এলাকা দখলকে কেন্দ্র করে দুষ্কৃতী তাণ্ডব তিলজলায়

রাজারহাট-নিউটাউনের পরে এ বার তিলজলা। সিন্ডিকেট ব্যবসাকে কেন্দ্র করে এলাকা দখলের লড়াই। তার জেরেই কলকাতা শহরে ফের গুলি চলার অভিযোগ উঠল। সংঘর্ষ বাধল এলাকারই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে। যদিও পুলিশ গণ্ডগোলের কথা স্বীকার করলেও গুলি চালানোর কথা মানতে নারাজ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৫ ১০:৪৩
Share:

রাজারহাট-নিউটাউনের পরে এ বার তিলজলা। সিন্ডিকেট ব্যবসাকে কেন্দ্র করে এলাকা দখলের লড়াই। তার জেরেই কলকাতা শহরে ফের গুলি চলার অভিযোগ উঠল। সংঘর্ষ বাধল এলাকারই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে। যদিও পুলিশ গণ্ডগোলের কথা স্বীকার করলেও গুলি চালানোর কথা মানতে নারাজ।

Advertisement

ঘটনার সূত্রপাত বুধবার রাতে। স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরেই এলাকা দখলের এই লড়াই চলছে। তার জেরেই ওই দিন রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ তিলজলার কলোনি বাজার, এস এন রায় রোডের উপর শুরু হয়েছিল দুই পাড়ার দুই গোষ্ঠীর খণ্ডযুদ্ধ। পরিস্থিতি সামাল দিতে রাতেই এলাকায় বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করতে হয়। এলাকার প্রতিটি গলিতে টহল দিতে হয়েছে লাঠিধারী পুলিশকে। কখনও উত্তেজিত জনতাকে সরাতে তাড়াও করতে হয়েছে পুলিশকে। সাধারণ বাসিন্দারা ভয়ে দরজা-জানলা বন্ধ করে দিয়েছিলেন।

বৃহস্পতিবার সকালেও তিলজলার ওই এলাকায় রয়েছে চাপা উত্তেজনা। দুটি পাড়ার মোড়ে রয়েছে পুলিশি পাহারা। কেউই আগের দিনের রাতের ঘটনা সম্পর্কে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি হননি। কী হয়েছিল রাতে? প্রশ্ন করলে একটাই উত্তর এসেছে, ‘‘আগে কোনও দিন এলাকায় গুলি চলতে দেখিনি। জানি না এবার আরও কত কী দেখতে হবে?’’

Advertisement

আবার সুনীল নগর কলোনি এবং এস এন রায় রোড বস্তির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বাসিন্দা জানান, এলাকায় প্রমোটারি ব্যবসাকে কেন্দ্র করেই তৈরি হয়েছে বিভিন্ন সিন্ডিকেট। আর তার দখলদারি নিয়েই সুনীল নগর কলোনির অপু দত্ত এবং এস এন রায় রোডের পাপ্পুর মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে গণ্ডগোল চলছে। কিন্তু পুলিশ কর্তারা এই ধরণের অভিযোগ সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করতে রাজি নন। তবে এলাকার তৃণমূল বিধায়ক তথা মন্ত্রী জাভেদ খানও অবশ্য দুই দলের মধ্যে গণ্ডগোলের কথা মানলেও গুলি চালানোর কথা অস্বীকার করেছেন।

বরং জাভেদ বলেন, ‘‘অপু সিপিএম করত। দলেরই কিছু ধান্দাবাজ ছেলেদের ধরে তৃণমূলে ঢোকার চেষ্টা করছে। তা নিয়েই দক্ষিণ কলকাতা যুব তৃণমূলের সম্পাদক সন্তোষ রায়ের সঙ্গে গোলমাল। পুলিশকে বলেছি দুই দলের অভিযুক্তকেই গ্রেফতার করতে।’’

পুলিশ সূত্রের খবর, বুধবার রাতে কলোনি বাজার এলাকার বাসিন্দা এক মহিলা তাঁর স্বামীর সঙ্গে মোটরবাইকে চেপে বাড়ি ফিরছিলেন। অভিযোগ সেই সময় এস এন রায় রোডের বাসিন্দা অজয় প্রসাদ ওরফে চোলাই পাপ্পু এবং তার দুই শাগরেদ একটি মোটরবাইকে চেপে এসে ওই দম্পতির পথ আটকায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই দম্পতির অভিযোগ, পাপ্পু ওই মহিলাকে টেনে মোটরবাইক থেকে নামিয়ে দেন। এরপরে তাঁর স্বামীর কপালে রিভলভার ঠেকিয়ে প্রাণে মারার হুমকি দেয়। চেঁচামেচিতে কলোনি বাজারের আরও কিছু বাসিন্দা বেরিয়ে পড়লে পাপ্পুরা চম্পট দেয়। তবে স্থানীয়েরা সনৎ হালদার নামে এক জনকে ধরে বেধড়ক পেটাতে শুরু করে। খবর পেয়ে তিলজলা থানার পুলিশ এসে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। বাসিন্দাদের অভিযোগ এরপরেই শূন্যে দুই রাউন্ড গুলি চালায় চোলাই পাপ্পু।

যদিও চোলাই পাপ্পুর পরিবারের অভিযোগ, তাঁদের বাড়িতে হামলা চালানো হয়। পাপ্পুর স্ত্রীর গায়ে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে মারারও চেষ্টা করা হয়। পাপ্পুর স্ত্রী লক্ষ্মীদেবী বলেন, ‘‘পাপ্পু বাড়িতেই ছিল না। সুনীল নগর কলোনির কয়েক জন লোক এসে আমাদের বাড়িতে চড়াও হয়েছিল।’’ স্থানীয় সূত্রের খবর, গোলমালের মূল কারণ সুনীল নগর কলোনির বাসিন্দা অপু দত্ত এবং চোলাই পাপ্পুর এলাকা দখলকে কেন্দ্র করেই। দু’জনেই শাসকদলের দুই নেতার আশ্রিত বলেও অভিযোগ। তাই এলাকার সমস্ত প্রমোটারি কার কথায় চলবে তা নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই দু’জনের দলবলের মধ্যে গণ্ডগোল চলছে।

স্থানীয়েরা জানান বুধবার রাতে যে দম্পতিকে চোলাই পাপ্পুরা পথ আটকে ছিল সেই ব্যক্তি অপুর ঘনিষ্ঠ বলেই স্থানীয় সূত্রের খবর। যদিও বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে অপু কিংবা পাপ্পুর কারও দেখা মেলেনি। তবে সুনীল নগর কলোনির একটি ক্লাবে গিয়ে অপুর ঘনিষ্ঠ কয়েক জনের দেখা মিললেও তাঁরা কোনও কথা বলতে রাজি হননি। শুধু ওইটুকুই তাঁরা বলেন, ‘‘যা ঘটেছে সেই বিষয়ে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী জাভেদ খানকে অভিযোগ জানাবো।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন