বেনিয়াপুকুরে প্রকাশ্যে গুলি, জখম দুই যুবক

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, সোমবার রাত দশটা নাগাদ বেনিয়াপুকুর থানা এলাকার পাঁচ নম্বর মেহের আলি রোডে নিজের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে বন্ধুর সঙ্গে কথা বলছিল হায়দার আহমেদ ওরফে লুল্লাহ হায়দার নামে এলাকার এক কুখ্যাত দুষ্কৃতী। সেই সময়ে ছ’সাত জন দুষ্কৃতী চারটি মোটরবাইকে চেপে এসে হায়দারকে লক্ষ করে গুলি ছোড়ে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৭ ০১:২৯
Share:

চাটনি পারভেজ এবং হায়দার আহমেদ

ক্রাইম কনফারেন্সে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন খোদ পুলিশ কমিশনার। বিভিন্ন থানাকে সতর্ক করার পাশাপাশি বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশের ব্যর্থতা নিয়ে ক্ষোভও জানিয়েছিলেন। তবু কলকাতায় অবৈধ অস্ত্রের রমরমা যে দিনদিন বেড়েই চলেছে, আরও এক বার তার প্রমাণ মিলল সোমবার রাতে বেনিয়াপুকুরের মেহের আলি রোডে স্থানীয় দুই যুবকের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায়। জখম দুই যুবক একবালপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ওই ঘটনায় পুলিশ মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, সোমবার রাত দশটা নাগাদ বেনিয়াপুকুর থানা এলাকার পাঁচ নম্বর মেহের আলি রোডে নিজের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে বন্ধুর সঙ্গে কথা বলছিল হায়দার আহমেদ ওরফে লুল্লাহ হায়দার নামে এলাকার এক কুখ্যাত দুষ্কৃতী। সেই সময়ে ছ’সাত জন দুষ্কৃতী চারটি মোটরবাইকে চেপে এসে হায়দারকে লক্ষ করে গুলি ছোড়ে। পুলিশ জানিয়েছে, দুষ্কৃতীরা মোট পাঁচ রাউন্ড গুলি চালায়। হায়দারের পায়ে তিনটি ও হাতে একটি গুলি লাগে। তার বন্ধু চাটনি পারভেজেরও বাঁ পায়ে গুলি লাগে। স্থানীয় বাসিন্দারা আহত দু’জনকে প্রথমে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখান থেকে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় একবালপুরের বেসরকারি হাসপাতালে। সোমবার রাতে হায়দার ও পারভেজের হাত ও পা থেকে গুলি বার করেন চিকিৎসকেরা। এখন তাদের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর।

পুলিশ জানিয়েছে, ব্যবসা সংক্রান্ত পুরনো শত্রুতার জেরে দীর্ঘদিন ধরেই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ঝামেলা চলছিল। মাস দুয়েক আগে মেহের আলি রোডের বাসিন্দা, মিরাজুল সাগর ও ফয়জল সাগর নামে দুই দুষ্কৃতী হায়দারের অনুগামী শাহরুখকে ব্যাপক মারধর করে বলে অভিযোগ। এর বদলা নিতে দিন কয়েক আগে হায়দারের নেতৃত্বে তার অনুগামীরা মিরাজুল ও ফয়জলকে পাল্টা মারে বলে এলাকা সূত্রে খবর। পুলিশ জানায়, হায়দারের উপরে প্রতিশোধ নিতে সোমবার রাতে তপসিয়া থেকে আলতাফ নামে এক দুষ্কৃতীকে ভাড়া করে আনা হয়। হায়দারের পরিবারের তরফে মিরাজুল, ফয়জল ও আলতাফ-সহ সাত জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, গুলিবিদ্ধ হায়দার আহমেদের বিরুদ্ধে পুলিশের খাতায় একাধিক অভিযোগ রয়েছে। বছর দুয়েক আগে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে হায়দার। এখন সে নির্মাণ ব্যবসায় যুক্ত। মিরাজুল ও ফয়জলেরও নির্মাণ ব্যবসা। দু’পক্ষের বিবাদের সূত্রপাতও ওই ব্যবসাকে কেন্দ্র করেই। হায়দারের সঙ্গেই থাকে চাটনি পারভেজ। তার বিরুদ্ধেও পুলিশের খাতায় অভিযোগ রয়েছে।

বেনিয়াপুকুরে গুলি চলার ঘটনা নতুন নয়। গত বছরের জুন মাসে বাড়ি থেকে ডেকে এনে মল্লিকবাজার মোড়ে গুলি করে খুন করা হয় বেনিয়াপুকুরের ব্যবসায়ী মহম্মদ নুরকে। গত ডিসেম্বরে বেনিয়াপুকুরের সৈয়দ আহমেদ রোডে তিন যুবক স্থানীয় জুতো ব্যবসায়ী মহম্মদ পাপ্পুকে লক্ষ করে দু’রাউন্ড গুলি চালায়। শহরে গুলি চালানোর ঘটনা পরপর ঘটতে থাকায় দুষ্কৃতী দমনে কলকাতা পুলিশের দক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষত, অপরাধ দমন সংক্রান্ত বৈঠকে পুলিশ কমিশনার বেআইনি অস্ত্র বাজেয়াপ্ত করার কথা বারবার বললেও তা যে মানা হচ্ছে না, সোমবার রাতের ঘটনাই তা দেখিয়ে দিল। পুলিশের একাংশের দাবি, শাসক দলের ছত্রচ্ছায়ায় থাকার জন্য দুষ্কৃতীদের ধরতে সাহস পাচ্ছে না পুলিশ। যদিও স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক সুব্রত মুখোপাধ্যায় জানান, অভিযুক্তেরা কেউ দলের সঙ্গে যুক্ত নয়। লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘এই ঘটনায় অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। শহরে বিভিন্ন জায়গায় অস্ত্র উদ্ধারের কাজও শুরু হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement