, এ বার অবস্থা বুঝে প্রথমেই সেই সংখ্যা কমিয়ে আট করা হয়েছিল বলে জানাচ্ছেন পুজো উদ্যোক্তারা। তা-ও ভরানো যাচ্ছে না! কোনওমতে ছ’টি গেটের বিজ্ঞাপন পাওয়া গিয়েছে।

Advertisement

বিজ্ঞাপনের আশা ছেড়ে উল্টোডাঙা মেন রোডে আবার এখনই হোর্ডিংয়ের জন্য লাগানো বাঁশ খুলে ফেলার ভাবনাচিন্তা করছেন কবিরাজ বাগান পুজো কমিটির লোকজন। তাঁরা বলছেন, ‘‘বাঁশ পোঁতা হয়েছে, অথচ হোর্ডিং নেই। ওগুলো আর ভরবেও না। বাঁশের জন্য রাস্তায় গর্ত করায় পুরসভাকে অকারণ ‘রেস্টোরেশন চার্জ’ দিতে হবে। তার চেয়ে বাঁশগুলো খুলে ফেলাই ভাল।’’

উপরের উদাহরণ দু’টি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। কর্পোরেট স্পনসরের অভাবে শহরের সব পুজো ঘিরেই এ বার বাজেট ঘাটতির হাহাকার চলছে বলে জানাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। তাঁদের দাবি, গত বারের চেয়ে কোনও পুজোর বাজেট কমাতে হয়েছে ৩০ শতাংশ। কেউ আবার এক ধাক্কায় বাজেট অর্ধেক করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। গড়িয়াহাট মোড়ে ভরেনি একের পর এক হোর্ডিংয়ের জন্য লাগানো বাঁশ। একই অবস্থা ঢাকুরিয়া সেতুর। হোর্ডিং-বিজ্ঞাপনী গেট তো বটেই, কমে গিয়েছে পুজো মণ্ডপ সংলগ্ন স্টলের বরাতও। শহরের যে সব পুজো ঘিরে মেলা হয়, সেখানেও মেলার বরাত পেতে এ বার উদ্যোক্তাদের কালঘাম ছুটেছে বলে খবর।

Advertisement

নাকতলা উদয়নের মতো ওজনদার পুজো এ বার বাজেট কমিয়েছে ৩০ শতাংশ। ওই পুজো কমিটির সাধারণ সম্পাদক বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্ত বললেন, ‘‘কোনও বড় স্পনসর নেই। আগের বার যাঁরা এক লক্ষ টাকায় ২০টা ব্যানার দিয়েছিলেন, এ বার তাঁরাই পাঁচটা ব্যানারের খরচ ধরাচ্ছেন। কোনওমতে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছি।’’ প্রায় একই অবস্থা ত্রিধারা সম্মিলনীর। অন্যতম উদ্যোক্তা দেবাশিস কুমার বললেন, ‘‘গত বার যা খরচ হয়েছে, তার থেকে ১০ শতাংশ বেশি খরচ ধরে এগোনো হয়। এ বার তো দেখছি ২৫-৩০ শতাংশ বাজেট ঘাটতি হয়ে গেল।’’ বোধন শুরুর মুখেও তাঁর গলায় আক্ষেপ, ‘‘কত গেট ফাঁকা পড়ে। কর্পোরেট বিজ্ঞাপন তো এলই না। শুধু মানুষের চাঁদায় এত বড় পুজো নামানো যায় না!’’

বিধান সরণির বিজ্ঞাপন না পাওয়া গেটগুলো দেখে আবার চিন্তা যাচ্ছে না হাতিবাগান সর্বজনীনের আহ্বায়ক শাশ্বত বসুর। হাতিবাগানের ওই পুজোকর্তা নিজে ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের সাধারণ সম্পাদক। প্রায় ৪০০ পুজো ওই সংগঠনের সদস্য। শাশ্বতবাবুর কথায়, ‘‘আবেগ আছে বলে অনেক পুজো এ বারও টিকে গেল। টেলিকম সংস্থাগুলি পুরো হাত তুলে নিয়েছে। যেখানে যেটুকু বিজ্ঞাপন এসেছে, তা-ও স্থানীয়। প্রসাধনী এবং তেল-সাবানের উপরেই এ বার পুজো হচ্ছে।’’

একডালিয়া এভারগ্রিন এবং শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবও জানাচ্ছে, পরিস্থিতি সামাল দেওয়া গিয়েছে কোনওমতে। শ্রীভূমির সাধারণ সম্পাদক দিব্যেন্দু গোস্বামীর কথায়, ‘‘প্রচুর সংস্থা হাত তুলে নিয়েছে। কিছু সংস্থা আবার হাত বাড়িয়েও দিয়েছে।’’ একডালিয়ার অন্যতম পুজো উদ্যোক্তা, প্রাক্তন মেয়র সুব্রত মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘সবাইকে ডুবিয়েছে কেন্দ্রের নীতি। প্রধানমন্ত্রী শুধু বড় বড় ভাষণ দিচ্ছেন, আর মানুষ মরছে।’’ মন্দার সঙ্গে এই পরিস্থিতির জন্য কেন্দ্রের একাধিক নীতিকেও দায়ী করলেন কনফেডারেশন অব ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুশীল পোদ্দার। তাঁর কথায়, ‘‘অটোমোবাইল এবং অনুসারী শিল্পের মন্দার কারণে এই সংস্থাগুলো হাত তুলে নিয়েছে। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কেন্দ্রের একের পর এক নীতি। বাজারের শিরদাঁড়াই তো ভেঙে দিয়েছে। বিজ্ঞাপন আসবে কোথা থেকে?’’

দেশপ্রিয় পার্কের পুজো উদ্যোক্তা সুদীপ্ত কুমার বলছিলেন, ‘‘এ বার আর কিছু হবে না। সামনের বার ঘাটতি পোষানোর চেষ্টা করাই ভাল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন