অভিনন্দনের গল্প বলবে স্কুল

শহরের অধিকাংশ স্কুলেই এখন পরীক্ষা চলছে। তার মধ্যেই অবশ্য কোনও কোনও স্কুলে প্রার্থনার লাইনেই শোনানো হয়েছে অভিনন্দনের গল্প। কোথাও আবার স্কুলের তরফে বাবা-মায়েদের হোয়াট্সঅ্যাপ করে বলা হয়েছে, তাঁর বীরত্বের কাহিনি যেন সন্তানদের বলা হয়।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৯ ০২:৪৪
Share:

অভিনন্দন বর্তমান

ভারতীয় বায়ুসেনার পাইলট অভিনন্দন বর্তমানের গল্প শুনিয়ে পড়ুয়াদের অনুপ্রাণিত করতে চায় শহরের বেশ কয়েকটি স্কুল। ছাত্রছাত্রীদের চরিত্র গঠনের ক্ষেত্রে অভিনন্দনের বীরত্বের কাহিনি বিশেষ ভাবে সহায়ক হতে পারে বলেই মনে করছেন শিক্ষকদের একটি বড় অংশ।

Advertisement

শহরের অধিকাংশ স্কুলেই এখন পরীক্ষা চলছে। তার মধ্যেই অবশ্য কোনও কোনও স্কুলে প্রার্থনার লাইনেই শোনানো হয়েছে অভিনন্দনের গল্প। কোথাও আবার স্কুলের তরফে বাবা-মায়েদের হোয়াট্সঅ্যাপ করে বলা হয়েছে, তাঁর বীরত্বের কাহিনি যেন সন্তানদের বলা হয়। তবে অভিনন্দনকে নিয়ে এই মাতামাতির মধ্যেও কোনও কোনও শিক্ষাবিদের প্রশ্ন, এই বীরগাথা শুনিয়ে পড়ুয়াদের মধ্যে উগ্র জাতীয়তাবাদের ধারণা সঞ্চারিত করা হচ্ছে না তো? তাঁরা সতর্ক করে বলছেন, পড়ুয়ারা যাতে অহিংসার প্রতি বিশ্বাস না হারায়, সে দিকেও কিন্তু খেয়াল রাখাটা জরুরি।

ডিপিএস মেগাসিটি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এখন পরীক্ষা চলছে বলে ক্লাস হচ্ছে না। কিন্তু অভিনন্দনের এই কাহিনি যাতে পড়ুয়াদের জানানো হয়, তার আর্জি জানিয়ে তাঁরা হোয়াট্সঅ্যাপ করেছেন অভিভাবকদের। ডিপিএস মেগাসিটির এক বোর্ড-সদস্য অনীশ খান বলেন, ‘‘পাক সেনার হাতে বন্দি হয়েও অভিনন্দন যে ভাবে তাঁর ইস্পাত কঠিন মনের পরিচয় দিয়েছেন, তা এক কথায় অতুলনীয়। আমরা চাই, অভিনন্দনের কথা ছোট ছোট পড়ুয়ারাও জানুক। সেখান থেকে শিক্ষা নিক তারা।’’ অনীশবাবু জানান, তাঁদের স্কুলের প্রো ভাইস চেয়ারম্যান বিজয় আগরওয়ালও চান অভিনন্দনের কাহিনি থেকে স্কুলের ছাত্রেরা উদ্বুদ্ধ হোক।

Advertisement

দক্ষিণ কলকাতার রামমোহন মিশন হাইস্কুলের প্রিন্সিপ্যাল সুজয় বিশ্বাসের মতে, বন্দি অভিনন্দন যে ভাবে পাক সেনা মেজরকে উত্তর দিচ্ছিলেন, তাতে সবাই গর্বিত। গোপন তথ্য যে তিনি কোনও মতেই শত্রুপক্ষকে বলবেন না, তা ওই পরিস্থিতিতেও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন। সুজয়বাবু বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের শেখাতে চাই, যে কোনও পরিস্থিতিতেই কর্তব্যে অবিচল থাকতে হবে অভিনন্দনের মতো। তাই অভিনন্দনের গল্প আমরা প্রার্থনার লাইনে শুনিয়েছি।’’ ক্যালকাটা গার্লসের প্রধান শিক্ষিকা বাসন্তী বিশ্বাসও বলেন, ‘‘আমরাও প্রার্থনার লাইনে মেয়েদের শোনাব অভিনন্দনের বীরত্বের কথা।’’

অভিনন্দনের গল্প শোনাবে সরকারি ও সরকার-পোষিত স্কুলগুলিও। হেয়ার স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুনীল দাস বলেন, ‘‘স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিকের সিট পড়েছে। তাই স্কুল এখন ছুটি। পড়ুয়ারা নিশ্চয়ই টিভি ও খবরের কাগজ থেকে অভিনন্দনের সম্পর্কে জানতে পেরেছে। তবু স্কুল খুললে আমরাও অভিনন্দনের সাহসিকতার গল্প ওদের শোনাব।’’

তবে শিক্ষাবিদদের মতে, পড়ুয়াদের কিন্তু অহিংসার পথটাও দেখাতে হবে। এক সময়ে প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াতেন অমল মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘অভিনন্দনের কাহিনির পাশাপাশি যে সমস্ত জওয়ান যুদ্ধক্ষেত্রে মারা গেলেন, তাঁদের কথাও শোনানো দরকার। দেখতে হবে, যুদ্ধের গল্প বলার পিছনে যেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য না থাকে।’’ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক ইমনকল্যাণ লাহিড়ীর মতে, ‘‘ছোট ছোট পড়ুয়াদের শুধু যুদ্ধের হিড়িক তোলার গল্প বললেই হবে না। আমাদের দেশ গাঁধী, রবীন্দ্রনাথের দেশ। তাঁরা কী ভাবে অহিংসার পথ দেখিয়েছিলেন, সেটাও পড়ুয়াদের বলতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন