ফাইল চিত্র।
প্রথমে একটা ঝাঁকুনি। তার পরেই একের পর এক যাত্রী সিঁড়ি থেকে ছিটকে পড়তে লাগলেন একে অন্যের উপরে। ভয়ে চিৎকার করছিলেন অনেকেই। অফিস টাইমের ভিড়ে ঠাসা মেট্রো স্টেশনে ওপরে ওঠার চলমান সিঁড়ি আচমকাই নীচে নামতে শুরু করায় এই বিপত্তি ঘটে। মঙ্গলবার সকাল দশটা চল্লিশ নাগাদ ঘটনাটি ঘটে মেট্রো রেলের কবি সুভাষ স্টেশনে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মেট্রোর যাত্রী পরিষেবার মান ফের এক বার প্রশ্নের মুখে পড়ল।
মাস ছয়েক আগেই গিরিশ পার্ক স্টেশনে মেট্রোর চলমান সিঁড়ি উল্টো দিকে নামতে শুরু করেছিল। ফলে অনেক যাত্রী পড়ে গিয়ে আহত হয়েছিলেন। দু’-এক জনের মাথাও ফেটে গিয়েছিল। তার পরেই চলমান সিঁড়িগুলি নিয়মিত দেখভাল করার জন্য মেট্রো কতৃর্পক্ষ একটি বেসরকারি সংস্থাকে নিয়োগ করে। সেই সংস্থাই চলমান সিঁড়িগুলির নিয়মিত দেখভাল করছে। এ দিনের ঘটনার পরে সেই ‘দেখভাল’-এর মান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মেট্রোকর্তাদের একাংশ।
মেট্রোর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই সিঁড়িটি সর্বশেষ দেখভাল হয়েছে ১৬ মে। যে সংস্থা দেখভালের কাজ করেন, তাঁরাই সিঁড়িগুলি প্রস্তুত করেছেন। কেন এমন ঘটল, তা খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে সংস্থাটিকে।’’ মেট্রো সূত্রে খবর, সিঁড়িগুলি দু’রকম ভাবে মেরামতি করা হয়। বছরে এক বার সার্বিক ভাবে মেরামতি, আর মাসে আর এক বার করে দেখভাল। এ বছর ৬ জানুয়ারি দুর্ঘটনার কবলে পড়া সিঁড়িটি সার্বিক ভাবে মেরামতি করা হয়েছে বলে জানান ইন্দ্রাণীদেবী।
কী ঘটেছিল এ দিন?
আরও পড়ুন: টোকেন কম, দীর্ঘ লাইন কাউন্টারে
মেট্রো সূত্রে খবর, সকালে অফিস যাওয়ার ব্যস্ত সময়ে সাধারণ সিঁড়িতেও যেমন ভিড় ছিল, তেমনই ভিড় ছিল চলমান সিঁড়িতেও। ঠিক ভাবে চলতে চলতেই আচমকা সিঁড়িটি উপরে ওঠার পরিবর্তে এক বার ঝাঁকুনি খেয়ে নীচে নামতে শুরু করে। ফলে যাত্রীরা টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যান। আহতও হন বেশ কয়েক জন। মেট্রোকর্মী এবং আরপিএফ কর্মীরা জখম চার যাত্রীকে স্টেশন মাস্টারের ঘরে নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। বিক্ষুব্ধ যাত্রীদের একটা বড় অংশ স্টেশন চত্বরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন।
এ দিনের ঘটনায় আহত, গড়িয়া স্টেশন পাড়ার বাসিন্দা অনিরুদ্ধ দে-র কথায়, ‘‘সবে চলমান সিঁড়িতে উঠেছি। দু’-তিন সেকেন্ডের মধ্যেই দেখি, আচমকা ঝাঁকুনি দিয়ে সিঁড়ি পিছন দিকে নামতে শুরু করেছে। আমি টাল সামলাতে না পেরে মাটিতে পড়ে গেলাম। পিঠে, পায়ে চোট লেগেছে।’’ একই অভিজ্ঞতা সুবীর চক্রবর্তী, রত্না মজুমদারেরও। রত্নাদেবী বলেন, ‘‘কিছুটা আঘাত তো লেগেছেই। পাশাপাশি ওই ভি়ড়, অত মানুষের চিৎকার, সব মিলিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম।’’
এ দিনের এই দুর্ঘটনাকে লঘুভাবে নেওয়া একেবারেই ঠিক নয় বলে মনে করছেন রেলের প্রাক্তন কর্তারা। তাঁদের অনেকেরই মতে, মেট্রোয় যাত্রী সংখ্যা উত্তরোত্তর বাড়লেও সেই অনুপাতে বাড়েনি পরিকাঠামো। চলমান সিঁড়িতে দুর্ঘটনাও নতুন নয়। এ ভাবেই এক দিন যাত্রী সুরক্ষা বড়সড় ধাক্কা খেতে পারে বলে আশঙ্কা তাঁদের।