Durga Puja 2021

Durga Puja 2021: মায়ের ভোগ, সৌজন্যে পাঁচতারা হেঁশেল

অষ্টমীতে বাড়ি বাড়ি পাড়ি দেওয়া ৭-৮ হাজার খিচুড়ি, আলুর দম, পায়েসের বাক্স, থলেয় একটি গয়না বিপণি সংস্থার ছাপ। নবমীর রাতে কয়েকশো বিরিয়ানির বাক্সেও একটি হোর্ডিং সংস্থার ছাপ!

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২১ ০৭:৫৭
Share:

প্রস্তুতি: বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিতে বাক্সবন্দি করা হচ্ছে পুজোর ভোগ। জগৎ মুখার্জি পার্কে। নিজস্ব চিত্র।

আমিষের লেশমাত্র ছোঁয়া এড়িয়ে চচ্চড়ি বা ঘন্টর সঙ্গে ভক্তির ভাব বিভূতি মিশলে লাবড়া হয়— বলেছিলেন বুদ্ধদেব বসু। প্রায় গলে, গায়ে লেপ্টে থোড়, মোচা, মিষ্টি কুমড়ো, শিম-টিমের সহাবস্থানের স্বতন্ত্র রূপটি ভোগ বলতেই কত জনের চোখে ভেসে উঠবে! কালের নিষ্ঠুর নিয়মে সেই লাবড়াও ক্রমে পুজোর মেনু থেকে বিলীয়মান। এ বার কোভিড-কোপে মঠে (বেলুড়) ভোগ হয়নি, তাই পুজোয় লাবড়া চাখা হল না, এমন হা-হুতাশও শোনা যাচ্ছে।

Advertisement

নিউ টাউনের সানরাইজ় পয়েন্ট আবাসনের পুজোকর্তা শান্তনু চন্দ বললেন, “আসলে আটটা টাওয়ারে শতকরা ৩০ ভাগই অবাংলাভাষী! তাঁদের কথাও ভাবতে হয়!” আবাসনের ভোগ-ঐতিহ্যও বাঙালির বিভিন্ন সাবেক বড় বাড়ির পরম্পরা মেনে চলছে। দশমীতে উমা কৈলাস রওনা হওয়ার আগে সেকেলে স্নেহশীল পুজোকর্তাদের ঢঙে তাঁরাও ঠান্ডা, ঠান্ডা পান্তা ভাত খাওয়ান! সেই ভোগের ছিটেফোঁটা সব আবাসিকই পান, কিন্তু চার দিনের কুপন-কাটা গণভোজে অত বাঙালিয়ানার গোঁড়ামি চলে না। আবাসনের পুজো কমিটির বাঙালিবাবুরা তাই অনেকেই লাবড়া, শুক্তোটুক্তোর ঝুঁকি নেন না। তার বদলে অষ্টমীর নিরামিষ মেনুতে রুমালি রুটির সঙ্গে কালি ডাল বা নবরত্ন কোর্মা। যাদবপুরের দেবলোকের বাসিন্দা ভাস্কর পালেরা অবশ্য ঘুরেফিরে লাবড়া, ঝিঙে পোস্ত, শুক্তোর ধারা বজায় রাখছেন। তবে বাটার চিকেন, পনিরেরও রমরমা।

শুধু লাবড়া নয়, ভোগের পঙ্‌ক্তিভোজ, মেনুর বহর এই দুর্দৈবে সবই কোণঠাসা। ফ্ল্যাটবাড়িতে প্যাকেট হাতে ছোট দলে কারও ঘরে সকাল, সন্ধ্যায় ‘বসা’ আছে, আর বারোয়ারি পুজোয় কার্যত ‘দুয়ারে ভোগ’-এর ব্যবস্থা।
থিমের মতো এই ভোগও কমবেশি প্রচারের উপকরণ। তা দেখিয়ে দিচ্ছে উত্তর কলকাতায় চালতাবাগানে অবাংলাভাষীদের পুজো। পুজোকর্তা সন্দীপ ভুতোড়িয়ার সগর্ব ঘোষণা, “আমরা বাঙালিয়ানায় আপস করি না।” অন্য বার চালতাবাগানে ‘সেলিব্রিটিদের’ সিঁদুরখেলায় চাট, ফুচকা কাউন্টার বসত। এখন বাঙালি ভোগ নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। সন্দীপ বলছেন, “ভোগ রান্না ছেলেখেলা নয়! পেঁয়াজ, রসুন ঢোকে না এমন একটি পাঁচতারা রান্নাশাল বেছে নিয়েছি!” বাইপাসের ধারে বড় হোটেল চেনের শেফ বরুণ মোহন যত্ন করে ভোগের ভাজার থালা, তরকারির থালা, লুচির থালা সাজিয়েছেন। তাতে লাবড়া, পাঁচ ভাজার দীপ্ত উপস্থিতি। টলিউড নায়িকাদের কাছে তা পৌঁছচ্ছে সিঁদুরখেলার সরঞ্জাম সমেত। টুইটার, ইনস্টাগ্রামেও সে ছবির আলোর ঝলক।

Advertisement

লাবড়া ঘিরে অবাঙালি মহলে উলটপুরাণ হলেও কেউ কেউ চেষ্টা করেও তাকে ফেরাতে পারেননি। দক্ষিণের একডালিয়া এভারগ্রিন রুচি বদলের কথা বলছে! উত্তরের জগৎ মুখার্জি পার্কের এলাকায় প্রবীণেরা চেয়েছিলেন, ভোগ হোক বেলুড়ের ধাঁচে। কিন্তু লাবড়াটা করা গেল না! তবে একটি গয়না বিপণি এগিয়ে এসেছে। অষ্টমীতে বাড়ি বাড়ি পাড়ি দেওয়া ৭-৮ হাজার খিচুড়ি, আলুর দম, পায়েসের বাক্স, থলেয় সেই সংস্থার ছাপ। নবমীর রাতে কয়েকশো বিরিয়ানির বাক্সেও একটি হোর্ডিং সংস্থার ছাপ! পুজোকর্তা দ্বৈপায়ন রায় বলছেন, “অন্য বারের থেকে কম লোক খেলেও বাজেটও কমেছে। স্পনসর মেলায় সাশ্রয় হল।”

পঙ্‌ক্তিভোজের জন্য পরিচিত ম্যাডক্স স্কোয়ার বা নবমীতে বাঙালি, মাড়োয়ারি পদের জন্য বিখ্যাত কাশী বোস লেনও ভূরিভোজে ব্যাকফুটে। একডালিয়া বিজয়া সম্মেলনে তুলাইপাঞ্জি চালের ঘটাপটা বন্ধ রেখেছে। তবে কি পুজোর ভোগে স্পনসরের ধারাই ক্রমশ কায়েম হবে? বাগবাজারের প্রবীণ কর্তা অভয় ভট্টাচার্য গম্ভীর মুখে বলেন, “নেভার!” তাঁদের সাবেক খিচুড়ি, পাঁচভাজা, লাবড়া, ছানার কোপ্তা, চাটনি, পায়েসের মেনু এখনও পাড়ার গিন্নিরাই করেন। তবে সমস্ত মশলা শহরের সাবেক বাঙালি গুঁড়ো মশলা সংস্থার কর্তাই নিঃশব্দে আয়োজন করবেন। বাকি চাল, ডালের ভাগেও অজ্ঞাতপরিচয় ব্যবসায়ী বা পুজোপাগলদের দরদ। বাঙালির পুজোরও প্রাচীন প্রবাদ, চিনি চিন্তামণিই জোগাবেন! মায়ের পুজোর ভোগের তাই বাজেট হয় না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন