শব্দবাজিতে আপত্তি, অপমান দম্পতিকে

রাত আড়াইটে নাগাদ একনাগাড়ে শব্দবাজির আওয়াজ। ঘুমের মধ্যেই ভয়ে কেঁপে উঠছিল তাঁর এক বছরের মেয়ে। বিকট শব্দের তাণ্ডবে অস্বস্তি বোধ করছিলেন বৃদ্ধ বাবাও। রবিবার রাতে অগত্যা বাড়ির বাইরে বেরিয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন আমহার্স্ট স্ট্রিটের বাদুড়পাড়ার চন্দ্রিমা মাজি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৬ ০২:০৩
Share:

চন্দ্রিমা মাজি। — নিজস্ব চিত্র

রাত আড়াইটে নাগাদ একনাগাড়ে শব্দবাজির আওয়াজ। ঘুমের মধ্যেই ভয়ে কেঁপে উঠছিল তাঁর এক বছরের মেয়ে। বিকট শব্দের তাণ্ডবে অস্বস্তি বোধ করছিলেন বৃদ্ধ বাবাও। রবিবার রাতে অগত্যা বাড়ির বাইরে বেরিয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন আমহার্স্ট স্ট্রিটের বাদুড়পাড়ার চন্দ্রিমা মাজি। পাড়ার যুবকদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে পুলিশকে খবর দেওয়ার ভয় দেখান তাঁর স্বামী আশিস মাজি। এই অপরাধেই ওই দম্পতিকে অকথ্য গালিগালাজ করার অভিযোগ উঠল কয়েক জন যুবকের বিরুদ্ধে। লাগাতার গালিগালাজ চলতে দেখে থানায় অভিযোগ করেছেন চন্দ্রিমাদেবী। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

Advertisement

পুলিশ জানায়, অভিযোগে চন্দ্রিমাদেবী জানিয়েছেন— তাঁর বাড়ি দমদম এলাকায়। দুর্গাপুজোর সময়ে স্বামী আশিস মাজি এবং এক বছরের মেয়েকে নিয়ে বাদুড়পাড়ায় বাবার কাছে আসেন তিনি। রবিবার রাতে ঠিক ওই বাড়ির সামনেই লাগাতার শব্দবাজি ফাটাতে শুরু করেন পাড়ার এক দল যুবক। বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এসে নিষেধ করেন তাঁরা। অভিযোগ, তার পরেও শব্দবাজির তাণ্ডব বন্ধ হয়নি। আশিসবাবু পুলিশে খবর দেওয়ার কথা বললে রে রে করে ওঠেন তাঁরা। তখনই শুরু হয় অকথ্য গালিগালাজ। রাতে আর কথা না বাড়িয়ে তাঁরা ঘরের ভিতরে চলে যান বলে জানান চন্দ্রিমাদেবী। অভিযোগ, তখনও নাগাড়ে গালাগালি চলছে, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শব্দবাজির আওয়াজ। ভোর পর্যন্ত ওই তাণ্ডব চলে বলে অভিযোগ।

অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, পরদিন সোমবার সকালে ওই যুবকদের সঙ্গে কথা বলতে যান চন্দ্রিমাদেবী। কিন্তু ভুল স্বীকার না করে আবারও শব্দবাজি ফাটানোর কথা বলে ওই যুবকেরা। তা নিয়ে ওই দিনই দুপুরে স্থানীয় আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় অভিযোগ করেন তিনি। সন্ধ্যায় এলাকায় যায় পুলিশের একটি দল। যদিও এর পরেও তাণ্ডব থামেনি।

Advertisement

চন্দ্রিমাদেবীর অভিযোগ, রবিবার রাতে কালীপুজোর বিসর্জনের পরে ফের এক দল যুবক তাঁকে এবং তাঁর স্বামীকে উদ্দেশ্য করে কটূক্তি করতে থাকে। এমনকী, বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে, তাঁদের নাম ধরে ডেকে গালিগালাজ-কটূক্তিও করা হয়। পুলিশে কেন জানানো হয়েছে, তা নিয়ে বচসাও চলে। এর পরে মঙ্গলবার ফের থানায় যান চন্দ্রিমাদেবী।

এ দিন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পুজোমণ্ডপের সামনে ভিড় জমে রয়েছে। এ নিয়ে প্রথমে কেউ কিছু বলতে চাননি। পরে অবশ্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকেই মুখ খোলেন। তাঁদের দাবি, কালীপটকা, দোদমা ফাটানো হয়েছিল ওই রাতে। বোমা মেরে বাড়ি তো উড়িয়ে দেওয়া হয়নি। তা হলে পুলিশের কাছে যেতে হল কেন? ‘‘কালীপুজোয় সকলেই বাজি ফাটায়। আমরা ফাটাব না? ক্ষতি কী?’’ প্রশ্ন এক যুবকের। আইন অনুযায়ী, দোদমা নিষিদ্ধ শব্দবাজির তালিকায় রয়েছে। ফলে তা ফাটানো অপরাধ। অন্য দিকে মানবিকতার খাতিরেও যে বাড়িতে এক বছরের শিশু এবং বৃদ্ধ-বৃদ্ধা রয়েছেন, সেখানে শব্দবাজি ফাটানো কতটা উচিত?

‘‘পুজোর সময়ে একটু হবেই,’’ সাফ কথা এক যুবকের।

চন্দ্রিমাদেবীর অভিযোগে স্থানীয় বেশ কয়েক জন যুবকের নাম নির্দিষ্ট করা থাকলেও এ দিন বিকেল পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। পুলিশ যেখানে শব্দবাজির তাণ্ডব রুখতে ব্যবস্থা নিচ্ছে, সেখানে অভিযোগ পেয়েও কেন তৎপর হচ্ছে না পুলিশ? পুলিশের দাবি, তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযোগের সমস্ত দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন