দমদমে কাঠের ফুটব্রিজে গর্ত।
দমদম স্টেশন, শনিবার বেলা এগারোটা। চার নম্বর প্ল্যাটফর্মে লোকাল ট্রেন ঢুকতেই তা ধরতে ওভারব্রিজ দিয়ে দ্রুত হাঁটছিলেন কল্যাণীর বাসিন্দা অশোক বসু। সঙ্গে স্ত্রী ও সাত বছরের ছেলে। তাড়াহুড়োর জেরে হুমড়ি খেয়ে পড়ল অশোকবাবুর ছেলে। দেখা গেল, ওভারব্রিজের দুই কাঠের পাটাতনের মাঝে বিপজ্জনক ভাবে ফাঁক হয়ে রয়েছে। সেই ফাঁকে পা পড়ে গিয়েই ঘটেছে দুর্ঘটনা। আশপাশের যাত্রীরা সাহায্যের জন্য ছুটে এলেন। বড়সড় বিপদের হাত থেকে অশোকবাবুর ছেলে বাঁচলেও যাত্রীরা ক্ষোভে ফেটে পড়ে জানালেন ওভারব্রিজের মেরামতি কোনও দিনই হয় না। অথচ প্রতিদিন এই ওভারব্রিজ দিয়েই প্রচুর মানুষ যাতায়াত করছেন।
বিধাননগর রোড স্টেশন, শনিবার দুপুর বারোটা। এক নম্বর থেকে তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মে যাওয়ার পথে অনেকেই ওভারব্রিজ ব্যবহার না করে লাইন পেরোচ্ছিলেন। মাথার উপরেই ওভারব্রিজের এবড়ো খেবড়ো অংশ। সিমেন্টের স্ল্যাবের চাঙড় ভেঙে বেরিয়ে আছে লোহার রড। নিত্যযাত্রীরা ওই ভাঙাচোড়া অংশ দেখে রীতিমতো ক্ষুব্ধ। বারুইপুর স্টেশনের ওভারব্রিজের মতো দুর্ঘটনা না ঘটলে কি টনক নড়বে না কর্তৃপক্ষের, প্রশ্ন তুললেন তাঁরা।
বিধাননগর রোড ও দমদম জংশন, শহরের দুই ব্যস্ত স্টেশন দিয়েই কয়েক লক্ষ মানুষ নিত্য যাতায়াত করেন। নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, এই দুই ওভারব্রিজ একেবারে পারাপারের অযোগ্য না হলেও, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণও হয় না। দমদম ওভারব্রিজের ওই কাঠের পাটাতন ফাঁক হয়ে থাকা অংশ দেখিয়ে এক নিত্যযাত্রী বলেন, ‘‘আমরা এই বিপজ্জনক অংশটির কথা রেল কর্তৃপক্ষের কাছে বলেছি। কিন্তু তাতে কোনও ফল হয়নি।’’
বিপজ্জনক: উল্টোডাঙা ফুটব্রিজের সিঁড়িতে ফাটল।
রাস্তার সেতুর মতোই রেলের ওভারব্রিজের স্বাস্থ্যও নিয়মিত পরীক্ষা করা দরকার বলে মনে করেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপকেরা। এই বিভাগের স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেটিরিয়াল বিশেষজ্ঞ সোমনাথ ঘোষ বলেন, ‘‘এই সেতু দিয়ে যেহেতু প্রতিদিন অনেক মানুষ যাতায়াত করেন, তাই এর কংক্রিটের মান খুব ভাল হওয়া দরকার। কাঠের ওভারব্রিজ হলে তা নিয়মিত রং করা প্রয়োজন। কারণ কাঠের উপরে বৃষ্টির জল পড়লে তার ভার বহনের ক্ষমতা কিছুটা কমে যায়। কাঠে রং করা থাকলে ক্ষতি খানিকটা কমে। ফলে কংক্রিটের তুলনায় কাঠের সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ বেশি প্রয়োজন।’’
শুধু রক্ষণাবেক্ষণই নয়, বিশেষজ্ঞদের মতে রেলের ওভারব্রিজের রেলিং কতটা উঁচু করা হচ্ছে, তার সিঁড়ি কী রকম হলে নিত্যযাত্রীদের ওঠানামা করতে সুবিধা হয়, এমনকি ওভারব্রিজ কতটা চওড়া হবে, সে সব দিকগুলিও নজর রাখা জরুরি। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, বিশেষ করে রেললাইনের ঠিক উপরের যে অংশটুকু ওভারব্রিজ থাকে, সেখানে উঁচু রেলিং হওয়া জরুরি। না হলে কেউ ঝুঁকতে গিয়ে যদি পড়ে যান, তা হলে ওভারহেডের বিদ্যুতের তারে লেগে বড়সড় বিপদ ঘটতে পারে। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘আমরা শহর ও শহরতলির সব ওভারব্রিজেরই স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছি। কোথাও কোনও ত্রুটি দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
ছবি: শৌভিক দে।