থমথমে: কেষ্টপুরে ফুটব্রিজ থেকে নেমে এমনই নির্জন রাস্তা ধরে ফেরার পথে হেনস্থা হতে হয় এক তরুণীকে। ছবি: শৌভিক দে
বুধবার রাতে গড়িয়া এলাকায় এক অটোচালকের হাতে শ্লীলতাহানির পরে পুলিশে অভিযোগ জানাতে গিয়ে অটোচালকদের ‘দাদাগিরির শিকার’ হয়েছেন এক মহিলা ও তাঁর ছেলে। এর পরেই শহরে মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে, কলকাতা কি তবে দুষ্কৃতীদের মুক্তাঞ্চল হয়ে উঠল? বৃহস্পতিবার কলকাতা পুলিশের মাসিক ক্রাইম কনফারেন্সে লালবাজারও ঠারেঠোরে মেনে নিল, যে শহরে দুষ্কৃতী দল বেপরোয়া হয়ে উঠছে। গুন্ডা দমনে কলকাতা পুলিশের সক্রিয়তা কতটা তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে বাহিনীর অন্দরে। লালবাজার সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার মাসিক ক্রাইম কনফারেন্সে এ ব্যাপারে বাহিনীকে সক্রিয় হতে নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার।
সম্প্রতি কড়েয়ায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় এক জনের। এন্টালিতে এলাকা দখল এবং প্রোমোটিংকে কেন্দ্র করে পরপর গুলি চলেছে দুষ্কৃতীদের মধ্যে। এ দিন ওই দুই থানার ওসিকে সতর্ক করা হয়েছে বলেও খবর।
এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘শহরে গুন্ডারা যে ক্রমশ বেপরোয়া হয়ে উঠছে সেই সতর্ক বার্তাই এ দিন বাহিনীকে দিয়েছেন সিপি।’’ লালবাজারের খবর, পুলিশ কমিশনার অফিসারদের বলেছেন, কোথাও দুষ্কৃতী দল তৈরির খবর পেলেই দ্রুত ব্যবস্থা নিন। হাজতে চালানের পাশাপাশি গুন্ডাদের হাতে থাকা বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে। তবে অনেকেরই প্রশ্ন, কেন দুষ্কৃতী দমনের জন্য সিপি-র নির্দেশ প্রয়োজন হচ্ছে? গুন্ডা দমন তো পুলিশের প্রাথমিক কাজ।
প্রসঙ্গত, আগে পুরভোটের দিন গিরিশ পার্কে দুষ্কৃতী গোপাল তিওয়ারির দলবলের হাতে পুলিশ অফিসার জগন্নাথ মণ্ডলের গুলিবিদ্ধ হওয়া এবং হরিদেবপুরে দু’দল দুষ্কৃতীর গুলির লড়াইয়ে এক যুবকের মৃত্যুর পরে গুন্ডা দমনে সক্রিয় হয়েছিল লালবাজার। কিন্তু পরবর্তী কালে সেই অভিযান থিতিয়ে পড়ে। পুলিশ সূত্রের খবর, গোয়েন্দা বিভাগের গুন্ডা দমন শাখাই এ সব অভিযানের নেতৃত্ব দিত। কিন্তু গত বছর দুয়েক ধরে গুন্ডা দমন শাখার সক্রিয়তাও কমেছে।
এ দিনের বৈঠকে গত রবিবার প্রিন্স গোলাম মহম্মদ শাহ রোডের গোলমালের প্রসঙ্গও উঠে এসেছে বলে খবর। ওই ঘটনার পিছনে মাদক ব্যবসা ও এক মাদকাসক্তের মৃত্যুই দায়ী ছিল। এ দিন ক্রাইম কনফারেন্সে রাজীব কুমার মাদকাসক্তদের পুনর্বাসন প্রকল্পে সহযোগিতায় নতুন মোবাইল অ্যাপ চালু করার কথা জানিয়েছেন। ‘শুদ্ধি’ নামে ওই অ্যাপে প্রত্যেক থানা নিজেদের এলাকার মাদকাসক্ত যুবক এবং তাদের কোন নেশামুক্তি কেন্দ্রে পাঠানো হচ্ছে সেই তথ্য জমা করবে। কী ভাবে ওই যুবকদের মূল স্রোতে ফেরানো যায় সে ব্যাপারেও পরামর্শ চেয়েছেন সিপি।
পুলিশের একাংশ জানিয়েছেন, শুধু সিপি-র বকুনিও নয়, প্রশংসাও জুটেছে এ দিন। তিলজলায় খুনের ঘটনা ও নেতাজি নগরে পরপর মোটরবাইক চুরির কিনারা করায় তারিফ করেছেন সিপি। অপরাধীদের সাজা দিতে সক্রিয় হতে বলেছেন তিনি। বছর কয়েক আগে কালীঘাটে এক বিদেশিনিকে ধর্ষণের ঘটনায় সম্প্রতি দোষী যুবকের সাজা দেওয়া হয়েছে। সেই ঘটনারও উল্লেখ করেন সিপি।