কিশোরীর বিয়ে, ধৃত বাবা এবং পুরোহিত

বিয়ের আয়োজন শেষ। বাড়ি ভর্তি আত্মীয়স্বজন। চারদিকে আনন্দের আবহ। হয়ে গিয়েছিল গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানও। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৮ ০২:৫১
Share:

বিয়ের আয়োজন শেষ। বাড়ি ভর্তি আত্মীয়স্বজন। চারদিকে আনন্দের আবহ। হয়ে গিয়েছিল গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানও।

Advertisement

কয়েক ঘণ্টা পরেই বরযাত্রী চলে আসবে। শেষ মুহূর্তের কাজকর্ম ঠিকঠাক হচ্ছে কি না, তা মিলিয়ে নিচ্ছিলেন পাত্রীর পরিবারের লোকজন। হঠাৎই অনুষ্ঠান বাড়িতে ঢুকল পুলিশ। বাকিরা বোঝার আগেই পুলিশের নির্দেশ, বিয়ে বন্ধ করতে হবে। পাত্রী-সহ তার বাবা এবং পুরোহিতকে ধরে নিয়ে যাওয়া হল থানায়। রবিবার রাতে কসবা থানা এলাকার ঘটনা। কিন্তু অপরাধটি কী? পুলিশ জানাল, পাত্রীর বয়স মাত্র চোদ্দ। পাত্রীর বাবা এবং পুরোহিতকে তাই গ্রেফতার করা হয়েছে নাবালিকার বিয়ে দিতে চেষ্টা করার অপরাধে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কসবার বোসপুকুর রোডের বাসিন্দা বছর চোদ্দোর ওই নাবালিকার বিয়ে ঠিক করা হয়েছিল তার পরিবারের তরফেই। পাত্র বারুইপুরের বাসিন্দা। দুই পরিবারের মধ্যে দেখাশোনা করে এই বিয়ের আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু রবিবার কোনও ভাবে কসবা থানায় এই বিয়ের খবর পৌঁছে যায়। এর পরেই মহিলা পুলিশ-সহ একটি দল হাজির হয় মেয়ের বাড়িতে।

Advertisement

পুলিশ জানায়, প্রথমে বিয়ে বন্ধ করতে বললে রাজি হয়নি মেয়ের পরিবার। এর পরেই মেয়ের বাবা এবং পুরোহিতকে গ্রেফতার করা হয়। ওই কিশোরীকেও উদ্ধার করে আনে পুলিশ। কলকাতা শিশু কল্যাণ সমিতির সঙ্গে কথা বলে তাদের নির্দেশে ওই নাবালিকাকে পাঠানো হয় সল্টলেকের একটি সরকারি হোমে।

পুলিশের একটি সূত্রের খবর, অনেক ক্ষেত্রেই এ রকম বিয়ের খবর আসে। মেয়ের বাড়িতে গিয়ে সাধারণত বুঝিয়ে মুচলেকা লিখিয়ে এনে বিয়ে বন্ধ করা হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ওই পরিবার বিয়ে বন্ধ করতে রাজি হয়নি বলেই পাত্রীর বাবা ও পুরোহিতকে গ্রেফতার করা হয়। পাত্র এবং নাবালিকার আর এক আত্মীয়ের বিরুদ্ধেও অভিযোগ দায়ের হয়েছে। কলকাতা চাইল্ড লাইন সূত্রের খবর, শহরের বুকে প্রতি দিনই এক-দু’টি করে নাবালিকা বিয়ের খবর মেলে। বিশেষ কিছু এলাকা রয়েছে যেখানে সচেতনতা শিবির করেও কোনও লাভ হচ্ছে না। বিশেষ করে তিলজলা, তপসিয়া, প্রগতি ময়দান-সহ কিছু থানা এলাকায় মাঝেমাঝেই নাবালিকা বিয়ের খবর আসছে। অনেক ক্ষেত্রে পাত্রীর বাবা কিংবা পরিবারের অন্য কেউ মুচলেকা দিয়ে রেহাই পান। কিন্তু পরে দেখা যায় অন্য কোনও জায়গায় নিয়ে গিয়ে সেই নাবালিকার বিয়ে দিচ্ছে পরিবার। কিন্তু এত সচেতনতার প্রচার, কন্যাশ্রীর মতো প্রকল্পের চালুর পরেও কেন নাবালিকা বিয়ে বন্ধ করা যাচ্ছে না, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়ে। কলকাতা চাইল্ড লাইন ও পুলিশের দাবি, কিছু মানুষ এখনও মনে করেন মেয়েদের কম বয়সে বিয়ে দেওয়া উচিত। তাঁরা মেয়ের শারীরিক অবস্থার কথা বুঝতে রাজি হন না। সে কারণেই শত প্রচার সত্ত্বেও নাবালিকা বিয়ে পুরোপুরি বন্ধ হচ্ছে না শহর অঞ্চলেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন