পাঁচ বছর বিদেশে কাটিয়ে সদ্য কলকাতায় ফিরেছেন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী তপন দত্ত। সম্প্রতি মেট্রো ধরতে এসপ্ল্যানেড স্টেশনে নেমেছিলেন তিনি। উত্তর গেট দিয়ে ঢোকার মুখে বালির বস্তার আড়ালে রাইফেল হাতে কয়েক জন নিরাপত্তারক্ষী দেখে ভেবেছিলেন, পাল্টে গিয়েছে মেট্রোর নিরাপত্তা ছবিটা। কিন্তু প্ল্যাটফর্মে ঢোকার মুখেই সেই ধারণা বদলে গেল।
কোথায় কী! খারাপ হয়ে পড়ে লাগেজ স্ক্যানার। খোশমেজাজে গল্প করার ফাঁকে ইচ্ছে হলে যাত্রীদের মালপত্র পরীক্ষা করছেন কয়েক জন পুলিশকর্মী। বাকিরা গেট পেরিয়ে যাচ্ছেন অনায়াসে।
বর্তমানে কলকাতায় মেট্রো স্টেশন ২৩টি। নিরাপত্তার দিকে থেকে কম-বেশি গুরুত্বপূর্ণ সবগুলিই। এর মধ্যে তিনটি স্টেশনে বালির বাঙ্কার তৈরি করে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল হাতে রক্ষী দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। আর ১৯টি স্টেশনে দীর্ঘ দিন ধরে মাল পরীক্ষার স্ক্যানার ও মেটাল ডিটেক্টর খারাপ হয়ে পড়ে। স্বভাবতই যাত্রীরা প্রশ্ন তুলেছেন, যেখানে বেশির ভাগ স্টেশনে ন্যূনতম স্ক্যানার যন্ত্রও খারাপ, সেখানে তিনটি স্টেশনে সশস্ত্র বালির বাঙ্কার বানিয়ে কী হবে? মেট্রোর কর্তাদেরও এতে কোনও হেলদোল নেই বলে অভিযোগ তাঁদের।
মেট্রোর বক্তব্য, যাত্রী-নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে জানুয়ারি থেকে কালীঘাট, এসপ্ল্যানেড ও টালিগঞ্জ স্টেশনে তৈরি হয়েছিল বাঙ্কার। তাতে থাকছেন রেল সুরক্ষার বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কমান্ডো বাহিনীর চার সদস্য। সাধারণত বিভিন্ন জঙ্গি উপদ্রুত এলাকায় এমনটা দেখা যায়।
মেট্রো রেল পুলিশ সূত্রের খবর, ২৬ জানুয়ারির আগে জঙ্গি নাশকতার আশঙ্কায় ওই তিনটি স্টেশনে বাঙ্কারের নিরাপত্তা দেওয়া হয়। তার পরে যাত্রী-স্বার্থে প্রহরার ওই চৌকি আর তোলা হয়নি। মেট্রো সূত্রের খবর, বর্তমানে কলকাতার ২৩টি স্টেশনে ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার দায়িত্বে যৌথ ভাবে রয়েছে আরপিএফ এবং কলকাতা পুলিশের মেট্রো রেল পুলিশ। প্রতিটি স্টেশনে ঢোকার গেটে থাকেন কলকাতা পুলিশের নিরাপত্তাকর্মীরা।
মেট্রোর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশকর্মীদের দাবি, ১৯টি স্টেশনেই স্ক্যানার যন্ত্র খারাপ থাকায় কোনও যাত্রীর কাছে সন্দেহজনক ব্যাগ দেখলে হাতে হাতেই পরীক্ষা করতে হয়। ওই পরীক্ষা হয় ‘ডোর ফ্রেম মেটাল ডিটেক্টর’ গেট দিয়ে যাত্রীরা ঢোকার আগে। এ ছাড়াও প্রতিটি প্ল্যাটফর্মে মোতায়ন থাকে সশস্ত্র আরপিএফ বাহিনী।
কলকাতা মেট্রো সূত্রে খবর, বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনগুলির হুমকি থাকায় তিন বছর ধরে রেলের জোনগুলিতে যাত্রী-নিরাপত্তায় বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে একটি ‘ইন্টিগ্রেটেড সিকিউরিটি সিস্টেম’ বা ‘আইএসএস’। তার শর্ত মেনেই প্রায় ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৩টি স্টেশনের প্রত্যেকটিতে বসানো হয়েছিল এক্স-রে স্ক্যানার যন্ত্র। মেট্রো সূত্রের খবর, বছর দুয়েকের মধেই চারটি স্টেশন বাদে বাকিগুলিতে ওই যন্ত্র খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু কিছুতেই সেগুলি সারানো যাচ্ছে না।
কেন? মেট্রো সূত্রে খবর, এই ধরনের যন্ত্র মেরামতির দায়িত্ব সরবরাহকারী সংস্থার। তাদের বহু বার বিষয়টি জানানো হয়েছে। কিন্তু তারা উদ্যোগী হয়নি। কী ভাবে সমস্যা মেটানো যায়, তা তাঁরা দেখছেন বলে জানান মেট্রোকর্তারা।
ঘটনায় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেই প্রশ্ন তুলেছেন যাত্রীরা। কোনও রকম পরীক্ষা না করেই লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয়ে যন্ত্রগুলি কেনা হল কেন! সদুত্তর মেলেনি।