ইস্তাহারে মানসিক স্বাস্থ্য। প্রতীকী ছবি।
ভিন্ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে একটি সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দলের ইস্তাহারে জায়গা করে নিয়েছিল স্বাস্থ্যের অধিকার সংক্রান্ত দাবিদাওয়া। এ বার লোকসভা ভোটে আরও একটি সর্বভারতীয় দলের ইস্তাহারে গুরুত্ব পেল মানসিক স্বাস্থ্য আইন কার্যকরের দাবি। ওই দল একই সঙ্গে দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধীদের কথা মাথায় রেখে ইস্তাহারের অডিয়ো সংস্করণও প্রকাশ করেছে। রাজনৈতিক দলগুলির এই সকল পদক্ষেপে দৃষ্টিভঙ্গির বদলের আভাস দেখছেন স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি।
মাস ছয়েক আগে নির্বাচনী ইস্তাহারে মানসিক স্বাস্থ্য আইন ও মানসিক স্বাস্থ্য নীতি দ্রুত রূপায়ণের কথা যাতে বলা হয়। সে জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে আর্জি জানায় মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ছটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা। পাশাপাশি, এ বিষয়ে জনমত তৈরির লক্ষ্যে ‘ব্রিজ দ্য কেয়ার ক্যাম্পেন’ নামে অনলাইনে সই-স্বাক্ষরও শুরু হয়। বৃহস্পতিবার সিপিএমের প্রকাশিত ইস্তাহারে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির দাবি মেনে মানসিক স্বাস্থ্য নীতি ও মানসিক স্বাস্থ্য আইন প্রণয়ন এবং এ কাজে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
‘ব্রিজ দ্য কেয়ার’-এর সঙ্গে যুক্ত এ রাজ্যের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্ণধার রত্নাবলী রায় বলেন, “আমার কাছে এটা একটা ঐতিহাসিক জয়। আইনে মানসিক স্বাস্থ্যকে মৌলিক অধিকার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রান্তিক মানুষের কাছেও মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরিষেবা পৌঁছে দিতে হবে। তার জন্য পরিকাঠামো উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে। এগুলি বাস্তবায়িত করতে হলে রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন। সে দিক থেকে ইস্তাহারে মানসিক স্বাস্থ্যের উল্লেখ গুরুত্বপূর্ণ।” মানসিক স্বাস্থ্য আইনের খসড়ার অন্যতম প্রণেতা তথা চিকিৎসক সৌমিত্র পাথেড়া বলেন, “এটা খুবই প্রাথমিক পদক্ষেপ। তবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। আশা করব অন্য রাজনৈতিক দলগুলিও এ বার এগিয়ে আসবে। পরিবর্তন তো এ ভাবেই শুরু হয়।” পরিবর্তনের কথা বলছেন প্রতিবন্ধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সমাজকর্মী শম্পা সেনগুপ্তও। প্রতিবন্ধীদের কথা মাথায় রেখে ভোটের ইস্তাহারের অডিয়ো সংস্করণের বিষয়ে শম্পা বলেন, “একটা ইতিবাচক অধ্যায় শুরু হয়েছে। কাউকে আর পড়ে দিতে হবে না।”
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
এই মনোভাব বদলেরই ডাক দিয়েছিল রাজস্থানের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। সংগঠনের অন্যতম প্রতিনিধি ছায়া পচৌলি জানান, স্বাস্থ্যের অধিকার সুনিশ্চিত করতে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছে সংগঠনটি। গত ডিসেম্বরে রাজস্থানে জনস্বাস্থ্য ইস্তাহার প্রকাশ করেছিল সংগঠনটি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে তাদের ইস্তাহারে দাবিদাওয়া অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আর্জিও জানানো হয়। ছায়া জানান, কংগ্রেস তাঁদের কিছু দাবির সঙ্গে সম্মতি প্রকাশ করছিল। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের যে দাবিগুলির সঙ্গে সম্মতি প্রকাশ করে নির্বাচনী ইস্তাহারে মান্যতা দেওয়া হয়েছিল, পরে দলটি ক্ষমতায় এলে সে সবই খসড়া স্বাস্থ্য-নীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়। ছায়া বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলি বলে অনেক কিছু। তা কার্যকর হচ্ছে কি না, সেটা নিশ্চিত করা উচিত। তবে পাঁচ বছর আগেও স্বাস্থ্য ভোটের ইস্যু হত না। এখন যে তা হতে শুরু করেছে, সেটাও কম পাওয়া নয়।”