প্রতীকী ছবি।
উচ্চ মাধ্যমিক এবং মাদ্রাসার দ্বাদশ শ্রেণির ফাজিল মিলিয়ে সাড়ে ন’লক্ষ পরীক্ষার্থীকে ট্যাব কেনার টাকা দেওয়া হয়েছিল চলতি বছরে। প্রতি পরীক্ষার্থীর অ্যাকাউন্টে ১০,০০০ টাকা ঢুকেছিল। অর্থাৎ, ট্যাব বাবদ সরকারের খরচ হয়েছে ৯৫ কোটি টাকা! অভিযোগ, ওই ট্যাব দিয়ে কার্যত অনলাইন ক্লাসই হয়নি। এ দিকে, বাতিল হয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক। ফলে উপযুক্ত পরিকল্পনার অভাবে এত টাকা কার্যত জলে গেল বলে মনে করছেন শিক্ষকদের বড় অংশ।
পরীক্ষার প্রস্তুতি এবং অনলাইন ক্লাসের জন্য পড়ুয়াদের ট্যাব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চলতি বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে সেই বাবদ টাকা পড়ুয়া বা অভিভাবকদের অ্যাকাউন্টে ঢোকে।
শিক্ষকদের একাংশের মতে, এত টাকা খরচে পরিকল্পনার অভাব ছিল যথেষ্ট। এমন সময়ে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের ট্যাব দেওয়া হল যে তার কিছু দিন পরে, ১২ ফেব্রুয়ারি নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য স্কুল খুলে যায়। ফলে অনলাইন ক্লাসের জন্য আর ট্যাব ব্যবহার হয়নি। এক উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর বাবা গণেশচন্দ্র মণ্ডল বলেন, “ছেলের পরীক্ষার প্রস্তুতি বা অনলাইন ক্লাস, কোনও কাজেই ট্যাব লাগল না। অনলাইনে উচ্চ মাধ্যমিক হলে তবু কাজে আসত। তবে পরবর্তী উচ্চশিক্ষায় ওই ট্যাব লাগবে।” ‘কলেজিয়াম অব অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেস’-এর সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস বলেন, “ট্যাবের টাকা দিল সরকার। কিন্তু অনলাইন ক্লাস করার জন্য স্কুলগুলোকে বিজ্ঞপ্তি পাঠায়নি! কিছু স্কুল নিজের উদ্যোগে অনলাইন ক্লাস নিয়েছে। সরকারি বিজ্ঞপ্তি না থাকায় বহু স্কুল সেই ক্লাস শুরুই করেনি।” অভিভাবকদের বক্তব্য, ট্যাবের মাধ্যমে অনলাইনে ক্লাস টেস্টও নিতে পারত স্কুল। তা-ও প্রায় কেউ করেনি।
‘শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চ’-এর রাজ্য সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারীর মতে, “পড়ুয়াদের হাতে ট্যাব আসার পরে কিছু স্কুল হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ বানিয়ে পড়াশোনা শুরু করে। কিন্তু অনলাইনে পড়াশোনা খুবই কম হয়েছে। খোঁজ নিয়ে দেখেছি, ট্যাব যতটা না পড়াশোনায় কাজে এসেছে, তার থেকে বেশি মোবাইল আসক্তি বেড়েছে।”
‘পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসুর মতে, “উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা ট্যাবের মাধ্যমে অনলাইনে পরীক্ষা দিতে পারত। যে সব প্রত্যন্ত এলাকায় ট্যাব থাকলেও নেটওয়ার্ক নেই, সেখানে না হয় অফলাইনে পরীক্ষা নেওয়া যেত।”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, প্রতি বছরই উচ্চ মাধ্যমিক ও মাদ্রাসার দ্বাদশের পরীক্ষার্থীদের ট্যাব দেওয়া হবে। তাই আগামী বছরের পরীক্ষার্থীদের আর্জি, চলতি বছরেও স্কুল কবে খুলবে তার নিশ্চয়তা নেই। ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে একাদশের পড়ুয়াদের দ্বাদশে ভর্তি হতে হবে। এর পর পরই যদি তাদের ট্যাবের টাকা দিয়ে দেওয়া হয়, তা হলে অনলাইনে পরীক্ষার প্রস্তুতি ভাল হবে। এমনকি, বন্ধ থাকলেও স্কুল অনলাইন ক্লাস নিলে, ওই ট্যাব কাজে লাগবে।