গভীর রাতে পুড়ল বস্তির তিরিশটি ঘর

মঙ্গলবার গভীর রাতে আগুনে ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে তারাতলার পাঁচ নম্বর সিপিটি কলোনি বস্তির অন্তত ৩০টি ঘর। দমকল জানায়, খবর পেয়ে তিনটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে গিয়েছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৪৪
Share:

নিঃস্ব: মধ্যরাতের আগুন কেড়েছে ঘর-সহ সব জিনিসপত্র। মঙ্গলবার সকালে, তারাতলার সিপিটি কলোনিতে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

মার্চ মাসেই নতুন ক্লাসে ওঠার বার্ষিক পরীক্ষা। সে কথা মাথায় রেখেই জোরকদমে পড়াশোনা করছিল তিন ভাইবোন। নিকিতা, আশিস ও হর্ষ রাজবংশী। কিন্তু মধ্যরাতের বিভীষিকায় সব পুড়ে ছাই। বুধবার সকাল থেকে সেই ছাইয়ের গাদায় পোড়া বই-খাতার পাতা হাতড়াচ্ছিল তিন জন। পোড়া ভিটেতে বসেই গার্ডেনরিচ কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী নিকিতা বলছিল, ‘‘আমাদের বোধ হয় আর পড়াশোনাই হবে না।’’

Advertisement

মঙ্গলবার গভীর রাতে আগুনে ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে তারাতলার পাঁচ নম্বর সিপিটি কলোনি বস্তির অন্তত ৩০টি ঘর। দমকল জানায়, খবর পেয়ে তিনটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। কিন্তু তত ক্ষণে কার্যত সব শেষ। ঘটনায় হতাহতের কোনওখবর নেই ঠিকই, কিন্তু পরনের কাপড়টুকু ছাড়া আগুনের গ্রাস থেকে কোনও পরিবারের ছিটেফোঁটাও বাঁচেনি। এই পরিস্থিতিতে কী ভাবে আগামী দিনে জীবন চলবে, তা ভেবেই আকুল ওই বস্তির বাসিন্দারা।

কী ভাবে আগুন লাগল, সে ব্যাপারে এখনও নির্দিষ্ট কিছু জানা যায়নি। তবে বাসিন্দাদের একাংশের সন্দেহ, লম্ফ জাতীয় কিছু থেকে আগুন লেগেছে। এর পাশাপাশি আবার আগুন লাগানোর অভিযোগও উঠেছে। বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, ওই বস্তিতে কিছু যুবক মদের ঠেক চালাত। তা নিয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন কেউ কেউ। অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে ওই মদের ঠেক সংক্রান্ত গোলমালের কোনও সম্পর্ক রয়েছে কি না, তা নিয়ে তদন্তের দাবি তুলেছেন তাঁরা। এর আগেও কয়েক বার ওই বস্তিতে ছোট মাপের আগুন লেগেছিল বলে জানান বাসিন্দাদের একাংশ।

Advertisement

কী ঘটেছিল ওই রাতে? বস্তির বাসিন্দা মনোজকুমার রাজবংশী জানান, রাত দেড়টা নাগাদ চিৎকার শুনে ঘুম থেকে উঠে পড়েন তিনি। বাইরে বেরিয়ে দেখেন, দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে বস্তিতে। প্রাণ বাঁচাতে স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে পালান তিনি। ঘরে রাখা নগদ টাকা বা জীবনবিমার পলিসি তো দূর, শীত ঠেকানোর কাপ়়ড়টুকুও নিতে পারেননি। তিনি জানান, ওই বস্তিতে প্রায় বিশ বছর ধরে রয়েছেন। চারপাশে কলকাতা বন্দরের পরিত্যক্ত বহুতল কোয়ার্টার্স। এর আগেও টুকটাক আগুন লেগেছে। কিন্তু এত বড় মাপের নয়। দুপুরে ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে মনোজবাবুর আত্মীয় দয়ারাম বলছিলেন, ‘‘বস্তি ছেড়ে কোনও ভাড়া বাড়িতে চলে যেতে বলেছিলাম। যাব যাব বললেও গিয়ে উঠতে পারল না।’’

সদ্য বার্ষিক পরীক্ষায় পাশ করে নতুন ক্লাসে উঠেছে তারাতলা টাঁকশাল বিদ্যালয়ের পড়ুয়া তিন ভাই, অভিষেক, বিকাশ ও আকাশ বিন্দ। মঙ্গলবার রাতের আগুনে নতুন বইখাতা সব শেষ। পোড়া ভিটেতে পড়ে ছিল মোটরবাইক, স্কুটার, সাইকেলের পোড়া কঙ্কালও। বাসিন্দাদের অনেকেই জানান, দমকল আসার আগে পুরসভার পানীয় জলের কল থেকে জল নিয়ে আগুন
নেভানোর চেষ্টা করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু শীতের হাওয়ায় হুহু করে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। কয়েকটি ঘরে থাকা গ্যাস সিলিন্ডার, স্টোভ, মোটরবাইকের জ্বালানি ট্যাঙ্কও ফেটে যায়।

বাসিন্দাদের অনেকেই বলছিলেন, ওই পরিত্যক্ত কোয়ার্টার্সগুলিই আরও অনেক ঘরকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। কারণ, শীতের রাতে হাওয়ায় লেলিহান শিখার সামনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল ওই বাড়িগুলিই। না হলে আরও অনেক ঘরই আগুন গ্রাস করে নিত।

মঙ্গলবার গভীর রাতেই খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হয়েছিলেন স্থানীয় কাউন্সিলর আনোয়ার খান। সকালে দলবল নিয়ে এসে ঘরহারা মানুষদের জন্য খিচুড়ি, জলের ব্যবস্থা করেছেন। পরনের কাপড় ও কম্বলেরও জোগাড় করেছেন। তিনি জানান, কাছের কয়েকটি ক্লাব ও কমিউনিটি সেন্টারে আপাতত ঠাঁই নেবেন ওই মানুষেরা। কী ভাবে বসতি আবার গড়ে তোলা যায়, তা-ও দেখা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন