কীটনাশকে সুফল মিলছে না, বাড়ছে মশার উপদ্রব

কীটনাশকেও মরছে না মশা। তাই পুরসভার নিধন প্রক্রিয়া বজায় থাকলেও তা কার্যকর হচ্ছে না বলে বিশেষজ্ঞদের মত। ফলে মশার উপদ্রব থেকে রেহাই মিলছে না বাসিন্দাদের। সন্তোষপুর, সার্ভে পার্ক, হাইল্যান্ড পার্ক, মুকুন্দপুর, বাঘাযতীন, গড়িয়া, বাঁশদ্রোণির খাল সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, মশার উপদ্রবে টেকা দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Advertisement

দেবাশিস দাস

শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৪ ০০:০০
Share:

কীটনাশকেও মরছে না মশা। তাই পুরসভার নিধন প্রক্রিয়া বজায় থাকলেও তা কার্যকর হচ্ছে না বলে বিশেষজ্ঞদের মত। ফলে মশার উপদ্রব থেকে রেহাই মিলছে না বাসিন্দাদের। সন্তোষপুর, সার্ভে পার্ক, হাইল্যান্ড পার্ক, মুকুন্দপুর, বাঘাযতীন, গড়িয়া, বাঁশদ্রোণির খাল সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, মশার উপদ্রবে টেকা দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Advertisement

যদিও বাসিন্দাদের এই অভিযোগ মানতে নারাজ কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ। তিনি বলেন, “কলকাতায় মশার উপদ্রব ২০১১-এর পরে অনেক কমে গিয়েছে। মশা নিয়ন্ত্রণে পুরসভার কর্মীরাও সারা বছর কাজ করেন। এমনকী খালে নৌকো চালিয়ে মশা মারার কীটনাশক স্প্রে করেন পুরকর্মীরা। তাই এই ধরনের অভিযোগ ঠিক নয়। তবুও খোঁজ নিয়ে দেখব।”

তা হলে গরমিলটা কোথায়? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মশা নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া সাধারণত দুই রকমের হয়। একটি পূর্ণাঙ্গ মশা নিয়ে, অন্যটি লার্ভার বিরুদ্ধে অভিযান। প্রথম ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকমের কীটনাশক ছড়ানো হয়। ‘রেসিডিউয়াল ইনসেক্টিসাইড’ প্রক্রিয়ায় দেওয়াল, বিভিন্ন জিনিসের উপরে কীটনাশক ছড়ানো হয়। যা অন্তত চার মাসের মতো কাজ করে। অনেক সময় শূন্যেও কীটনাশক ছড়ানো হয়। এ ছাড়াও রয়েছে গাড়িতে করে বিভিন্ন জায়গায় ধোঁওয়া ছড়ানোর প্রক্রিয়া। বিশেষজ্ঞরা আরও জানান যে, লার্ভার বিরুদ্ধে সাধারণত জমা জলে কীটনাশক বা এক রকমের তেল ছড়ানো হয় বা গাপি মাছ চাষ করে লার্ভা, ডিম নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

Advertisement

পরজীবী বিশেষজ্ঞ এবং চিকিৎসক অমিতাভ নন্দী বলেন, “দীর্ঘ দিন একই রকমের কীটনাশক ছড়ানো হলে মশার মতো পতঙ্গরা তার সঙ্গে সমঝোতা করে টিকে থাকতে পারে। তাই নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া চালু থাকার পরেও কাজ না হওয়ার অভিযোগ উঠলে এই দিকটাও খতিয়ে দেখা জরুরি।” স্কুল অফ ট্রপিকাল মেডিসিনের প্রাক্তন অধিকর্তা অমিয়কুমার হাটিও বলেন, “যে ধরনের তেল বা কীটনাশক এখন ছড়ানো হয় তা অধিকাংশ সময়ে কাজ করতে চায় না। এর বড় কারণ হচ্ছে দীর্ঘ দিন ধরে ছড়ানোর ফলে মশারা ওই ধরনের কীটনাশকের সঙ্গে লড়তে শিখে যায়।”

তবে দুই বিশেষজ্ঞই জানান, খালে জন্মানো মশা থেকে ডেঙ্গি বা ম্যলেরিয়া হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এই ধরনের মশার কামড় থেকে ফাইলেরিয়ার মতো রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই ধরনের মশার দংশন খুবই অস্বস্তিকর।

দক্ষিণ শহরতলির বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা জানান মশার উপদ্রব এমনই যে দিনেও ঘরের মধ্যে মশারি টানিয়ে রাখতে হয়। হাইল্যান্ডপার্ক এলাকার বাসিন্দা রমেশ দাশ বলেন, “দোকানে দাঁড়িয়ে চা খাওয়ায় সময়েও মশার হাত থেকে নিস্তার মেলে না।”

কলকাতা পুরসভার মশা নিয়ন্ত্রণ বিভাগ সূত্রে খবর, ২০১১-এর মার্চ থেকে শহরের বিভিন্ন খালে মশা মারতে নৌকো চালিয়ে কীটনাশক ছড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এখনও সেই প্রক্রিয়াতে বিভিন্ন খালে কাজ চলছে। কলকাতার খালগুলিতে এই কাজে পুরসভার ২০ টি নৌকো চলে। দু’জন কর্মী দাঁড় টানা নৌকোয় বসে পাড় বরাবর কীটনাশক ছড়ান। এতে খালের জলও নড়ে। ফলে মশার লার্ভাও নষ্ট হয়।

এক সময়ে ভাড়া নৌকো চালাতো পুরসভা। এখন নৌকো কিনে নিয়েছে। এই প্রক্রিয়া শুরুর পরে মশা নিয়ন্ত্রণে পুরসভার একটা বড় সাফল্য এসেছে বলে পুর-স্বাস্থ্য বিভাগের একাধিক কর্তা দাবি করেন। যদিও এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি কলকাতা পুরসভার মশা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক এবং পুরসভার মুখ্য পতঙ্গবিদ দেবাশিস বিশ্বাস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন