৪২২ কোটির বদলে ১ কোটি!

বন্দরের কাছে বকেয়া পাওনা নিয়ে কেন এমন হল, সে প্রশ্নে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় নিরুত্তর। এই ধরনের ‘রফা’ যে গ্রহণযোগ্য হবে না, তার ইঙ্গিত দিয়ে পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, বন্দরের কাছে পুরসভার বকেয়া পাওনার বিষয়টি রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে তোলা হবে।

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৮ ০৪:৫৭
Share:

পুরসভার পাওনা ৪২২ কোটি টাকা সম্পত্তি কর এক কোটি টাকায় রফা করে নেওয়ার উদ্যোগ আটকে গেল। অভিযোগ, কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে ওই বিপুল পরিমাণ টাকা প্রাপ্য থাকা সত্ত্বেও পুরবোর্ডের এক শীর্ষকর্তা এই ভাবে রফার সূত্র দিয়েছেন। তবে সবটাই হয়েছে মৌখিক আলোচনার ভিত্তিতে। বন্দর কর্তৃপক্ষ সেই মতো এক কোটি টাকার চেক পাঠিয়েও দিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত পুর অফিসারদের একাংশের তৎপরতায় বিষয়টি সামনে আসে এবং শোরগোল পড়ে।

Advertisement

বন্দরের কাছে বকেয়া পাওনা নিয়ে কেন এমন হল, সে প্রশ্নে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় নিরুত্তর। এই ধরনের ‘রফা’ যে গ্রহণযোগ্য হবে না, তার ইঙ্গিত দিয়ে পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, বন্দরের কাছে পুরসভার বকেয়া পাওনার বিষয়টি রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে তোলা হবে। আর বন্দরের ডেপুটি চেয়ারম্যান এস বালাজি অরুণকুমারের বক্তব্য, ‘‘বন্দর ও পুর প্রশাসনের বৈঠকের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই এক কোটি টাকা পাঠানো হয়।’’

পুরসভা সূত্রের খবর, কলকাতায় বন্দর কর্তৃপক্ষের অনেক জমি রয়েছে। যা অন্যদের লিজ দিয়ে কর্তৃপক্ষ প্রচুর টাকা আয় করেন। জমির লিজ ভাড়ার সঙ্গে পুরসভার প্রাপ্য সম্পত্তি করও আদায় করেছেন বন্দর কতৃর্পক্ষ। পুর কর বাবদ ওই টাকা যে বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে পাওনা হয়েছে, তা জানাই ছিল না পুর প্রশাসকদের। ২০১৩-১৪ সালে বন্দরের অডিট করতে গিয়ে কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি)– এর রেসিডেন্ট অডিট শাখার নজরে আসে সেই নথি। ওই বছরেই পুরসভার প্রাপ্য ছিল প্রায় ৫০ কোটি টাকা। সিএজি-র রিপোর্ট পেয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের থেকে সেই টাকা আদায় করতে চায় পুর প্রশাসন। বন্দর কর্তৃপক্ষ পুরসভাকে ১০ কোটি টাকা দেন।

Advertisement

সমস্যা দেখা দেয় ২০১৩ সালের আগের হিসেব নিয়ে। গত ৩১ জানুয়ারি প্রশাসনের সঙ্গে বন্দর কর্তৃপক্ষের এক বৈঠকে জানা যায়, ২০০১-০২ সাল থেকে ২০১২-১৩ সাল পর্যন্ত সম্পত্তি করের কোনও হিসেব দু’পক্ষের কাছেই নেই। এরপরেই পুরবোর্ডের এক কর্তা বলে দেন, এক কোটি টাকা দিয়ে বিষয়টি মিটিয়ে ফেলা যেতে পারে। তারপরই ওই পরিমাণ টাকার চেক নিয়ে পুরসভায় হাজির হন বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিরা।

গত ৭ ফেব্রুয়ারি পুরসভাকে পাঠানো বন্দরের একটি চিঠিতে (মেমো নম্বর –অ্যাডমিন/৬৩৩৯/১৮/এলএম/কেএমসি/ট্যাক্স) বলা হয়েছে, মহাকরণে পুরসভা এবং পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের সঙ্গে এক বৈঠকে রফার প্রস্তাবে সায় পেয়েই ২০০১-০২ সাল থেকে ২০১২-১৩ সালের বকেয়া এক কোটি টাকায় মেটাতে তারা রাজি (ওই চিঠির সঙ্গেই ২০১৩ সালের পরের বকেয়ার জন্য আরও ৫০ কোটি টাকার চেক জমা দেন বন্দর কর্তৃপক্ষ)। তার দিন কয়েক পরেই পুর প্রশাসনের কাছে এক কোটি টাকার চেক জমা দিতে যান বন্দর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বেঁকে বসেন পুরসভার আধিকারিকেরা। পুরসভার একাধিক অফিসার জানান, আয়কর দফতরের কাছ থেকে বন্দরের বার্ষিক রিপোর্ট সংগ্রহ করে এবং হিসেব কষে পুরসভা জানতে পারে, ওই ১২ বছরে পুরসভার বকেয়া প্রায় ৪২২ কোটি টাকা। আর বন্দরের বক্তব্য ছিল, ওই ১২ বছরের হিসেব মেটাতে এক কোটি টাকা দেওয়া হল। সে কারণেই বন্দরের চিঠি এবং এক কোটি টাকার চেক ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

পুরসভার একাধিক আধিকারিকের কথায়, এখনও চেষ্টা চালাচ্ছেন বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে সরকারের লিখিত নির্দেশ ছাড়া বকেয়া টাকা ছাড়তে নারাজ তাঁরা। আর পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী হাকিম বলেছেন, ‘‘বকেয়া সম্পত্তি কর নিয়ে জটিলতা আছে। আটকে নকশা অনুমোদনের কাজও। তাতে কলকাতায় বন্দরের জমিতে থাকা অনেক ব্যবসা, শিল্প সমস্যায় পড়েছে। রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিষয়টি তোলা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন