অসুর বিতর্ক মেটাতে নামলেন মুখ্যমন্ত্রী

মণ্ডপসজ্জার নামে চিকিৎসকদের এমন ‘কুরুচিকর’ ও ‘কুৎসিত’ আক্রমণ যে তারা কোনও ভাবেই মেনে নেবে না, স্পষ্ট ভাষায় তা জানিয়ে দেয় চিকিৎকদের বিভিন্ন সংগঠন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:১৬
Share:

অপমান: মহম্মদ আলি পার্কের মণ্ডপে এ ভাবেই ডাক্তার সাজানো হয়েছিল অসুরকে। (ডান দিকে) বিতর্ক তৈরি হতেই শনিবার সেই মূর্তির গলায় ঝোলানো হল ভুয়ো ডাক্তারের তকমা। ছবি:স্বাতী চক্রবর্তী

গলায় স্টেথোস্কোপ আর গায়ে এপ্রন পরিয়ে অসুরকে সাজানো হয়েছিল ডাক্তার। সেই ডাক্তারের হাতে নোটের গোছা তুলে দিচ্ছেন হতদরিদ্র, অসহায় এক ব্যক্তি। মণ্ডপে ঢুকলেই দেখা যাচ্ছিল এমন দৃশ্য। শুক্রবার রাতে এ খবর ছড়িয়ে পড়তেই ক্ষোভে ফেটে পড়ে শহরের চিকিৎসক মহল। মণ্ডপসজ্জার নামে চিকিৎসকদের এমন ‘কুরুচিকর’ ও ‘কুৎসিত’ আক্রমণ যে তারা কোনও ভাবেই মেনে নেবে না, স্পষ্ট ভাষায় তা জানিয়ে দেয় চিকিৎকদের বিভিন্ন সংগঠন। প্রতিবাদের এই ঝড় ওঠার পরের দিনই পুজো কমিটির তরফে অসুরের গলায় ঝোলানো হয় লিখিত বার্তা। তাতে দাবি করা হয়, স্টেথো ঝোলানো যে অসুরকে দেখা যাচ্ছে, সে আসলে ভুয়ো ডাক্তার। সেই সঙ্গে পুজোর উদ্যোক্তারা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, অসুরের ওই মূর্তি কোনও মতেই সরানো হবে না। ‘ড্যামেজ কন্ট্রোলে’ নেমে ভুয়ো ডাক্তারের বুলিই বারবার আউরে যান তাঁরা।

Advertisement

আরও পড়ুন: কেনাকাটা সেরে ভিড় জমছে মণ্ডপে

চিঁড়ে অবশ্য তাতেও ভেজেনি। শনিবার দিনভর ডাক্তারদের প্রতিবাদ চলায় সন্ধ্যায় বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, ওই মূর্তি মণ্ডপ থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এমন কিছু বরদাস্ত করব না, যাতে বিশেষ কোনও গোষ্ঠীর ভাবাবেগে আঘাত লাগতে পারে।’’

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রীর এই নির্দেশের পরেই অবশ্য সুর পাল্টে ফেলেন ওই পুজোর উদ্যোক্তারা। পুজো কমিটির সভাপতি দীনেশ বজাজ বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী আমাদের অনুরোধ করেছিলেন ওই চিকিৎসকের মডেল সরিয়ে ফেলতে। আমরা সেইমতো কাজ করেছি। ভুয়ো ডাক্তারের বদলে ওই মূর্তিটিকে আমরা শিশু পাচারকারীর রূপ দিচ্ছি।’’

এর আগে শুক্রবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ চিকিৎসকদের সংগঠন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরাম’-এর প্রতিনিধিরা খবর পেয়ে মহম্মদ আলি পার্কের মণ্ডপে যান। ওই প্রতিনিধিদলের সদস্য-চিকিৎসক কৌশিক চাকী শনিবার বলেন, ‘‘উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলাম। তাঁদের পাওয়া যায়নি। ছবি তুলতে গেলে উপস্থিত যুবকেরা হুমকির সুরে আমাদের বারণ করেন।’’

সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ আসার আগে পর্যন্ত শনিবার দিনভরই চিকিৎসক মহলে এ নিয়ে আলোড়ন চলে। চিকিৎসকদের একাধিক সংগঠন জানায়, তারা পুলিশ কমিশনারের কাছে অভিযোগ করবে। ‘ডক্টর্স ফর পেশেন্ট’-এর তরফে চিকিৎসক শারদ্বত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই অপমান সহ্য করা হবে না। প্রয়োজনে আইনের সাহায্য নেব।’’ আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কথা বলে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরাম’-ও। সংগঠনের তরফে চিকিৎসক ‌অর্জুন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘সোমবার আদালতে যাব। এই অসম্মান মানা যায় না।’’

ঘটনার তীব্র সমালোচনা করেছে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল। কাউন্সিলের সভাপতি নির্মল মাজি বলেন, ‘‘যে কোনও অজুহাতে ডাক্তারদের অপমান করার এই প্রবণতা যে ভাবেই হোক, রুখতে হবে।’’ এর পাশাপাশি ‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’ (আইএমএ)-এর রাজ্য শাখার সম্পাদক, চিকিৎসক শান্তনু সেন বলেন, ‘‘চিকিৎসকদের এই অপমান মেনে নেওয়া হবে না।’’

এ সব শুনেও অবশ্য পুজোর কমিটির তরফে দীনেশ বজাজ স্পষ্ট বলেছিলেন, ‘‘মডেল সরাব না। ওটা ভুয়ো চিকিৎসক বোঝানো হয়েছে। প্রশাসনের তরফে কোনও প্রশ্ন করা হলে তার উত্তর দেব।’’

দিনভর সমালোচনা হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। অনেকে ‘বয়কট মহম্মদ আলি পার্ক’ বলে স্টেটাস দিয়েছেন। প্রশ্ন ওঠে, এ ভাবে কোনও পেশাকে অসম্মান করা যায় কি?
কারও বক্তব্য, বহু রাজনীতিকও দুর্নীতিগ্রস্ত। তা হলে তাঁদের মডেল রাখা হচ্ছে না কেন? অনেক চিকিৎসক সোশ্যাল মিডিয়ায় কটাক্ষ করে লিখেছেন, অসুর হলেও এ বার পুজো পাবেন চিকিৎসকেরা।
কারণ দুর্গাপুজোয় অসুরকেও পুজোর রীতি রয়েছে।

তবে সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরে অবশ্য বিতর্কে দাঁড়ি পড়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন