কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওষুধের স্টোরে অগ্নিকাণ্ড। —ফাইল চিত্র
আপাতত তদন্তে মধ্যান্তর!
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওষুধের স্টোরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখনও রিপোর্ট জমা দিতে পারেনি অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি। কেন সেই রিপোর্ট দিতে এত দেরি হচ্ছে, সে প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। এ বার জানা গেল, ফরেন্সিক বিভাগও তাদের বাকি তদন্ত পুজোর পরে করবে। আপাতত নমুনা সংগ্রহ করেই কাজ শেষ করেছেন ফরেন্সিক আধিকারিকেরা। ওই বিভাগের অধিকর্তা ওয়াসিম রাজা বলেন, ‘‘সরকারি দফতরে তো ছুটি পড়েই গিয়েছে। পুজোর পরে অনেকগুলি ল্যাব টেস্ট করে আগুন লাগার সঠিক কারণ বোঝা যাবে! আপাতত আর কিছু করার নেই।’’
যদিও স্বাস্থ্য মহলের একটা বড় অংশই বিষয়টিকে তদন্তকারীদের গাফিলতি হিসেবে দেখছেন। অগ্নিকাণ্ডের ১০ দিন পরেও আগুন লাগার সঠিক কারণ নিয়ে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের ধোঁয়াশা না কাটায় ওই হাসপাতালের এক চিকিৎসক বললেন, ‘‘যে ঘটনায় পাঁচ কোটি টাকার ওষুধ নষ্ট হল, রোগীদের নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িয়ে ছিল, তার তদন্তে এত গড়িমসি? কোনও কিছু চেপে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে না তো!’’ সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাসও বলছেন, ‘‘কেন তদন্ত শেষ হল না, তা ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরাই বলতে পারবেন। আমরা আমাদের মতো কর্মীদের গাফিলতি ছিল কি না দেখছি।’’
গত ৩ অক্টোবর কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের এমসিএইচ ভবনের একতলার ওষুধের স্টোরে আগুন লাগে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, পুড়ে নষ্ট হয় অন্তত পাঁচ কোটি টাকার ওষুধ। জরুরি বিভাগ-সহ হাসপাতাল জুড়ে ওষুধের হাহাকার দেখা দেয়। পরিস্থিতি বুঝে তড়িঘড়ি পাঁচ কোটি টাকার ওষুধ পাঠানোর অনুমোদন দিয়ে দেয় স্বাস্থ্য ভবন।
তবে এই অগ্নিকাণ্ড ঘিরে রহস্যের জট খোলেনি। চিকিৎসকদের একাংশ একে অন্তর্ঘাত হিসেবে দাবি করেছিলেন আগেই। দীর্ঘক্ষণ ধোঁয়া দেখা গেলেও দমকলে খবর দিতে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা পেরিয়ে যায় বলে অভিযোগ ওঠে। পরে জানা যায়, ঘটনার আগের দিন রাতে ওই স্টোরে যে কর্মীদের থাকার কথা ছিল, তাঁরা সে দিন ডিউটিতেই ছিলেন না। প্রাথমিক ভাবে কলকাতা পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগই দায়ের হয়নি। চুপ ছিল দমকলও। পরে অবশ্য স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা রুজু করে পুলিশ। হাসপাতালের বেশ কয়েক জন কর্মীকে তারা জিজ্ঞাসাবাদ করে। ঘটনার পরেই পদক্ষেপ করা হয়নি কেন? পুলিশ আধিকারিকেরা এই প্রশ্নের কোনও উত্তর দিতে পারেননি।
ওই সময়ে নিয়ম মাফিক নিজেদের মতো করে তদন্ত চালাচ্ছিল ফরেন্সিক বিভাগ। তাতেও আগাগোড়া সমস্যায় পড়ে তারা। প্রথম দফায় পোড়া স্টোরে গরমের কারণে ঢুকতেই পারেননি ফরেন্সিক আধিকারিকেরা। পরে নমুনা সংগ্রহের জন্য স্টোরের পোড়া তার কাটতে বাধা পায় ফরেন্সিক। আপাতত তদন্ত মুলতুবি করে দিয়েছেন তাঁরা। অধিকর্তা বলছিলেন, ‘‘পুজোর এই সময়ে এ রকমই হয়। এখন ম্যাচের হাফ-টাইম!’’