বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে এ বার হাওড়া স্টেশনে সমস্ত আলো বদলে এলইডি আলো লাগানো হবে। পাশাপাশি, স্টেশনের মধ্যে বিমানবন্দরের মতো তৈরি হচ্ছে একটি বিলাসবহুল এগ্জিকিউটিভ লাউঞ্জ। হোটেলে না থাকতে চাইলে ওই লাউঞ্জে যাত্রীরা টাকার বিনিময়ে সময় কাটাতে পারবেন। এ ছাড়া স্টেশনের সামগ্রিক নিরাপত্তার জন্য বসানো হচ্ছে ৩০০টি আধুনিক ক্লোজ্ড সার্কিট ক্যামেরা। তৈরি হচ্ছে একটি আধুনিক কন্ট্রোল রুমও।
সম্প্রতি দেশের ৮০টি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনকে ঢেলে সাজাতে উদ্যোগী হয়েছে রেল। এর মধ্যে রয়েছে দেশের অন্যতম বড় স্টেশন হাওড়া। এই স্টেশনটি যাতে অনেকটা বিমানবন্দরের লাউঞ্জের মতো দেখতে লাগে সে জন্য মান্ধাতার আমলের আলো বদলে আধুনিক এলইডি আলো লাগাবার সিদ্ধান্ত হয়েছে। রেলের মতে, হাওড়া স্টেশনে আধুনিক এলইডি আলো লাগানো হলে এক দিকে বিদ্যুতের খরচ যেমন বাঁচবে, তেমনি স্টেশনের ভিতরে আলো আরও বাড়বে। আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে স্টেশন ও স্টেশন চত্বর।
হাওড়ার ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার আর বদ্রিনারায়ণ বলেন, ‘‘বর্তমানে স্টেশনে যে সব আলো লাগানো রয়েছে তাতে অনেক বিদ্যুৎ খরচ হয়। আলোও পর্যাপ্ত হয় না। তাই রেল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, গোটা স্টেশনে এলইডি লাগানো হবে। এটা এক মাত্র হাওড়া স্টেশনেই হবে। এই কাজ খুব শীঘ্রই শুরু হবে।’’
পূর্ব রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, এলইডি আলো লাগানো ছাড়াও হাওড়া স্টেশনের আধুনিকীকরণের জন্য আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেমন, এত দিন হাওড়া স্টেশনে ফার্স্ট ক্লাস ওয়েটিং রুম ছাড়া যাত্রীদের অপেক্ষা করার মত তেমন কোনও জায়গা ছিল না। এই অভাব পূরণ করতে হাওড়া স্টেশনের ফুড প্লাজার পাশে যে পুরনো টিকিট কাউন্টার ছিল সেখানে তৈরি করা হচ্ছে এগ্জিকিউটিভ লাউঞ্জ। প্রায় ২৫২ বর্গ মিটার এই লাউঞ্জে থাকছে বিলাসবহুল থাকার ব্যবস্থা। ভিতরে থাকবে আরামদায়ক সোফা, স্নানের সুন্দর ব্যবস্থা, ফোয়ারা। ২৪ ঘণ্টাই মিলবে ‘অন কল’ ট্যাক্সি। কোনও কারণে যাত্রীরা হোটেলে যেতে না পারলে থাকছে রাত কাটাবার সুন্দর ব্যবস্থা।
পূর্ব রেলের কর্তাদের বক্তব্য, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো চালু হয়ে গেলে হাওড়া স্টেশনের গুরুত্ব আরও কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। হাওড়া স্টেশনের ভিতরে মেট্রোর স্টেশন হওয়ায় বেড়ে যাবে যাত্রী-সংখ্যাও। তাই সে সব হিসাব করেই রেল চাইছে স্টেশনের ভিতরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে। ঠিক হয়েছে গোটা স্টেশন চত্বর উন্নতমানের ৩০০টি সিসি ক্যামেরা দিয়ে মুড়ে দেওয়া হবে। যাতে স্টেশনের প্রতিটি কোণ থেকে সর্বক্ষণ নজরদারি চালানো যায়। পূর্ব রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার এমন ক্যামেরা বসানো হচ্ছে যেগুলির সাহায্যে দূরের বস্তু বড় করে দেখা ছাড়াও প্রয়োজনে ডান দিক-বাঁ দিক ঘোরানো যাবে। এ ছাড়াও নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখভালের জন্য যে কন্ট্রোল রুম রয়েছে সেটিকে আরও উন্নত করার জন্য দেওয়াল জুড়ে বসছে প্লাজমা স্ক্রিন। এতে ৩০০টি ক্যামেরার ছবিই একসঙ্গে দেখা যাবে।
রেল কর্তাদের বক্তব্য, হাওড়া স্টেশনে রেলের নিজস্ব পার্কিং-এর জায়গা খুবই কম। তাই ঠিক হয়েছে বর্তমানে নিউ কমপ্লেক্সের উল্টো দিকে যে পার্কিং লট আছে তা আরও বাড়ানো হবে। পাশাপাশি স্টেশনের ভিতরেও একটি পার্কিং প্লাজা করার পরিকল্পনা হয়েছে।
ডিআরএম আর বদ্রিনারায়ণ বলেন, ‘‘ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর জন্য বর্তমানে ডিআরএম ভবন লাগোয়া পুরনো অফিসটি ভেঙে ফেলতে হবে। মেট্রো রেলকে বলেছি, ওই জায়গায় একটা পার্কিং প্লাজা করে দেওয়ার জন্য।’’