দু’মাস পরে বাড়ি ফিরল নিখোঁজ ছাত্র

নবম শ্রেণির ওই ছাত্র নিজেই দিঘায় চলে গিয়েছিল। সেখানকার একটি হোটেলের মালিক ও তাঁর স্ত্রীর আশ্রয়ে ছিল‌ এই ক’দিন। ঘটনাচক্রে সেই হোটেলেই শনিবার ওঠেন অনুভবদের পাশের পাড়া, আজাদগড়ের তিন জন। যাঁরা ওই কিশোর ও তার বাড়ির লোকজনের পরিচিত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:২২
Share:

বাড়িতে বাবার সঙ্গে অনুভব। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

দুশ্চিন্তার মেঘ কেটে বছরের প্রথম দিনই খুশির ঝলমলে আলো যাদবপুরের অশ্বিনী নগরের দাস পরিবারে। টানা ৬৫ দিন নিখোঁজ থাকার পরে, বাড়ির ছেলে অনুভব সোমবার ভোরে ফিরে এসেছে। নবম শ্রেণির ওই ছাত্র নিজেই দিঘায় চলে গিয়েছিল। সেখানকার একটি হোটেলের মালিক ও তাঁর স্ত্রীর আশ্রয়ে ছিল‌ এই ক’দিন। ঘটনাচক্রে সেই হোটেলেই শনিবার ওঠেন অনুভবদের পাশের পাড়া, আজাদগড়ের তিন জন। যাঁরা ওই কিশোর ও তার বাড়ির লোকজনের পরিচিত। অনুভবকে দিঘার ওই হোটেলে দেখে তাঁরা রবিবার সকালে কলকাতায় তার বাবা অমলকুমার দাসকে ফোন করে খবর দেন। ওই দিনই দুপুরে ছেলেকে আনতে রওনা হন অমলবাবু। সঙ্গে ছিলেন যাদবপুর থানার অফিসারেরাও। সোমবার ভোরে অনুভবকে নিয়ে তাঁরা বাড়ি পৌঁছেছেন।

Advertisement

এত দিন পর ছেলেকে পেয়ে অনুভবের মা শর্মিষ্ঠা দাস কিছুক্ষণের জন্য কার্যত কথা বলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। কাঁদতে থাকেন ছেলেকে জড়িয়ে ধরে। কাঁদছিলেন অনুভবের দিদিও। ওই ছাত্রের বাবা অমলবাবু বার বার ধন্যবাদ দিয়েছেন যাদবপুর থানার পুলিশ ও লালবাজারের গোয়েন্দাদের। যাঁরা অনুভবের জন্য টানা অনুসন্ধান চালিয়ে গিয়েছেন। অমলবাবু জানান, ছেলেকে আপনজনের মতো আগলে রেখেছিলেন দিঘার যে হোটেল মালিক ও তাঁর স্ত্রী, ওই দম্পতির কাছেও তিনি কৃতজ্ঞ।

গত ২৭ অক্টোবর স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হয় অনুভব। তার আগেই পরীক্ষার খাতার নম্বরে কারসাজি করে বাড়িতে দেখানোর পরে স্কুলে ধরা পড়ে গিয়েছিল ১৫ বছরের ওই কিশোর। প্রিন্স গোলাম মহম্মদ শাহ রোডের ওই স্কুল থেকে তার বাড়ির লোকজনকে ডেকে পাঠানো হয়। অনুভবের মা-বাবা অবশ্য স্কুলে দেখা করতে যাননি। তার পরে স্কুলে গিয়ে আর বাড়ি ফেরেনি অনুভব। পুলিশ জেনেছে, ২৭ অক্টোবর বিকেলে স্কুল থেকে বেরিয়ে ওই ছাত্র টালিগঞ্জ ট্রাম ডিপোর কাছে গ্রাহাম্‌স লেনে যায়। একটি ঝিলের কাছে সে সাইকেল ফেলে দেয়। ট্রাম ডিপোর মোড় থেকে বাস ধরে পৌঁছয় হাওড়া স্টেশনে। রাতটা স্টেশনে কাটিয়ে পরদিন ট্রেন ধরে সে দিঘা পৌঁছয়। দিঘার ওই হোটেলের মালিক ও তাঁর স্ত্রীকে অনুভব বলে, তাঁর মা-বাবা দু’জনেই ডেঙ্গিতে মারা গিয়েছেন, দিদি তাকে পছন্দ করে না, সেই জন্য সে কলকাতার বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছে। তবে নিজের ঠিক নামই সে জানিয়েছিল। অনুভবকে দেখে দিঘার ওই দম্পতির ভাল লেগে যায়। তাঁরা ওকে নিজেদের হোটেলে থাকতে দেন।

Advertisement

শনিবার আজাদগড়ের তিন জন দিঘার ওই হোটেলে ওঠার পরে দেখেন, একটি ছেলে তাঁদের দেখে মুখে আড়াল দিয়ে সরে গেল। এতেই তাঁদের সন্দেহ হয়। রবিবার সকালে ফের ওই ছেলেটিকে দেখে তাঁরা ধরে ফেলেন। মুখের কাপড় সরিয়ে দেখেন, সে-ই তাঁদের পরিচিত, এত দিন নিখোঁজ থাকা বনবন (অনুভবের ডাক নাম)। অনুভবের বাবাকে তাঁরা খবর দিলে অমলবাবু হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিও কল করে ছেলেকে দেখেন, তাঁর সঙ্গে কথা বলেন। অমলবাবুর কথায়, ‘‘ভিডিও কল-এ ছেলের সঙ্গে কথা বলেও যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না। আসলে এই ক’টা দিন ছেলের খোঁজে দিল্লি, নদিয়া, হুগলি কত জায়গায় গিয়ে খালি হাতে ফিরেছি। স্ত্রীকে বলি, ভাল করে দেখো, আমাদের ছেলে-ই তো!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন