কামারহাটির এই দোকানেই চলেছে তাণ্ডব। ঘটনার পরে এলাকায় আতঙ্কিত বাসিন্দারা। নিজস্ব চিত্র
তোলাবাজি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনা ছড়াচ্ছিল এলাকায়। অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন বাসিন্দারা। অভিযোগ, তাদের বিরোধিতা করলে ‘লাশ পড়ে যাবে’ বলে হুমকিও দিয়েছিল ওই দুষ্কৃতীরা। এবং সেই হুমকি যে ফাঁকা বুলি নয়, সোমবার রাতে তা হাড়ে হাড়ে টের পেল ব্যারাকপুরের সদর বাজার এলাকা। দুষ্কৃতীদের গুলিতে গুরুতর জখম হলেন এলাকার এক ব্যবসায়ী। কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি এখন চিকিৎসাধীন।
এই ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার রাস্তায় নামেন স্থানীয় বাসিন্দারা। দোকানপাট বন্ধ রাখেন ব্যবসায়ীরা। এই ঘটনায় তিন জনকে ধরেছে পুলিশ। কিন্তু শিবু যাদব বলে যার বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ, সে এখনও ধরা পড়েনি। এলাকাবাসীর একাংশের দাবি, শিবু ও তার দলবলকে স্থানীয় এক তৃণমূল নেতা মদত দিচ্ছেন। দলের অন্দরেও কেউ কেউ এই অভিযোগ তুলেছেন। তবে তৃণমূল নেতৃত্ব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। পুলিশের বক্তব্য, দু’টি পাড়ার মধ্যে গণ্ডগোলের জেরেই শেখ চাঁদু নামে ওই ব্যবসায়ী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রের খবর, সদর বাজারে চাঁদুর মাছের ব্যবসা রয়েছে। সোমবার রাত পৌনে ১১টা নাগাদ ওষুধ কিনতে বেরিয়েছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিল তাঁর ছেলে। সেই সময়ে সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছিল সশস্ত্র কিছু দুষ্কৃতী। আর পাড়ার মোড়ে ছিলেন এলাকার কয়েক জন যুবক। হঠাৎই দু’পক্ষের তুমুল বচসা বেধে যায়। আগ্নেয়াস্ত্র বার করে শাসাতে শুরু করে দুষ্কৃতীরা। পাড়ার যুবকেরা পুলিশ ডাকার কথা বলতেই শূন্যে গুলি ছোড়ে তারা।
এর পরে ক্ষিপ্ত বাসিন্দারা তাদের ধাওয়া করলে ওই দুষ্কৃতীরা এলোপাথাড়ি গুলি চালায়। তখন রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে ছিলেন চাঁদু। তাঁর গায়ে গুলি লাগে। তাঁকে লুটিয়ে পড়তে দেখে চলে যায় দুষ্কৃতীরা।
জখম চাঁদুকে স্থানীয় বি এন বসু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে আনা হয় আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। মঙ্গলবার সেখান থেকে তাঁকে এক বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসকেরা জানান, গুলিতে হাতের হাড় ভেঙেছে চাঁদুর। চোট লেগেছে পাঁজরেও। চাঁদুর স্ত্রী শেহনাজ বিবি জানান, তাঁর স্বামীর সঙ্গে কারও কোনও বিরোধ নেই।
ঘটনার পরেই পুলিশ আসে এলাকায়। স্থানীয় বাসিন্দারা তোলাবাজদের নামে অভিযোগ দায়ের করেন।
ব্যারাকপুরের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (জোন ১) কে কারনান জানান, দুই পাড়ার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে গোলমাল চলছিল। তার জেরেই এক পক্ষ গুলি চালায়। ধৃত তিন জনের নাম এস কে রাজ, তপন নায়েক ও রামা জয়সোয়ারা। তবে চাঁদুকে পাওয়া যায়নি।
এ দিন তৃণমূল নেতা অর্জুন সিংহ বলেন, ‘‘এলাকায় কারও দাদাগিরি সহ্য করা হবে না।’’ স্থানীয় তৃণমূল নেতা রবীন ভট্টাচার্যের অভিযোগ, “শিবু যাদব ও তার দলবল দীর্ঘদিন ধরেই এলাকার বাসিন্দাদের উপরে সন্ত্রাস চালাচ্ছে।”
এলাকার তৃণমূল বিধায়ক শীলভদ্র দত্ত বলেন, “পুরো ঘটনা জেনে উঠতে পারিনি। খোঁজ নিয়ে দেখছি।”