‘যুদ্ধ’ থেমেছে, তবে থমথমে মনোহরপুকুর

শান্তি-শৃঙ্খলা রয়েছে, কিন্তু সে যেন যুদ্ধোত্তর স্তব্ধতা। এলাকা জুড়ে সজাগ প্রহরীদের আনাগোনা। একটু বেচাল দেখলেই তাঁরা হাঁকডাক জুড়ে দিচ্ছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৬ ০১:০৭
Share:

শান্তি-শৃঙ্খলা রয়েছে, কিন্তু সে যেন যুদ্ধোত্তর স্তব্ধতা। এলাকা জুড়ে সজাগ প্রহরীদের আনাগোনা। একটু বেচাল দেখলেই তাঁরা হাঁকডাক জুড়ে দিচ্ছেন।

Advertisement

না! এ মধ্য এশিয়া বা কাশ্মীরের যুদ্ধসন্ত্রস্ত কোনও এলাকা নয়। তবে এলাকাবাসীর আতঙ্কটা তার চেয়ে কোনও অংশে কম নয়। আসলে বৃহস্পতিবার রাত থেকে এলাকার যে ছবি বাসিন্দারা দেখেছেন, তা দেখেতে তাঁরা অভ্যস্ত নন। এর জেরে তাঁরা আতঙ্কিত বলেই জানাচ্ছেন স্থানীয়েরা।

ঘটনাস্থল দক্ষিণ কলকাতার অন্যতম অভিজাত পাড়া, মনোহরপুকুর। শুক্রবার সেখানেই বিসর্জনকে কেন্দ্র করে চলেছিল মাতালদের তাণ্ডব। প্রকাশ্য রাস্তায় চলেছিল কাচের বোতল নিয়ে মারামারি। এমনকী এলাকায় কর্তব্যরত পুলিশকর্মীকেও মারধর করা হয়। রেহাই পায়নি রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা অ্যাম্বুল্যান্সও। বন্ধ হয়ে গিয়েছিল যান চলাচল। শনিবার সকালে অবশ্য রাস্তা জুড়ে পড়ে থাকা ভাঙা কাচের টুকরোর চিহ্ন মাত্র নেই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ২৪ ঘণ্টার জন্য ১৫ জন পুলিশের দল এলাকা পাহারা দিচ্ছে। লালবাজারের এক কর্তা জানালেন, প্রায় এক সপ্তাহ থাকবে এই পুলিশি প্রহরা। এলাকায় অশান্তি ও গোলমাল করায় গ্রেফতার হয়েছেন সমীর হালদার, অজয় নস্কর, শুভ হালদার ও সুকান্ত মল্লিক নামে চার বাসিন্দা।

Advertisement

পুলিশ জানায়, ঘটনার সূত্রপাত বৃহস্পতিবার। স্থানীয় একটি পুজোর ভাসানকে কেন্দ্র করে রাতে বচসা শুরু হয় ১৩৭ নম্বর মতিলাল নেহরু বস্তি ও মনোহর পুকুর বাজার বস্তির বাসিন্দাদের মধ্যে। ১৩৭ নম্বর বস্তির বাসিন্দা পূর্ণিমা হালদারের অভিযোগ, বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর ছেলে বান্টি ওই বিসর্জন দেখতে গেলে বাজার বস্তির কিছু ছেলে তাকে গালাগাল করে। শুরু হয় বচসা। বান্টিকে মারা হয় বলে অভিযোগ। পূর্ণিমাদেবীর দাবি, বান্টিকে বাঁচাতে গেলে তাঁর দাদা দীপকেও মারধর করা হয়।

দুই বস্তির বাসিন্দাদের একাংশের কথায়, বিসর্জনের সময়ে দু’পক্ষেরই কিছু যুবক মত্ত অবস্থায় ছিলেন। কোনও বিষয় নিয়ে তাঁদের কথা কাটাকাটি শুরু হলে তা থেকে হাতাহাতি বাধে। বৃহস্পতিবার রাতে সাময়িক ভাবে বচসা থেমে গেলেও শুক্রবার সকালে ফের উত্তপ্ত হতে থাকে পরিস্থিতি। পুলিশ জানায়, সকাল ১১টা নাগাদ লেক থানার মনোহর পুকুর রোডের দুই বস্তির বাসিন্দাদের একাংশ জড়ো হন মতিলাল নেহরু রোডে। এক পক্ষ অন্য পক্ষকে লক্ষ্য করে ইট ও মদের বোতল ছুড়তে থাকে। ভাঙা কাচের বোতলের টুকরোয় ভরে যায় রাস্তা। বাসিন্দারা কার্যত ভয়ে ঘরের দরজা-জানলা বন্ধ করে দেন।

শনিবার বাসিন্দারা জানান, পুলিশের উপস্থিতি তাঁদের সাহস জোগাচ্ছে। সুনন্দা চৌধুরী নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘গতকালের ঘটনা ভাবলেই শিউরে উঠছি। জানলা-দরজা যে এখনও ঠিক আছে তা-ই রক্ষে। পুলিশ দেখে সুরক্ষিত বোধ করছি।’’

মাস খানেক আগে এক যুবকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পণ্ডিতিয়া রোডের একটি বহুতলে ঢুকে গাড়ি ভাঙচুর করে তাণ্ডব চালায় এই এলাকার কিছু বাসিন্দা। তার পরে আবার শুক্রবারের এই ঘটনা। বারবার নাম উঠে আসছে এই অভিজাত এলাকার। কাউন্সিলর দেবাশিস কুমার অবশ্য এলাকার আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশাসনের উপর আস্থা রাখছেন। তিনি বলেন, ‘‘ছোট ছোট ঘটনা নিয়ে বারবার ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ছেন এলাকার কিছু বাসিন্দারা। আমি ওঁদের সঙ্গে বসে কথা বলব। প্রশাসন তার মতো কাজ করবে। আমি এলাকার জনপ্রতিনিধি, সে দায়িত্ব পালন করছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন