ধরা যাক দূরে কোথাও বেড়াতে গিয়েছেন। সেখানে পৌঁছে আচমকাই অসুস্থ হয়ে পড়লেন। আপনি ঠিক করলেন, যে ডাক্তারকে আপনি বরাবর দেখিয়ে আসছেন, তাঁকেই দেখাবেন। কিন্তু তিনি তো কলকাতায়! তা হলে? নির্দিষ্ট সফ্টঅয়্যার আপনাকে পৌঁছে দেবে আপনার ‘ফ্যামিলি ফিজিসিয়ান’-এর সামনে! ভার্চুয়াল চেম্বারে। অথবা আপনার পরিবারের কোনও ক্যানসার রোগীর জন্য বিদেশের কোনও ক্যানসার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ চান। এই একই পদ্ধতিতে তাঁর সামনেও হাজির হয়ে যেতে পারবেন অনায়াসে। রোগীর সঙ্গে কথা বলে, ভিডিও কলের মাধ্যমে তাঁকে দেখে ডাক্তার পরামর্শ দেবেন। পাঠাবেন প্রেসক্রিপশনও।
চিকিৎসাক্ষেত্রে ‘গ্লোবাল ভিলেজ’-এর ধারণাকে সামনে আনতে ইদানীং এমন দূর-চিকিৎসার পদ্ধতি ক্রমশ জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে। এ রাজ্যের প্রত্যন্ত জেলাতেও টেলি মেডিসিনকে জনপ্রিয় করতে সরকারি-বেসরকারি স্তরে চেষ্টা চলছে। পরিস্থিতি এমনই যে আমেরিকার বাজারে যথেষ্ট জনপ্রিয় একটি পোর্টাল এ বার এ দেশের বাজারেও আসতে চলেছে।
এই সফ্টঅয়্যারটি ব্যবহারের জন্য রোগীকে কোনও খরচ করতে হবে না। তবে ডাক্তার, হাসপাতাল বা ক্লিনিককে এই পরিষেবায় ঢুকতে গেলে মাসিক এক হাজার টাকা ভাতা দিতে হবে। এর কর্ণধার বিশ্ব ভট্টাচার্য পেশায় সফ্টঅয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। গত ২৫ বছর আমেরিকাপ্রবাসী বিশ্ববাবু জানান, রোগী বা তাঁদের পরিবারের হাজারো প্রয়োজন থাকে। সেগুলিকে যতটা সম্ভব এর ভিতরে রাখার চেষ্টা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘অনেক সময়েই অস্ত্রোপচারের পরে কী কী করতে হবে, সেই সব পরামর্শ রোগীরা ভুলে যান। কিংবা কোনও যন্ত্র কী ভাবে ব্যবহার করতে হবে, হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে সে ব্যাপারে তাঁদের মনে থাকে না। শুধু ডাক্তার বা স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ নয়, যন্ত্র প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলিও এর গ্রাহক হচ্ছে। ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে রোগী বা তাঁর পরিবারকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে পারবে তারাও।
শুধু তাই নয়, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় স্বাস্থ্যের হাল হকিকত, নতুন চিকিৎসা পদ্ধতির হদিশও থাকছে। শুধু ডাক্তারেরা নন, এক হাসপাতাল থেকে আর এক হাসপাতালে যোগাযোগ, প্রকাশিত গবেষণাপত্র নিয়ে আলাপ-আলোচনা সবই চলতে পারে।
এ রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারাও মনে করছেন, এ ধরনের পরিষেবা আরও ছড়িয়ে দিতে পারলে আখেরে লাভ সাধারণ মানুষেরই। দফতরের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিষেবার ধরনটাও বদলাচ্ছে। দূরত্বটা মুছে ফেলাই এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। গ্রামেও এখন ইন্টারনেট পরিষেবা পাওয়া যায়। আর এ ধরনের পরিষেবার ক্ষেত্রে কম্পিউটার থাকতেই হবে তা নয়। কাজ চলে যাবে স্মার্ট ফোনেও।’’