Calcutta News

কসবার ফ্ল্যাটে মহিলা অফিসার খুন, আততায়ী কি ঘনিষ্ঠ কেউ?

শনিবার বিকেল সওয়া ৫টা নাগাদ দীর্ঘ ক্ষণ দরজা ধাক্কা দেওয়ার পর যখন দরজা কেউ খুলল না, তখন পড়শির কাছে রাখা চাবি খুলে ফ্ল্যাটে ঢুকে ঠিক এ রকম অবস্থাতেই ছাপ্পান্ন বছরের শীলা চৌধুরীকে দেখতে পান তাঁর এক পুরনো বন্ধু।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৮ ২৩:১৪
Share:

শীলা চৌধুরী। —নিজস্ব চিত্র।

লন্ডভন্ড ঘর। বিছানা ওলটপালট। আলমারিও যেন কেউ হাতড়েছে। পাঁচতলা বাড়ির তিনতলার ফ্ল্যাট। রান্না ঘরের মেঝেতে পড়ে আছেন প্রৌঢ়া। পরনে নাইটি। পাশেই পড়ে রয়েছে আংশিক ভাবে পোড়া একটি নাইটি। রান্নাঘরে রাখা গ্যাস সিলিন্ডারের পাইপ যেটা ওভেনের সঙ্গে যোগ করা থাকে, সেটা খোলা।

Advertisement

শনিবার বিকেল সওয়া ৫টা নাগাদ দীর্ঘ ক্ষণ দরজা ধাক্কা দেওয়ার পর যখন দরজা কেউ খুলল না, তখন পড়শির কাছে রাখা চাবি খুলে ফ্ল্যাটে ঢুকে ঠিক এ রকম অবস্থাতেই ছাপ্পান্ন বছরের শীলা চৌধুরীকে দেখতে পান তাঁর এক পুরনো বন্ধু। নিথর দেহ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, দেহে প্রাণ নেই। সঙ্গে সঙ্গে খবর দেওয়া হয় কসবা থানায়। পুলিশকর্মীরা এসেই বুঝতে পারেন, অজ্ঞাত আততায়ীর হাতে খুন হয়েছেন শীলা।

কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা ন্যাটমোর উচ্চপদাধিকারী শীলা এমনিতে থাকেন সল্টলেকে নিজের দিদির সঙ্গে। একমাত্র ছেলে থাকেন আমেরিকাতে। প্রতি উইকএন্ডে তিনি আসতেন টেগোর পার্কের এই ফ্ল্যাটে। আর তাই জরুরি ভিত্তিতে কোনও প্রয়োজনের জন্য ফ্ল্যাটের একটা চাবি রাখা থাকত এক প্রতিবেশীর কাছে।

Advertisement

ঘটনাস্থলে তদন্তকারীরা। দেখুন ভিডিয়ো

অন্য শনিবারের মতো এ দিনও তিনি এসেছিলেন নিজের ফ্ল্যাটে সকালবেলাতেই। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিকেল ৪টে নাগাদ, পরিচারককে কিছু কেনাকাটা করে আনতে বলেন। পরিচারক মালপত্র কিনে ফেরার পথেই দেখা হয়ে যায়, শীলার এক পুরনো বন্ধুর সঙ্গে। সেই বন্ধু প্রায়ই আসেন শীলার এই টেগোর পার্কের ফ্ল্যাটে। সেই সূত্রেই পরিচারক চিনতেন এই বন্ধুকে। এ দিন বিকেলেও তিনি শীলার কাছেই যাচ্ছিলেন।

তদন্তকারীদের দেওয়া প্রাথমিক বয়ান অনুসারে, পরিচারক এবং ওই বন্ধু এসে কলিং বেল বাজান। কিন্তু কলিং বেল বাজেনি। তখন তাঁরা দরজায় ধাক্কাধাক্কি শুরু করেন। কিন্তু তার পরও কোনও সাড়া না পেয়ে তাঁরা শীলার প্রতিবেশীর কাছ থেকে চাবি নিয়ে দরজা খোলেন।

আরও পড়ুন
ফেসবুকের ‘বান্ধবী’র ফাঁদে পড়ে ১৯ লক্ষ টাকা উধাও!

কসবা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছেই অদ্ভুত একটা বিষয় দেখে। সিলিন্ডারের নবের সঙ্গে একটা গামছা দড়ির মত করে আটকানো। আর সেই দড়িতে টান পরলেই খুলে যাবে নবটি। হু হু করে গ্যাস বার হতে শুরু করবে। সেই গ্যাস মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে ঘরে। কারণ তার আগেই আততায়ী ওভেনের সঙ্গে সংযোগকারী গ্যাসের পাইপ খুলে রেখে দিয়েছে।

কসবা থানার তদন্তকারীদের কাছ থেকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন লালবাজারের হোমিসাইড শাখার গোয়েন্দারা। প্রাথমিক তদন্তের পর তাঁদের অনুমান, মাথায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করে খুন করা হয়েছে শীলাকে। তার পর তিনি অচৈতন্য হয়ে পড়লে, বালিশের মত কিছু দিয়ে শ্বাসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে।

আরও পড়ুন
পুলিশকর্মীকে গুন্ডা দিয়ে মার লালবাজারের কাছেই, অভিযুক্ত স্ত্রী

গোয়েন্দাদের সন্দেহ, শোওয়ার ঘরে খুন করে দেহ টেনে নিয়ে আসা হয়েছে রান্নাঘরে। যে ভাবে সিলিন্ডারের পাইপ খোলা ছিল, তাতে তদন্তকারীদের অনুমান, আততায়ী গোটা ঘটনাটিকে একটি দুর্ঘটনার চেহারা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু গ্যাস খুলে আগুন দিয়ে অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যু— এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করার আগেই তাড়াহুড়ো করে আততায়ী বা আততায়ীরা পালায়।

আর তাই তদন্তকারীদের ধারণা, লুঠের উদ্দেশ্যে এই খুন নয়। এর পেছনে রয়েছে কোনও ব্যক্তিগত আক্রোশ বা শত্রুতা। কিন্তু ঘর লন্ডভন্ড করে পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে।

কলকাতা পুলিশের তদন্তকারীরা মৃতের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে বোঝার চেষ্টা করছেন শীলার কোনও শত্রু ছিল কি না। পাশাপাশি, শীলার মোবাইল কল ডিটেলস-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তকারীরা মনে করছেন, বিকেল ৪টে থেকে ৫টার মধ্যে খুন হয়েছেন শীলা। তদন্তকারীদের সন্দেহ, আততায়ী শীলার পরিচিত। পরিকল্পনা করেই কলিং বেলের সুইচ অফ করে দিয়েছিল খুনি। এই তথ্যের ভিত্তিতেই এক দিকে পরিচারক এবং আরও কয়েক জনকে জেরা চলছে। সেই সঙ্গে তদন্তকারীরা এটাও জানার চেষ্টা করছেন, কারা ওই বাড়িতে শনিবার বিকেল ৪টে থেকে ৫টার মধ্যে এসে ছিলেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement