Tumor

Medical Science: টিউমারের জেরে ভঙ্গুর হাড়, বাদ দিল মেডিক্যাল

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ওই টিউমার থেকে নিঃসৃত এক বিশেষ পদার্থের কারণেই ওই ব্যক্তির শরীরের হাড় অতি ভঙ্গুর হয়ে গিয়েছিল।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২২ ০৭:৪৭
Share:

ব্যক্তিকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। নিজস্ব চিত্র।

অল্প আঘাতেই কখনও ঊরু, কখনও আবার হাত, পাঁজর বা শরীরের অন্যান্য অংশের হাড় ভাঙছিল। রক্তে কমছিল ফসফেটের মাত্রা। প্রায় চার বছর ধরে এই সমস্যায় ভুগছিলেন মগরাহাটের বাসিন্দা, বছর ছেচল্লিশের এক ব্যক্তি। শরীরের যে অংশের সমস্যায় এমন হওয়ার কথা, তা স্বাভাবিক থাকলেও কেন এমন হচ্ছে, বুঝতে পারছিলেন না চিকিৎসকেরাও। অবশেষে দেখা গেল, চোয়ালের হাড়ের টিউমার থেকেই যত বিপত্তি।

Advertisement

সোমবার সেই টিউমার কেটে বাদ দিয়ে ওই ব্যক্তিকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ওই টিউমার থেকে নিঃসৃত এক বিশেষ পদার্থের কারণেই ওই ব্যক্তির শরীরের হাড় অতি ভঙ্গুর হয়ে গিয়েছিল। সেই কারণেই বার বার হাড় ভেঙে যাওয়ার সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। গত ২৫ মার্চ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন মমতাজ-উল হক পৈলান নামে মগরহাটের ওই বাসিন্দা। হাসপাতালের শল্য বিভাগের ‘ব্রেস্ট অ্যান্ড এন্ডোক্রিন সার্জারি’ ইউনিটের চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ওই ব্যক্তির সমস্যাটি বিরল। শরীরে ক্যালসিয়ামের মাত্রা ঠিক থাকলেও, রক্তে ফসফেটের মাত্রা নেমে যাচ্ছিল। কিন্তু তার কারণ কী?

‘ব্রেস্ট অ্যান্ড এন্ডোক্রিন সার্জারি’ ইউনিটের ইন-চার্জ, চিকিৎসক ধৃতিমান মৈত্র জানাচ্ছেন, সাধারণত প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থি অত্যধিক মাত্রায় সক্রিয় হয়ে উঠলে তা থেকে প্যারাথাইরয়েড হরমোন নিঃসৃত হয়। তাতে শরীরের হাড় ভঙ্গুর হয়ে যায়। কিন্তু মমতাজ-উল হক পৈলানের ক্ষেত্রে তা হয়নি। পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছিল, তাঁর প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থি স্বাভাবিক অবস্থাতেই রয়েছে। তখন চিকিৎসকেরা সন্দেহ করেন, ওই ব্যক্তির শরীরে ‘এফজিএফ-২৩’ (ফাইব্রোব্লাস্ট গ্রোথ ফ্যাক্টর-২৩)) নামক এক প্রোটিন জাতীয় পদার্থ অত্যধিক পরিমাণে নিঃসৃত হচ্ছে। এর মাত্রা ৬০ ইউনিট থাকার কথা। কিন্তু ছিল ১৩৬০ ইউনিট। সেই কারণেই রক্তে ফসফেটের মাত্রাও নামছিল।

Advertisement

প্রায় চার বছর ধরে বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা করাচ্ছিলেন ওই ব্যক্তি। কিন্তু শরীরের কোন অংশে লুকিয়ে থাকা টিউমার থেকে ওই ‘এফজিএফ-২৩’ নিঃসৃত হচ্ছে, তা ধরা যাচ্ছিল না। শেষে বিশেষ পদ্ধতির পেট-সিটি স্ক্যান করে দেখা যায়, তাঁর ডান দিকের চোয়ালের হাড়ে একটি টিউমার রয়েছে। সেখান থেকেই নিঃসৃত হচ্ছে ‘এফজিএফ-২৩’। সেই কারণেই মমতাজ-উল হক পৈলানের শরীরের হাড় অতিমাত্রায় ভঙ্গুর হয়ে গিয়েছে। চিকিৎসার পরিভাষায় এটিকে বলা হয় ‘টিউমার ইনডিউসড অস্টিয়োম্যালেসিয়া’। সোমবার প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে ‘ব্রেস্ট অ্যান্ড এন্ডোক্রিন সার্জারি’ ইউনিটের চিকিৎসক ধৃতিমান মৈত্র-সহ শতক্রতু বর্মণ, শশী, অন্বেষ বিশ্বাস, অদ্রিজা বসাকের দল অস্ত্রোপচার করেন। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, অস্ত্রোপচার (হেমিম্যান্ডিবুলেক্টমি) করে টিউমার-সহ ডান দিকের চোয়ালের কিছুটা অংশ বাদ দেওয়া হয়েছে। রোগীর অবস্থা স্থিতিশীল। কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি নিজে খেতেও পারবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন