নেই-রাজ্য চিত্তরঞ্জন শিশুসদনে হয় না গুরুত্বপূর্ণ রক্ত পরীক্ষাও!

ব্লাডব্যাঙ্ক নেই! অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ রক্ত পরীক্ষাও হয় না। ইমার্জেন্সিতে আসা শিশুরোগীদের পরিষেবা দেওয়ার জন্য নার্স থাকেন না। অথচ ৯০ শয্যার এই সরকারি শিশু হাসপাতালে পেডিয়াট্রিক ও নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট রয়েছে। সেখানে মরণাপন্ন শিশু থাকে।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৭ ০১:০০
Share:

ব্লাডব্যাঙ্ক নেই! অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ রক্ত পরীক্ষাও হয় না। ইমার্জেন্সিতে আসা শিশুরোগীদের পরিষেবা দেওয়ার জন্য নার্স থাকেন না। অথচ ৯০ শয্যার এই সরকারি শিশু হাসপাতালে পেডিয়াট্রিক ও নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট রয়েছে। সেখানে মরণাপন্ন শিশু থাকে।

Advertisement

এমনই হাল কলকাতার প্রায় কেন্দ্রস্থলে, খোদ মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিধানসভা এলাকার মধ্যে স্থিত চিত্তরঞ্জন শিশুসদনের।

এই হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শিশুদের একটি বড় অংশই হল অ্যানিমিয়া, থ্যালাসেমিয়া ও রক্তের ক্যানসারে আক্রান্ত। তাদের ঘনঘন রক্তের প্রয়োজন হয়। তখন দিনে বা রাতে অভিভাবকদের দিশেহারা হয়ে ছুটতে হয় এসএসকেএম কিংবা মানিকতলা ব্লাডব্যাঙ্কে। সেখানে রক্ত নাও পাওয়া যেতে পারে বা সকলের ছোটার মতো লোকবল নাও থাকতে পারে। তখন তাঁদের উপরওয়ালাই ভরসা। এই হাসপাতালেরই অন্য একটি অংশ হল চিত্তরঞ্জন সেবাসদন। সেখানে প্রসূতিরা ভর্তি থাকেন। রোজ সিজার হয়। তাঁদেরও প্রচুর রক্তের প্রয়োজন। অথচ হাসপাতালে ব্লাডব্যাঙ্ক নেই।

Advertisement

সমস্যা সেখানেই মিটছে না। হাসপাতালে এখনও ডেঙ্গি পরীক্ষা, বায়োপ্সি, ব্লাড ও ইউরিন কালচার, অ্যান্টিবডি টেস্ট, রক্তের পটাশিয়াম-ম্যাগনেসিয়ামের মতো অতি দরকারি সব পরীক্ষা হয় না। তার জন্য যেতে হয় কালীঘাটের একটি বেসরকারি প্যাথোলজিক্যাল ল্যাবরেটরিতে। হাসপাতালের সঙ্গে তাদের পিপিপি মডেলে চুক্তি রয়েছে। কিন্তু হাসপাতালের চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ এই বেসরকারি ল্যাবরেটরির রিপোর্টে সন্তুষ্ট নন। অথচ স্বাস্থ্য দফতরের সিদ্ধান্তের উপরে তাঁরা কোনও কথাও বলতে পারছেন না।

চিত্তরঞ্জন শিশুসদনের অবস্থায় অস্বস্তিতে রয়েছে স্বাস্থ্য দফতরও। কিন্তু পরিস্থিতি বদলাচ্ছে না। রাজ্যে মা ও শিশুর স্বাস্থ্য নজরদারিতে গঠিত টাস্ক ফোর্সের প্রধান ত্রিদিব বন্দ্যোপাধ্যায় এ ব্যাপারে বলেন, ‘‘হাসপাতালের অনেক উন্নতি হয়েছে। কিছু ফাঁক রয়েছে। সেটাও পূরণ হবে। এক বারে তো সব সম্ভব নয়।’’

হাসপাতালের চিকিৎসকদের একটি বড় অংশের অভিযোগ, হাসপাতালের আশপাশে একাধিক বেসরকারি ব্লাডব্যাঙ্ক রয়েছে। তাদের সঙ্গে হাসপাতালের একটা চক্রের যোগ রয়েছে। সেই চক্র এত শক্তিশালী যে, তারাই এত দিন ব্লাডব্যাঙ্ক তৈরিতে বাধা দিয়েছে। অধ্যক্ষ সুতপা গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘কিছু লোক ব্লাডব্যাঙ্ক হতে দিচ্ছিল না। অনেক লড়াই করে শেেষ একটি ব্লাড স্টোরেজ ইউনিটের অনুমোদন পাওয়া গিয়েছে। কিছু কাজ বাকি আছে। তা মিটলেই চালু হয়ে যাবে।’’ গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাগুলির সম্পর্কে সুতপাদেবী বলেন, ‘‘হাসপাতালে যথেষ্ট লোক দিলে সব টেস্ট করা যেত। এখন মাত্র এক জন প্যাথোলজিতে আছেন। তিনি কিছুই করতে চান না। অনেক বার হুঁশিয়ারি দিয়েও কিছু হচ্ছে না।’’

ইমার্জেন্সিতে নার্স না থাকার জন্য শিশুদের ইঞ্জেকশন দিতে, চ্যানেল করতে, ওষুধ খাওয়াতে, ব্যান্ডেজ বাঁধতে, ওজন বা রক্তচাপ দেখতে অসম্ভব সমস্যা হচ্ছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানান চিকিৎসকেরা। তাঁদের কথায়, প্রতি দিন ইমার্জেন্সিতে প্রায় ২৫০ শিশু আসে। নার্স ছাড়া পরিষেবা দেওয়া অসম্ভব। অথচ কর্তৃপক্ষ জানান, নার্সের সংখ্যা না বাড়লে তাঁরা নিরুপায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন