সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় দমদম মেট্রো স্টেশন। অপেক্ষারত যাত্রীরা। —নিজস্ব চিত্র।
পর পর তিন দিন ‘ছুটি’ ছিল। শুক্র, শনি এবং রবিবার। শুক্রবার শিক্ষক দিবসের কারণে স্কুল-কলেজ পড়ুয়াদের একটা বড় অংশের যাতায়াত ছিল না। আর শনি এবং রবি সপ্তাহান্ত। বিপুল যাত্রীর চাপ থাকে না। এই তিন দিনে স্বাভাবিকই ছিল মেট্রো পরিষেবা। মেট্রো কর্তৃপক্ষ বিবৃতি জারি করে তা ‘প্রচার’ও করেছিলেন। কিন্তু তিন দিনের ছুটি শেষে সপ্তাহের প্রথম দিনে অফিসকাছারি খুলতেই ফের বিগড়োল মেট্রো! ফের যাত্রীভোগান্তি উত্তর-দক্ষিণে (ব্লু লাইনে)।
সোমবার সাতসকালে কবি নজরুল স্টেশনে মেট্রোর একটি রেক খারাপ হয়ে গিয়েছিল। তার ফলে ব্যাহত হয় ব্লু লাইনের পরিষেবা। দক্ষিণেশ্বর থেকে শহিদ ক্ষুদিরামের দিকে যাওয়ার পথে মহানায়ক উত্তমকুমার বা টালিগঞ্জ স্টেশনের পর থেকে আর মেট্রো চলছিল না। টালিগঞ্জ স্টেশনে নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল যাত্রীদের।
সকাল ৮টা ৪৮ মিনিটে মেট্রোর তরফে বিষয়টি ঘোষণা করার পর এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ব্যাহত ছিল মেট্রো পরিষেবা। সেই সময় দক্ষিণেশ্বর থেকে টালিগঞ্জ পর্যন্তই মেট্রো চলছিল। একই ভাবে দক্ষিণেশ্বরের দিকে যাওয়ার মেট্রোও ছাড়ছিল টালিগঞ্জ থেকে। শহিদ ক্ষুদিরাম থেকে টালিগঞ্জ পর্যন্ত বন্ধই ছিল পরিষেবা।
মেট্রো কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, সবই তো যান্ত্রিক ত্রুটি। যে মুহূর্তে ধরা পড়েছে, পদক্ষেপ করা হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গেই যাত্রীদের নামিয়ে বিষয়টি ঘোষণা করা হয়েছে। তার পর যত দ্রুত সম্ভব যাতে পরিষেবা স্বাভাবিক করা যায়, সেই চেষ্টাই করা হয়েছে।
লাইনে গোলমাল থাকায় টালিগঞ্জ পর্যন্ত পরিষেবাতেও ব্যাঘাত ঘটেছে বলে দাবি যাত্রীদের। অনেকেই জানান, বিভিন্ন স্টেশনে দীর্ঘ ক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে ছিল মেট্রো। ময়দানে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মেট্রোয় ঘোষণা হয়েছে, সিগন্যাল না থাকার কারণে সমস্যা হচ্ছে। আবার জায়গায় জায়গায় ভিড়ের চাপে মেট্রোর দরজা বন্ধ করা যাচ্ছিল না বলেও অভিযোগ উঠেছে।
ব্যস্ত সময়ে ট্রেন চলার ব্যবধান ঠিক রাখতে না পারা নিয়ে যাত্রীদের ক্ষোভ আগে থেকেই ছিল। রেক এবং চালকের অভাবে প্রান্তিক স্টেশন দক্ষিণেশ্বর, নোয়াপাড়া, মহানায়ক উত্তমকুমার এবং শহিদ ক্ষুদিরাম থেকে ট্রেন সময় মতো ছাড়তে না পারার অসুখ ইদানীং চোখে পড়ছে।
চাঁদনি চক স্টেশনে শুভাশিস ঘোষ নামে এক যাত্রী জানান, বরাহনগর থেকে তিনি যে মেট্রোয় এসেছেন, সেটি ছাড়ার কথা ছিল সকাল ১০টা ২৮ মিনিটে। কিন্তু সেটি বরাহনগর স্টেশন ঢোকে ১০টা ৩১ মিনিটে। অর্থাৎ তিন মিনিট দেরি। তার পর নোয়াপাড়া স্টেশনে সেটি মিনিটখানেক ধরে দাঁড়িয়ে ছিল। দমদমে দাঁড়ায় মিনিট ছয়েক (ওই সময় দু’টি মেট্রোর ব্যবধানও ছ’মিনিটের)। বেলগাছিয়াতেও দাঁড়ায় দেড় মিনিটের মতো। শ্যামবাজারে স্বাভাবিক সময় দাঁড়ালেও, শোভাবাজারে আবার দেড় মিনিট দাঁড়িয়েছিল মেট্রো। সেটি অবশ্য ভিড়ের কারণে। তবে পরের স্টেশনগুলিতে (চাঁদনি চক পর্যন্ত) মেট্রো স্বাভাবিক সময় মেনেই দাঁড়িয়েছে। শুভাশিস বলেন, ‘‘বরাহনগর থেকে চাঁদনি চক ২৪ মিনিট লাগার কথা। লাগল ৩৯ মিনিট!’’
কলকাতায় তিন মেট্রোপথের সংযুক্তির খবর যাত্রীদের মধ্যে যতটা উচ্ছ্বাসের জন্ম দিয়েছিল, পরিষেবা সংক্রান্ত ভোগান্তিতে সেই উৎসাহ ইতিমধ্যেই ফিকে হতে শুরু করেছে। ইস্ট-ওয়েস্ট (গ্রিন লাইন) এবং নোয়াপাড়া-বিমানবন্দর (ইয়েলো লাইন) মেট্রোর পরিষেবা নিয়ে যাত্রীদের ততটা অভিযোগ না থাকলেও সাবেক উত্তর-দক্ষিণ মেট্রো নিয়ে ক্ষোভের পারদ চড়ছে।
চার দশকের পুরনো মেট্রো হাজার বাধা-বিপত্তি পার করলেও এতটা ছন্নছাড়া আগে কখনও দেখায়নি বলে অভিযোগ যাত্রীদের। নতুন পরিষেবা খুলে দেওয়ার সময়ে দেশের সবচেয়ে পুরনো মেট্রোপথের এত দুর্দশা হবে কেন, প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা। বিকাশ নামে এক যাত্রী বলেন, ‘‘এই লাইনে (উত্তর-দক্ষিণে) রোজ এই ঘটনা ঘটে চলেছে। এত কাল মেট্রোয় যাতায়াত করায় সময় বাঁচত। এখন মেট্রোয় যাব বলে হাতে অনেকটা সময় নিয়ে বেরোতে হয়। কারণ কেউ তো জানে না কখন কী হবে!’’
পুজো আসন্ন। ফলে নানা প্রয়োজনে মেট্রোয় সফরের তাগিদ বাড়ছে। এই অবস্থায় যাত্রী পরিষেবায় ভোগান্তি মেট্রো কর্তৃপক্ষের কাছেও যথেষ্ট অস্বস্তির। মেট্রোর একটি সূত্রের বক্তব্য, পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে। যে সব কারণে সমস্যা দেখা দিচ্ছে, সেখানে ধরে ধরে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। তবে কত দিনে মেট্রোর পরিষেবা স্বাভাবিক হবে, তা নিয়ে কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট ভাবে কিছু জানাতে পারেননি।