দুই নবজাতকের মৃত্যু: মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষকে ঘেরাও নার্স, ডাক্তারদের

রেডিয়েন্ট ওয়ার্মারে পুড়ে দুই নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে সিনিয়ার-জুনিয়র বাছবিচার করা হচ্ছে বলে আগেই অভিযোগ উঠেছিল। জুনিয়ার ডাক্তার ও নার্সদের একাংশের বক্তব্য, তাঁদের ‘বলির পাঁঠা’ করা হয়েছে। তার জেরে শনিবার দুপুর থেকে ‘সুবিচার’-এর দাবিতে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষকে ঘেরাও করেন এক দল নার্স ও জুনিয়ার ডাক্তার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৫ ২০:১০
Share:

রেডিয়েন্ট ওয়ার্মারে পুড়ে দুই নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে সিনিয়ার-জুনিয়র বাছবিচার করা হচ্ছে বলে আগেই অভিযোগ উঠেছিল। জুনিয়ার ডাক্তার ও নার্সদের একাংশের বক্তব্য, তাঁদের ‘বলির পাঁঠা’ করা হয়েছে। তার জেরে শনিবার দুপুর থেকে ‘সুবিচার’-এর দাবিতে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষকে ঘেরাও করেন এক দল নার্স ও জুনিয়ার ডাক্তার।

Advertisement

শিশু-মৃত্যুর ব্যাপারে গত শুক্রবার শাস্তি সংক্রান্ত ফাইলে সই করেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে মেডিক্যালের অধ্যক্ষ তপন লাহিড়ি ও সুপার শিখা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেবল কারণ দর্শাতে বলা হয়। আর অনির্দিষ্টকালের জন্য সাসপেন্ড করা হয় ওই রাতে ডিউটিতে থাকা নার্স চন্দ্রাণী দে-কে। এক মাসের জন্য সাসপেন্ড হন তিন পিজিটি রোশনী চক্রবর্তী, মালবিকা মাইতি ও সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে হাসপাতালের যে বিভাগে ওই ঘটনা ঘটে সেই এসএনসিইউয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক তাপস কুমার সাবুই, নার্সিং সুপার কেয়া সামন্ত, আরএমও সুশান্ত ভঞ্জ, নার্সিং ইনচার্জ শ্রাবণী পাল ও ডেপুটি নার্সিং সুপার ইন্দ্রাণী দাসকে শাস্তি হিসাবে শুধুই বদলি করে দেওয়া হয়। তা-ও দূরে কোথাও নয়, কলকাতারই আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।

পরিকাঠামো দেওয়া হবে না অথচ পরিষেবায় ভুলচুক হলেই তাঁদের উপরে শাস্তির খাঁড়া নামবে— এই অভিযোগ তুলে এ দিন দুপুর ১২টা থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন জুনিয়র ডাক্তার ও নার্সদের একাংশ। পরে স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করে জুনিয়ার ডাক্তারেরা বিক্ষোভ তুলে নিলেও অধ্যক্ষ তপনকুমার লাহিড়ির ঘরে ঢুকে বিক্ষোভ জারি রাখেন নার্সরা। সুশান্তবাবু বলেন, ‘‘সরকার তার অবস্থান থেকে সরবে না। অবিলম্বে বিক্ষোভ প্রত্যাহার না করলে তার খেসারত দিতে হবে নার্সদের।’’ বিক্ষোভরত সরকারি নার্সদের পাল্টা অভিযোগ, ‘‘স্বাস্থ্যক্ষেত্রে সরকারের যাবতীয় উন্নতির দাবি আসলে কথার কথা। বাস্তবে সমস্ত পরিকাঠামো নড়বড়ে। এসএনসিইউয়ে ২৮টি অসুস্থ বাচ্চা পিছু মাত্র এক জন নার্স থাকেন। তাঁকে হিমশিম খেতে হয়। অথচ, কোনও সিনিয়র ডাক্তার রাতে ডিউটি করেন না, এমনকী, সন্ধ্যাতেও রোগী দেখতে আসেন না। অথচ, শাস্তি পেতে হয় শুধু নার্সদের।’’

Advertisement

নার্সদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন, কলকাতারই এক মেডিক্যাল কলেজ থেকে আরেক মেডিক্যাল কলেজে বদলিকে কি আদৌ শাস্তি বলা চলে? যদি জুনিয়ার নার্স ও ডাক্তারেরা সাসপেন্ড হন তা হলে যে সিনিয়রেরা গোটা ব্যবস্থা পরিচালনা ও নজরদারির দায়িত্বে আছেন তাঁদের কেন একই শাস্তি হবে না? শনিবার মেডিক্যালে বিক্ষোভরত নার্সদের পক্ষে তাঁদের সংগঠন ‘নার্সেস ইউনিটি’-র সম্পাদিকা পার্বতী পাল বলেন, ‘‘শাস্তি দেওয়ার আগে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। যে দিন ওই ঘটনা ঘটেছিল সে দিন এসএনসিইউয়ে কোনও সিনিয়র ডাক্তার ছিলেন না। চন্দ্রাণী দে একা ডিউটি করছিলেন।’’ পার্বতীদেবীর কথায়, ‘‘শিশুর মৃত্যু কখনওই অভিপ্রেত নয়। কিন্তু এক জন নার্সের পক্ষে এত জন গুরুতর অসুস্থ শিশুর দিকে লাগাতার নজর রাখাও সম্ভব নয়।’’ তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, যখন সংশ্লিষ্ট শিশুর মা ডেকে বলছেন তাঁর সন্তানের শরীর গরম হয়ে যাচ্ছে তখনও কি নার্স দেখবেন না? পার্বতীদেবীর জবাব, ‘‘এক জন নার্সকে এত ছোটাছুটি করতে হয় যে সবসময় বাড়ির লোকের কথা শোনা সম্ভব হয় না।’’ বিক্ষোভের জন্য এ দিন পালা করেই ডিউটিতে হাজির ছিলেন নার্সরা।

এ দিন বিক্ষোভের গোড়ায় নার্সরা অধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে তপনবাবু রাজি হননি। নার্সরা তাঁর ঘরে ঢুকে বিক্ষোভ শুরু করলে অধ্যক্ষ অ্যান্টি চেম্বারে ঢুকে দরজা আটকে দেন। মাঝখানে এক বার সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় এসে জুনিয়ার ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলে যান। সাংবাদিকদের এড়িয়ে সুশান্তবাবুকেও অ্যান্টি চেম্বারের পিছনের দরজা দিয়ে বার করা হয়। সুশান্তবাবুর কথায়, ‘‘জুনিয়ার ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলেছি। ওদের কথা শুনেছি। কোনও সমস্যা নেই। আর নার্সরা আন্দোলন করছেন করুন। সরকারি চাকরিতে থেকে আন্দেলন করলে কী পরিণাম হতে পারে সেটা টের পাবেন।’’

দিন কয়েক আগে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজে ইন্টার্নরা নিরাপত্তা-র দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করার পরে একই ভাবে তাঁদের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা। তাতে ফলও মিলেছে। আড়াই দিনের মাথায় বিনা শর্তে কর্মবিরতি তুলে নিয়ে শনিবার দুপুরেই কাজে যোগ দিয়েছেন ইন্টার্নরা।

মে়ডিক্যালের ঘটনার প্রতিবাদে এ দিন ধর্মতলার ‘ওয়াই চ্যানেল’-এ বিকেল চারটে নাগাদ বিক্ষোভ দেখায় কংগ্রেস। সেখানে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী অভিযোগ করেন, ‘‘লোক দেখানো শাস্তির ব্যবস্থা হচ্ছে। সরকার নিজেদের পিঠ বাঁচাতে উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপাতে চাইছে। আমরা পূর্ণাঙ্গ, নিরপেক্ষ তদন্ত চাই।’’ সমাবেশ শেষে মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের কুশপুতুল পোড়ানো হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন