স্কুল চত্বরেও মশার চাষ, ভয়ে পড়ুয়ারা

কলকাতা পুরসভার ৯৯ এবং ১০০ নম্বর ওয়ার্ড জ্বরে কাঁপছে। এলাকার বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই কেউ না কেউ জ্বরে আক্রান্ত।

Advertisement

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৫৭
Share:

জঞ্জাল: এমনই অবস্থা শহরের বিভিন্ন স্কুলে। (বাঁ দিকে)বাঘা যতীন বয়েজ স্কুল এবং বাঘা যতীন গার্লস স্কুল(ডান দিকে)

জানুয়ারি থেকেই সর্বশক্তি দিয়ে শুরু হয়েছে মশা মারার অভিযান— বারবারই এমন দাবি করেছেন পুরকর্তারা। যদিও শহরের একাধিক স্কুল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, পুরসভাকে বারবার অনুরোধ জানানো সত্ত্বেও মশা-নিধন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে!

Advertisement

কলকাতা পুরসভার ৯৯ এবং ১০০ নম্বর ওয়ার্ড জ্বরে কাঁপছে। এলাকার বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই কেউ না কেউ জ্বরে আক্রান্ত। ওই অঞ্চলের বাঘা যতীন বালিকা বিদ্যালয় চত্বরে একটি জলাশয় রয়েছে। তার আশপাশে জমে রয়েছে ডাবের খোলা, প্লাস্টিকের ব্যাগ, ভাঙা থার্মোকল। জলাশয়ের একাংশ কার্যত আবর্জনার স্তূপে পরিণত হয়েছে। সেই জলে মশা বাড়ছে। স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, পুরসভাকে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েক বার চিঠি দিয়ে মশা নিধনের কাজ শুরু করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। অবশেষে গত সপ্তাহে সেই কাজ
শুরু হয়েছে। গত রবিবার বিভিন্ন ক্লাসরুমে মশা মারার ধোঁয়া দেওয়া হয়। কিন্তু জলাশয় এখনও পরিষ্কার হয়নি। শুক্রবার স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ৯৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন, জলাশয় পরিষ্কার করতে হলে আলাদা বিভাগে আবেদন জানাতে হবে। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা জয়শ্রী বসু এ দিন বলেন, ‘‘কয়েক বার আবেদন জানানোর পরে মশা মারার কাজ শুরু হয়েছে। এই এলাকার মানুষ সচেতন নন। নিজেদের সন্তানেরা যে স্কুলে পড়ে, সেখানে কেন নোংরা ফেলেন, তা একটু ভেবে দেখা দরকার।’’

জয়শ্রীদেবী জানিয়েছেন, স্কুল চত্বর নিয়মিত পরিষ্কার রাখা, ব্লিচিং ছড়ানোর কাজ তাঁরা নিজেরাই শুরু করেছেন। সহকারী প্রধান শিক্ষক সুকান্ত ঘোষ বলেন, ‘‘স্কুল চত্বর পরিষ্কার রাখার কাজ যতটা পারি নিজেরাই করি। কোনও বিশেষ দরকার হলে কাউন্সিলরকে চিঠি লিখে জানানো হয়।’’

Advertisement

স্কুলের শ’খানেক আবাসিক ছাত্রীকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কসবার ‘মডার্ন ইনস্টিটিউশন ফর গার্লস’-এর শিক্ষকেরা। সরকারি ওই আবাসিক স্কুলের পিছনেই একটি জলাশয়। তাতে আবর্জনার স্তূপ। মশার উৎপাতে সেখানে টেকা দায়। স্কুলের দাবি, পুরসভাকে মশা মারতে বলা হয়েছে বহু বার। কিন্তু লাভ হয়নি। প্রধান শিক্ষিকা রাজশ্রী সাহার কথায়, ‘‘জলাশয়টি পরিষ্কার করার জন্য পুরসভার কাছে আবেদন জানিয়ে কটাক্ষ শুনতে হয়েছে। বলা হয়েছে, ছাত্রীদের ওখানে থাকতে কে বলেছে! মশার দাপট, দুর্গন্ধ, আবর্জনা— এ সব নিয়েই থাকতে হচ্ছে মেয়েদের।’’ একটি বেসরকারি সংস্থা অবশ্য সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়ার মতো কোনও রোগে আবাসিক ছাত্রীদের কেউ আক্রান্ত হলে চিকিৎসার খরচ বহন করবে ওই সংস্থা।

সাফাইয়ের খরচ বহন করা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হাতিবাগান এলাকার টাউন স্কুলের প্রধান শিক্ষক অপরাজেয় আচার্য। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘ডেঙ্গি রুখতে যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা উচিত, তার টাকা কোথায় পাব?’’ এ দিন ওই স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, যত্রতত্র নোংরা ছড়িয়ে রয়েছে। অপরাজেয়বাবু জানান, তাঁরা সাধ্যমতো চেষ্টা চালাচ্ছেন। বেথুন স্কুল কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানান, ছাত্রীদের ফুলপ্যান্ট পরে স্কুলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, স্কুল চত্বর যাতে কেউ নোংরা না করে, তার দিকে নজর রাখতে বলা হয়েছে ছাত্রীদের। সহকারী প্রধান শিক্ষিকা শাশ্বতী অধিকারীর কথায়, ‘‘পূর্ত দফতর সাফাইয়ের কাজ করছে। কিন্তু মেয়েদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে সচেতন করতেই আমরা ওদের বলেছি, ক্যাম্পাস পরিষ্কার থাকলে বিশেষ পুরষ্কার মিলবে।’’

পুর কর্তাদের অবশ্য অভিযোগ, অধিকাংশ স্কুলই পুরসভায় নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে আবেদন জানায় না। যে হেতু স্কুল চত্বরে সাফাইয়ের দায়িত্ব স্কুল কর্তৃপক্ষের, তাই নজরদারিও তাঁদেরই চালানোর কথা। নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে পুরসভায় আবেদন জানালে মশা নিধনের কাজ হয় বলেই দাবি পুর কর্তাদের। এ প্রসঙ্গে কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘বিভিন্ন ওয়ার্ডে বাড়ি বাড়ি ঘুরে যেমন পুরকর্মীরা নজরদারি চালান, স্কুলগুলিতেও তা চালানো হয়। পুরসভার রুটিন ম্যাপ মেনে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে পরিদর্শনও হয়। সেই পরিদর্শনের জন্য কোনও আবেদন করতে হয় না। স্কুল চত্বর পরিষ্কার রাখার কাজ সেই নির্দিষ্ট স্কুলের। পরিদর্শন করে পুরসভা সাফাইকাজের ভুল ধরিয়ে দেয়। কী ভাবে সাফাই করা উচিত, আমরা সেই পরামর্শ দিতে পারি মাত্র।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন